থুতু

অলংকরণ: মাসুক হেলাল

২০০৫ সালের কোন এক গ্রীষ্মের রাতে ফুফুর বাড়ি থেকে টিভি দেখে ফেরার সময় ফুফু জোর করে রুবেল ভাইকে সঙ্গে দিয়েছিলেন, যাতে পথে কোনো সমস্যা না হয়। পাঁচ মিনিটের পথ আমার কাছে পাঁচ ঘণ্টা মনে হচ্ছিল। পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী আমি। আমাদের বাড়ি এসেই জোরে আম্মাকে ডেকে বলেছিলাম, ‘আম্মা, দেখো তো রুবেল ভাই আমার গাল ও গলায় থুতু লাগায়ে দিছে।’ আম্মা দৌড়ে এসে রুবেল ভাইয়ের দিকে ফ্যালফ্যাল করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর আমাকে টেনে কল পাড়ে নিয়ে পানি দিয়ে গলা ও গাল ধুয়ে দিচ্ছিলেন আর বলেছিলেন, ‘রুবেল তো ফাজলামি করে সব সময়। তুই কাউরে কইস না এই কথা।’

‘দূর পরবাস’–এ জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই–মেইল: [email protected]

আজ ২০২৫ সালের কোনো এক গ্রীষ্মের রাত। ফুফুর বাড়িতে ফুফুর সঙ্গে দেখা করতে এলাম। রুবেল ভাইয়ের চার মেয়ের মধ্যে বড়টা, যার নাম রুনি। সে হঠাৎ দৌড়ে এসে ভাবিকে বলল, ‘আম্মু, দেখো তো পাশের বাড়ির আসাদ ভাই আমার গাল ও গলায় থুতু লাগিয়ে দিয়েছেন।’ আড় চোখে রুবেল ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে দেখলাম, উনি ফ্যালফ্যাল করে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।

আরও পড়ুন

আম্মা ও রুবেল ভাইয়ের এই একই রকমের ফ্যালফ্যাল দৃষ্টির মধ্যে ছিল ২০ বছরের সম্পর্ক। কিন্তু ভাবিকে আমি রুনিকে টেনে নিয়ে যেতে দিইনি। উল্টো আসাদকে সবার সামনে টেনে এনে তার গালে একটা চড় মারার পর একটু শান্ত হয়েছিলাম। এই একটি চড় দেওয়ার সাহস করতে ২০ বছর লেগে গেল কেন, তা আমি জানি না। শুধু জানি, রুনির আর চড় দিতে ২০ বছর অপেক্ষা করতে হবে না। রুনির বাগানবিলাস এঁকেবেঁকে ডাল ছড়াবে তার মনের বারান্দাজুড়ে। তা দেখে কেউ আর ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে তাকাবে না, তাকাবে অবাক দৃষ্টিতে।

*লেখক: নুসরাত আহমেদ আশা, সফটওয়্যার কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স ইঞ্জিনিয়ার, কার্ল জেইস ডিজিটাল ইনোভেশন জিএমবিএইচ, মিউনিখ, জার্মানি

আরও পড়ুন