সাদা শাড়ি

অলংকরণ: এস এম রাকিবুর রহমান

ছবি: হৃদয় দান

বোনের বান্ধবীর কল। ফোনটা রিসিভ করতে একটু দেরি হচ্ছে। কারণ, ১০ মিনিট হবে তাদের দুজনকে রেলস্টেশনে নামিয়ে দিয়ে এলাম। এখন নেহা কেন কল করবে?

ছোট বোন মৌরির সঙ্গে তার বান্ধবী নেহা এসেছে আমাদের বাড়িতে। পাঁচ দিন নেহা আমাদের বাড়িতে ছিল। গেল পাঁচ দিনে নেহা আমার মাথার বারোটা বাজিয়েছে। আজ রোববার ওদের এগিয়ে দিতে আমি রেলস্টেশনে এসেছি। ওরা চট্টগ্রাম যাবে।

আমি ফোন হাতে নিলাম। যেই রিসিভ করব, সেই সময় কল কেটে গেল। আবার ফোন আসে। রিসিভ করতেই সে বলে উঠল, কী ব্যাপার, ফোন রিসিভ করছেন না কেন?

আমি বললাম, ‘কেন কল করেছ?’

নেহা বলল, ‘তোমাকে ছেড়ে যেতে ইচ্ছা হচ্ছে না।’

আমি অবাক। নেহা আমাকে হঠাৎ তুমি করে বলছে কেন?

‘আচ্ছা, মৌরি কোথায়?’

‘কোথায় আবার, আমার সাথে?’

‘একটু দেওয়া যাবে?’

‘দেওয়া যাবে, একটু পরে। কারণ সে এখন বুকস্টলে বই দেখছে।’

‘আচ্ছা, তাহলে আমি রাখি।’

‘না।’

‘না মানে, আমার একটু কাজ আছে...।’

‘আপনার বাড়িতে এসেছি। কয়েক দিন থেকেছি। আপনি আমাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখেছেন।’

নেহার কথা শুনে আমি হকচকিয়ে উঠি। মেয়েটি কী বলছে। মেয়েটি কী বলছে। যদিও আমি নেহাকে দেখেছি, এটা সত্য। নেহাকে না দেখে পারা যায় না। কারণ ও এত সুন্দর যে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে মন চায়।

‘কী হলো, কথা বলেন?’

‘না মানে...।’

‘এত মানে মানে করতে হবে না।’

‘তুমি কী বলছ?’

‘আমাকে কি আপনার ভালো লাগে? ভালো লাগলে বলে ফেলুন। লুকিয়ে দেখতে হবে না। সরাসরি দেখবেন।’

‘কী বলছ তুমি?’

‘আমি তো ঠিকই বলছি। তুমি যদি আমাকে লুকিয়ে দেখতে পারো, তাহলে সরাসরি দেখলে দোষ কি? কে জানে, কখন কী দেখেছ!’

আমি ফোন কেটে দিই। হায় হায়, এই মেয়ে তো দেখছি মারাত্মক ডেঞ্জার। ও মাই গড। একবার আপনি বলে, আরেকবার তুমি। আবার বলে সরাসরি দেখাবে।

ভৈরব রেলস্টেশন থেকে নেহা ও মৌরি বাড়িতে চলে এসেছে। ওরা চট্টগ্রাম যাইনি। সন্ধ্যা ছয়টা পেরিয়ে। আমি বের হব। নেহা বলে ওঠে, ‘কোথাও যাওয়া যাবে না। আপনার সঙ্গে আমার কথা আছে।’

আমি অবাক! মৌরির সামনে নেহা এসব বলে। যদিও আস্তে করে স্লো মোশনে নেহার কথাগুলো শুনতে বেশ ভালোই লাগে। আমি কোথাও গেলাম না। আমিও নেহার সঙ্গে কথা বলার জন্য অপেক্ষা করছি।

রাতের খাওয়া শেষ করে সবাই ঘুমাতে গেল। আমিও ঘুমাতে গেলাম। রাত ঠিক ১২টার সময় নেহার মেসেজ। ‘একটু বাহিরে আসবে?’

আমি কোনো জবাব দিলাম না। যাতে সে বোঝে আমি ঘুমিয়ে পড়েছি। তারপর মোবাইলে নেহার কল আসে। নেহা আমার বাড়ির মেহমান। সে কী চায়? আমি জানি না। আমি রিসিভ করতে সে বলে, ‘আমি বাহিরে দাঁড়িয়ে আছি।’

‘দূর পরবাস’-এ জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]

আমি সাথে সাথে বেরিয়ে এলাম। চাঁদনী রাত। উঠানের এক পাশে কে দাঁড়িয়ে আছে। তাকে আমি চিনতে পারছি না। সাদা শাড়ি পরনে। সে নিশ্চয়ই নেহা নয়। আমি বললাম কে? নেহা তার দেহ না ঘুরিয়ে, মুখটা শুধু একটু ঘুরায়। এবং বলে,

‘আমি, আমি নেহা।’

সত্যি সে নেহা। কিন্তু আমি ভেবেছিলাম সত্যি কি আকাশ থেকে কোনো এক পরি জমিনে নেমে এল। নেহা মায়ের সাদা শাড়ি পরেছে। লাল ব্লাউজটা বোধ হয় তার কাছে আগে থেকে ছিল। একে তো অপরূপ সুন্দরী। তার ওপর সে পরেছে সাদা শাড়ি। যা না লাগছে। আমি অবাক চোখে তাকিয়ে আছি নেহার দিকে। নেহা বলে,

‘শুধু কি তাকিয়ে থাকবে, কাছে আসবে না।’

আমি সরল মনে নেহাকে বলি, ‘নেহা, তুমি কি আমাকে পছন্দ করো?’

‘না’

‘তাহলে এত রাতে একা আমার সাথে তুমি, বিষয়টা কেমন হলো না?’

‘তুমি আমাকে পছন্দ করো?’

‘হ্যাঁ’।

‘তোমার হ্যাঁ আমার না এই দুই মিলে দেখবে, একদিন হ্যাঁ জয়যুক্ত হবে।’

এই বলে নেহা আমাকে জড়িয়ে ধরে। নেহার হাতে শক্তি অনেক। আমিও তাকে...।

*লেখক: এম হৃদয়, পিঞ্জুরু, সিঙ্গাপুর

আরও পড়ুন