কবিতাগুচ্ছ

অলংকরণ: মাসুক হেলাল

১.
অর্ধ লুক্কায়িত যাকিছু সযত্নে রেখে দিয়েছি
তার মধ্যে নিভৃতে দু-একটা মৃত্যুর রং খেলা করে
মনে হয় এক বধির তীরন্দাজকে আজীবন খুঁজে চলেছি–
যার তীক্ষ্ণ নিশানায়
সর্বনাম থেকে সমস্ত চন্দ্রবিন্দু আহত হবে,
অথচ এমন কাউকেই আমি পাইনি পথে;
তোমায় ভুলতে চাওয়ার অন্তর্দহনকেই স্মৃতি ব’লে জেনেছি
মাঝেমাঝে ভাবি, স্মৃতি অনুবাদ করার জন্য একজন দক্ষ অনুবাদককে খুঁজব,
অথচ, যে মাধ্যমে স্মৃতি অনূদিত হবে–
সে ভাষা আমাকে কেউ কখনো শেখায়নি,
তুমি ধীরে ধীরে ভীষণ অসম্ভব হয়ে উঠছ
তোমাকে শেষ দেখার দারিদ্র্যই হলো
দেশভাগ

লেখক

২.
‘ন জায়তে ম্রিয়তে বা কদাচিন্
নায়ং ভূত্বা ভবিতা বা ন ভূয়ঃ।’
ছন্দ একটা নিয়ম
অনুভব তো নয়,
ক্রমে ম্লান হয়ে আসা অভ্যাস।
স্থিরচিত্রের মতো ব’সে থাকাই কি প্রস্থান?
সুখস্মৃতির দাপটে ভেসে যায় আলোয় ঘেরা দিন
অথচ একমাত্র রাত্রিই জানে-
আলোকময় দিনের কাছে কতটা নিঃস্ব আমি।
লিখতে লিখতে বিপন্নতার চিরাগ নেভাতে না পেরে-
স্বার্থপরের মতো আমি- সর্বস্ব পৃথিবীর কথা বলি
সেই পৃথিবীজোড়া কোথাও অপ্রাপ্তির ফুল ফোটেনি,
তবু, তবু তো জানি এখান থেকে ফিরে আসতে হবে।
কেন কোনো মৃত্যুকেই কবিতা দিয়ে ছোঁয়া যায় না, রাজাধিরাজ?

‘দূর পরবাস’-এ জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]

৩.
নদীর গতিপথে শায়িত যুবতীর চোখ নিঃসৃত জল
মিশে যায় কোনো গৃহস্থের ঘরের চৌকাঠে
এক একটা স্পর্শ জোয়ার আনে শরীরে
ভীরু স্বভাবের দুটি শরীর
সমস্ত না-হ’তে-পারা গানের সুরের উষ্ণ আলোয়
মঙ্গলঘটে লাথি মেরে
ডুব দেয়
বিষণ্ন যৌনতায়
যুবতীর স্পর্শহীন যুগপৎ দুই স্তনে লিখে রাখা হয়
সকল না-হ’তে-পারা গানের সুর,
ধিক্কারধ্বনিতে

৪.
ভুলে যেতে গিয়ে বুঝেছি
অর্ধ-দশক পেরিয়ে আসা মেদুর হাওয়া
ক্রমে ক্ষুরধার হয়ে ওঠে,
বুকের ঠিক যে পাশটায় লালন করেছি সেইসব হাওয়াদের-
একেকটা দিনে ওরা রক্ত মাংস ছিঁড়ে খায়
নিজ হৃদয়ের শবদেহ আঁকতে থাকি
সকলই দানব হয়ে ওঠে
কারোর ছায়াঘেরা চোখের অনন্ত বিরক্তি হয়ে উঠি,
‘হয়ে ওঠা’ পথিক হ’তে গিয়ে জেনেছি-
ভুলে যাওয়া মানে বিকেলের আলো ম’রে যাওয়া রোদ

উৎসর্গ—শহরের এক নির্জন এসরাজ বাদককে

আরও পড়ুন