মুসাফির-এ-মন অথবা কোনো না-গাইতে-পারা গান
এ রকম আকাশ থমথমে দিনে এমন সব ভাবনার কাছে হাঁটু মুড়ে বসি, প্রাত্যহিক জীবনে যাদের যাতায়াত হাতে গুনে বলা যায়। এমন সব দিনে গুরুগম্ভীর তত্ত্বকথার ধারেকাছেও ঘেঁষতে ইচ্ছা করে না। ভাবনার ভারসাম্য না থাকলে তার অর্থ থাকে না; বাটখারায় গরমিল ধরা পড়েছে। তাই আজ দে ছুট!
যাদবপুরে পড়তে এসে কত রকম মানুষের দেখা পেলাম। কেউ বন্ধু হলো, কেউ হলো না। এসব বৃষ্টিদিন আমায় মনে করায়, আমার বন্ধুর ছায়াঘেরা চোখ। সেই চোখ দিয়ে আমি ওর শহরের যেকোনো ভাঙাচোরা গলির আলো ছুঁয়ে নিতে পারি অনায়াসে। মফস্সল দেখি আমার বন্ধুর চোখে। ওর শহরের গপ্পো বলতে থাকে ও, বলতে বলতে ওর উজ্জ্বল চোখ দুটো ঠেলে বেরিয়ে আসে বিষণ্নতা। ও বলে চলে ওর সমস্ত প্রথম অপ্রাপ্তির কথা। আমি বিভোর হয়ে থাকি, হারিয়ে যাই ওর লোক গাদাগাদি করা ছোট্ট শহরের আঁকাবাঁকা রাস্তায়। এক অলীক জীবনের ভেতর ঢুকে পড়ি, দিন বয়ে যায় আস্তে। রোজ দুপুরবেলা দীঘিনালার ধারে গিয়ে বসি, মনে হয় যেন কত যুগ অপেক্ষায় বসিয়ে রেখে কেউ চিরতরে নিখোঁজ হয়ে গেছে।
আমার একটা জীবন দুই ভাগে ভেঙে যায়, অথচ দুটি জীবন অখণ্ড। একটা জীবন বেমালুম ঢুকে পড়েছে আরেকটার ভেতরে। মাথার ভেতর সব গুলিয়ে যাচ্ছে। যে জীবন আমার নয়, তার ভেতরে ঢুকে কুড়িয়ে নিচ্ছি আশ্চর্য কিছু ছায়া, অদ্ভুত সব রং, সান্ধ্যসংগীতের দৈন্য। অথচ জানি মফস্সল বদলে গেছে। কাউকে ভালোবাসার মতো বদলে গেছে মফস্সল। তবু ভালোবাসার মধ্যে থাকে যা কিছু, তা সহজে বদলায় না।
গুটি গুটি পায়ে বেরিয়ে আসি এমন জীবন থেকে। এ জীবন আমার নয়, এ জীবন আমায় আগলে রাখে না। বন্ধুর চোখে কাজলের রেখা হয়ে রয়ে গেছে দিঘির জল। এমন একেকটা দিনে তীব্র মধ্যমে সুর লাগে না। এই সমস্ত দিন কেবল মন কেমনের গায়ে লেখা থাক।
‘দূর পরবাস’-এ জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]