নির্বাচনী বাহাস

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসফাইল ছবি: রয়টার্স ও এএফপি

সুরভী এবং বাদল বেশ ফুরফুরে মেজাজেই, আজকের দিনটা কাটাচ্ছে। আজ তাদের দুজনেরই ছুটি। ছেলেরা তাদের কর্মস্থলে, নিজেদের কাজ নিয়ে ব্যস্ত। ঘরে ব্যস্ততা বলতে, বাদলের জামাকাপড় ওয়াশিংয়ে দেওয়া। সুরভীর সামান্য কিছু রান্নাবান্না। এই নিয়ে দুজনই তারা সকাল–দুপুর, হালকা ব্যস্ত-সময় পার করেছে। এখন শারদীয় স্নিগ্ধ বিকেলে, চা-শিঙাড়া নিয়ে তারা বসেছে ড্রয়িং রুমে। জানালা দিয়ে বাইরে দৃষ্টি গেলে; প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য দেখা যায়! এ সময় গাছে গাছে দেখা যাচ্ছে; লাল, হলুদ এবং সবুজের নান্দনিক সমাহার। এমন দৃশ্য আর কিছুদিন দেখা যাবে। তারপর গাছের পাতা ঝরতে শুরু করবে। এখন বাইরে; জোরেশোরেই বাতাস বইছে। আজ বৈকালিক নাশতা তৈরি করতে, বাদল সুরভীকে সাহায্য করেছে।

বিকেলের নিরিবিলি কলেবরে, তারা দুজন বসেছে ড্রয়িং রুমে। সামনের দিকে তাকালেই, বন্ধ কাচের জানালা দিয়ে বাইরের দৃশ্য দৃষ্টিগোচর হয়। পরিবেশটা বেশ ভালোই লাগছে বাদলের কাছে। সুরভী এসে তার পাশে বসেছে। তার আগে, নিজেদের তৈরি করা চা-শিঙাড়ার ট্রে ছোট টেবিলের ওপর রাখে সে। তার শরীর থেকে হালকা পারফিউমের মিষ্টি গন্ধ বাদলের মনোযোগে, এক ভিন্ন মাত্রা যোগ করে! সে বলল, ‘বাহ্! তুমি সুরভী, ভালোই তো ‘সুরভী’ ছড়াতে জানো! তোমার সাজানো চা-শিঙাড়াও দেখতে, বেশ তো লাগছে! ধন্যবাদ তোমাকে!’

আরও পড়ুন

‘তা–ই বুঝি! ধন্যবাদ তোমাকেও!’ মুখে ‘লাজুক-হাসি’ নিয়ে, তার মুগদ্ধতা ছড়িয়ে দেয় সুরভী। বাদল তা, বেশ উপভোগ করে।

আগামী ৫ নভেম্বর মঙ্গলবার, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। নির্বাচনকে সামনে রেখে, এখানে বাংলাদেশের মতো হইচই হয় না। শুধু প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেই নয়। এ দেশের যেকোনো নির্বাচনেই একই দৃশ্য দেখা যায়। কেবল অনলাইন পত্রিকার পাতায় এবং টিভির পর্দায় চোখ রাখলেই, নির্বাচনী ডামাডোলে আঁচ করা যায়। তবে এবার একটি বিষয় ব্যত্যয় ঘটেছে! যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রাক্কালে দুই দলীয় মনোনীত প্রার্থীর মধ্যে বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়। এবার তা হচ্ছে না! চলতি বছরের সেপ্টেম্বর ১০ তারিখে, যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের ফিলাডেলফিয়ায়, একমাত্র সামনাসামনি বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়েছিল। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে, রীতিসিদ্ধ চলমান এই বিতর্ক দেখতে এ দেশের এবং সারা বিশ্বের মানুষের আগ্রহ নিবদ্ধ থাকে লক্ষ করার মতো। কিন্তু এবার তা হচ্ছে না!

আজ সকালেই বাদল এ দেশের নির্বাচনের প্রসঙ্গ তুলেছিল। সুরভী বলেছিল, এখন নয়। বিকালে দুজনে বসব। খোলামেলা কথা বলব। সুরভীর প্রস্তাবে, বাদল বেশ খুশিই হয়েছে! মনে হচ্ছে, তাদের মধ্যকার আজকের ‘নির্বাচনী বাহাস’ ভালোই জমবে! তাদের জন্য, এটি হয়ে থাকবে অনন্য এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত!

চা-শিঙাড়া সামনে নিয়ে বাদল বলল, ‘সুরভী! স্বাগতম তোমাকে আজকের আমাদের এই নির্বাচনী বাহাসে! এখন নিশ্চয় আমাদের দুজনের একই প্রশ্ন, ডোনাল্ড ট্রাম্প? নাকি কমলা হ্যারিস? হোয়াইট হাউসে, তাঁদের কে আসবেন, নতুন বাসিন্দা হয়ে? এ প্রশ্ন শুধু যুক্তরাষ্ট্রের জনগণেরই নয়। বলতে গেলে পুরো বিশ্ববাসীরও। তুমি কী বল সুরভী?

সুরভী বলল, ‘ধন্যবাদ! স্বাগতম তোমাকেও। এখন এই নির্বাচনী বাহাসে, একই সঙ্গে আমরা চা, শিঙাড়াসহ আমাদের কথা বলি। তোমার উত্থাপিত বিষয়ের প্রসঙ্গে আমি বলব, বিশ্ব রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্র এখন প্রধান মোড়ল। বলা যায়, ‘বিশ্ব মোড়ল’। এবং যুক্তরাষ্ট্র মানে, এই দেশের প্রেসিডেন্ট। তিনি যা বলবেন, যা চিন্তা করবেন, তারই প্রতিফলন ঘটবে বিশ্বব্যাপী। এই একজন মানুষই তাঁর দোর্দণ্ড প্রতাপ নিয়ে; বিশ্বরাজনীতিতে কলকাঠি নাড়িয়ে নিজের দেশের ইচ্ছা-অনিচ্ছার প্রভাব বলয় আঁকড়ে ধরে আছেন।

সে যোগ করে, ‘কার সাধ্য তাঁর বিপরীতে দাঁড়িয়ে; ‘না’ বলবে! যুক্ত বাদে; আর যত ‘পরাশক্তি’ রয়েছে, তাদেরও এক রকম হিসাব করেই কথা বলতে হয়। ‘আচ্ছা! জি, হুজুর!’ বলে; তাদের মুখে খই ফুটাতে হয়!’

বাদল বলল, ‘ঠিক বলেছ। বিশ্ব রাজনীতি, এখন আগের সেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-সোভিয়েত ইউনিয়ন কেন্দ্রিক নয়। আবার নয়, যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া-চীন ভিত্তিকও। বিশ্ব রাজনীতি এখন বহুমেরুতে বিস্তৃত হয়ে পড়েছে। দল বিচারে, যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে এবং নির্বাচনে, বিশ্বের অন্যান্য পরাশক্তিগুলো এবং তাদের মিত্ররা তাদের প্রভাব বিস্তার করতে চাইবেই। এখানে তাদের স্বার্থ নিশ্চিত করতে চাইবে। এটাই স্বাভাবিক। তাই এবারের নির্বাচন বিগত দিনের যেকোনো নির্বাচনের থেকে ভিন্ন। এটাই দেখা যাচ্ছে এখন।

বাদলের সঙ্গে যোগ করে সুরভী বলে, ‘এই বিশ্বের প্রত্যন্ত অজপাড়াগাঁয়ে, আনাচকানাচে কোথায় কখন, কী ঘটে চলেছে; সবই এই বিশ্ব মোড়লের নখদর্পণে থাকে। তাঁকে ফাঁকি দেয় সাধ্য কার? ফাঁকি দেওয়ারও কোনো সম্ভাব্য পথ; বা কৌশল কারও জানা নেই! তথাকথিত ‘হিউম্যান-রাইটস’-এর ‘হেফাজতকারী’, প্রধান ‘ঠিকাদার’ও এই বিশ্ব মোড়ল! বিশ্ব রাজনীতির ধরন এখন, আগের সেই ‘দুই মেরু’ ভিত্তিক নয়। এবারের নির্বাচন বিগত দিনের যেকোনো নির্বাচনের থেকেও তাই ভিন্ন। এটাই বাস্তব সত্য!

যুক্তরাষ্ট্র দেশটির জনগণ; তাঁদের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ‘দ্বিতীয়বারের মতো’, নাকি কমলা হ্যারিসকে প্রথমবারের মতো একজন ‘নারী প্রেসিডেন্ট’ হিসেবে দেখতে চান? আগামী ৫ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ৬০তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। তখনই তার চূড়ান্ত ফলাফল, আমরা দেখতে পাব। কী বল তুমি?

তা তো অবশ্যই। শিঙাড়া কেমন লাগছে, বললে না তো।

ওহ্ দারুণ! চা–ও তেমন! সেই রকম! জবাব নেই! ধন্যবাদ!

ধন্যবাদ তোমাকেও! তুমিও তো সাহায্য করেছ। ‘দারুণ’ হবে না কেন?

তবে অনেকেই বলছেন, মার্কিনিরা এখনো একজন নারীকে তাঁদের প্রেসিডেন্ট হিসাবে দেখতে মানসিকভাবে প্রস্তুত নন।

বাদলের কথায় সুরভী নড়েচড়ে বসে। বাদল বলে, ‘যদি তা–ই হয়, তবে কমলা হ্যারিসের পাতে ‘পোড়া-আলু’ই পড়ার সম্ভাবনা বেশি। এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের রসনাতৃপ্তির জন্য; পাতে তাঁর পছন্দমত মেনুর ‘মেইন-কোর্স’টি পরিবেশিত হবে! দেখা যাক। সময়ই তা বলে দেবে।’

দেখছি, তুমি তোমার অবস্থান পরিষ্কার করলে! আমি তো বুঝে গিয়েছি; তুমি তোমার ট্রাম্পকেই ভোটটা দেবে! তবে, তুমি কি চাও না; একজন নারী এ দেশের প্রেসিডেন্ট হবেন?

সুরভী যোগ করে বলে, ‘আমি তো চাই, নেতৃত্ব বিকাশের ক্ষেত্রে এই দেশে নারীরাও এগিয়ে আসুক। আগের সেই সময়, এখন আর নেই। তাবৎ বিশ্বের সব মানুষের মনমানসিকতার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। সংগত কারণেই, নারীরাও এখন গৃহবন্দী হয়ে থাকছে না আর। তারা অনেক চ্যালেঞ্জিং পেশায়; সাফল্যের সঙ্গেই নিজেদের দক্ষতা দেখিয়ে যাচ্ছে। আমি চাই, বিশ্বের অনেক দেশের মতো এই দেশেও, একজন নারী প্রেসিডেন্ট হয়ে নিজেকে তুলে ধরবেন।’

তুমি যেমন একজন নারী হয়ে, আরেকজন নারীকে সমর্থন করছ। আমার বেলায়ও তা–ই। আমিও একজন পুরুষ হয়ে; আরকে জন পুরুষকে সমর্থন জানাচ্ছি। বল, তাতে দোষ কী আমার? এটাই স্বাভাবিক।

শোন। কমলা হ্যারিসের জায়গায় যদি আমি সুরভী হতাম; তুমি কি আমায় সমর্থন দিতে না? নাকি তোমার ওই ‘নারী’ বলেই আমাকে প্রত্যাখ্যান করতে? এযাবত বিভিন্ন স্টেটে জনজরিপ হয়েছে। তাতে কমলার পক্ষে জনসমর্থনই বেশি দেখা যাচ্ছে! কী! তা জানো তো?

হ্যাঁ জানি। তোমার ওই ‘বেশি’ কিন্তু খুব বেশি নয়! জন-সমর্থনের বা জনপ্রিয়তায় দিক দিয়ে মাত্র দুই/চার পয়েন্টের ব্যবধান! আবার আমাদের ট্রাম্প কিন্তু অনেক স্থানে সমানে সমান! তা জানো তো?

তো আমাদের কমলা, মার্কিনদের মৌলিক স্বাধীনতার বিষয়গুলোকে সুরক্ষিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি  তাঁর মেনুফেস্টোতে এবং যুক্তি-তর্কে, তোমাদের ট্রাম্পকে কিন্তু উৎরে গিয়েছেন! তা ছাড়া …!

হ্যাঁ বল। তা ছাড়া আবার কী?

তা ছাড়া তোমাদের ওই ট্রাম্প সাহেব; সকালে এক কথা বলেন তো, বিকেলে তা পাল্টে ফেলেন! বলেন, অন্য কথা! হ্যাঁ। এ দেশের মানুষ কিন্তু তা লক্ষ করছেন।

আমাদের ট্রাম্প তাঁর মেনুফেস্টো হিসেবে যা তুলে ধরেছেন; তাতে মার্কিনদের মনের কথাই প্রতিফলিত হয়েছে।

এবং আমাদের কমলাও যা তুলে ধরেছেন; তা-ও কিন্তু মার্কিন জনগণ পছন্দ করছেন। তিনি বলেছেন, ‘প্রথম নারী’ প্রেসিডেন্টের জন্য এখন, প্রস্তুত যুক্তরাষ্ট্র।

তা তুমি এবং কমলা মিলে যা–ই বলো। রাজনীতির খেলা কিন্তু খুবই জটিল!

বাদল যোগ করে, ‘তোমার ওই ‘জরিপ-টরিপ’ যা–ই হোক, ভোটের খেলায় ট্রাম্পই জয়ী হবেন।’

আমিও যদি এর উল্টোটা বলি! ‘ট্রাম্প জয়ী হবেন’ তুমি এভাবে বলতেই পারো না!

সুরভী যোগ করে বলে, ‘তুমি ব্যক্তি ইমেজ দেখ। আমার কমলা কী? আর তোমার ট্রাম্প কী? ট্রাম্পের পাগলামির কথা সবারই জানা আছে। কিন্তু কমলার কথা কী বলবে তুমি?’

ফ্লাস্ক থেকে চা বাদলের কাপে দিয়ে নিজের কাপে ঢেলে নেয় সুরভী।

এ দেশের জনগণ জানেন, তোমাদের কমলা হবেন; ঠিক বাইডেনেরই ‘ডুপ্লিকেট-কপি’!

চায়ের কাপ হাতে নিয়ে বাদল বলে, ‘তুমি বল, প্রেসিডেন্ট বাইডেনের আমলে এখন আমরা এই দেশের জনগণ কেমন আছি? খুব কি ভালো আছি?  রাশিয়া-ইউক্রেন এবং ইসরায়েল-প্যালেস্টাইন চলমান যুদ্ধ, তিনিই তো জিইয়ে রেখেছেন। এটা কিন্তু এ দেশের জনগণ চাইছেন না!’

তা, প্রেসিডেন্ট বাইডেনের ভাবমূর্তি দিয়ে; কমলাকে তুমি বিচার করতে পারো না! দেখ, কমলা দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি রোধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন। অন্যদিকে,  ট্রাম্প তাঁর যে অর্থনৈতিক এজেন্ডাগুলো ঘোষণা করেছেন, তার বিশাল এবং ভারী বোঝা, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মার্কিনদের ওপর চেপে বসবে!

চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে সুরভী বলে, ‘আমাদের কমলা হ্যারিস বলেছেন, ভোক্তা হিসেবে এ দেশের জনগণের স্বাধীনতা কমে যাবে। কেননা তাঁরা প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবে; ইচ্ছামতো ব্যয় করতে পারবেন না। আবার দেখ, তিনি যে পরিকল্পনা প্রকাশ করেছেন, তা আবাসনের (বাড়ি ও ফ্ল্যাট) সরবরাহ বাড়াতে এবং তার খরচ কমাতে সাহায্য করবে। এতে প্রথমবারের মতো যাঁরা বাড়ি কিনছেন, তাঁদের সামর্থ্য বাড়াবে। কিন্তু ট্রাম্প এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নীরব রয়েছেন।’

তুমি যা বল, সুরভী। শোন। বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যে দলের, কমলা হ্যারিস তো সেই একই দলের। ঠিক তো? তুমি বল, ডেমোক্রেটদের নীতির বাইরে কমলা যাবেন কেন? ডোনাল্ড ট্রাম্পের বেলায়ও তাই। রিপাবলিকানদের পথেই তাঁকে হাঁটতে হবে। এখন প্রশ্ন করতে পারো, এ দেশের মানুষ কোন দলের সময় স্বচ্ছন্দ বোধ করেন।

তো, তোমার ওই ট্রাম্প সাহেব কি রাশিয়া-ইউক্রেন, ইসরায়েল-প্যালেস্টাইন যুদ্ধ বন্ধ করতে পারবেন? পারবেন কি, উত্তর কোরিয়া এবং ইরানকে বাগে আনতে? আমার মনে হয়, পারবেন না!

ডোনাল্ড ট্রাম্প তো; বলেছেন। এ সময় তিনি এ দেশের প্রেসিডেন্ট হিসেবে থাকলে, এই রাশিয়া-ইউক্রেন, ইসরায়েল-প্যালেস্টাইন ‘যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা’ অনেক আগেই বন্ধ করে দিতেন।

চায়ের কাপে শেষ চুমুক দিয়ে বাদল বলে, ‘এবং সঙ্গে চীন বল এবং উত্তর কোরিয়া-ইরান বল, একমাত্র ডোনাল্ড ট্রাম্পই পারবেন তাদের ম্যানেজ করতে। এ সময় তিনি ক্ষমতায় থাকলে, তারাও দৌড়ের ওপর থাকত! তোমাদের কমলা, এত কিছু করতে পারবেন না, আমার বিশ্বাস।’

বাদল। তুমি কী বিশ্বাস কর, তা তোমার নিজের বিষয়। তুমি কি মনে কর, বিশ্ব-রাজনীতির বেলায় তা–ই হতো? আমি তো মনে করি, ডেমোক্রেট বল; আর রিপাবলিকান বল, কিছু কিছু ইস্যুতে তারা কিন্তু একই অবস্থানে থাকে।

না সুরভী। দেশের স্বার্থকে সমুন্নত রাখার ব্যাপারে তারা এক হলেও, তাদের কৌশল কিন্তু ভিন্ন। দেশকে অবশ্যই তারা ভালোবাসে। বলতে পারো, আমাদের দেশের মতো নয়। আমাদের দেশের  রাজনীতিকরা, রাজনৈতিক দলগুলো, দেশের আগে নিজেদের স্বার্থের কথাই চিন্তা করে! নিজেদের লাভ-লোকসান চিন্তা করে। কিন্তু এখানে তা হয় না! দেশের প্রশ্নে, তারা সবাই একই রকম, অনড় অবস্থানে থাকে।

এখন তুমি বল, ট্রাম্পের চেয়ে একজন নারী; কমলা হ্যারিস কম কোথায়? একজন ‘ভাইস-প্রেসিডেন্ট’ হিসেবে কমলার রয়েছে বাস্তব অভিজ্ঞতা। তিনি বাইডেনের পাশে থেকে ‘শ্যাডো-প্রেসিডেন্ট’ হয়েই কাজ করেছেন। তাঁর অভিজ্ঞতার ঝুড়ি ভারী করেছেন।

সুরভী তার কথার জের টানে, ‘সম্প্রতি এক প্রচারাভিযানে প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছেন, ট্রাম্পকে রাজনৈতিকভাবে আটকাতে হবে নতুবা যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র ও বাক্‌স্বাধীনতা হবে হুমকির সম্মুখীন। সম্প্রতি সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও, কমলা হ্যারিসের পক্ষে কথা বলেছেন! কমলাকে নির্বাচিত করার জন্য, মার্কিনদের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।’

তা তাঁরা বলতেই পারেন। এবং দেখ একজন ট্রাম্প, তিনি প্রেসিডেন্ট হয়েই, নিজেকে অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ ছাড়া তাঁর তো, চাওয়া-পাওয়ার আর কিছুই নেই! এবং তিনি তাঁর আগের আমলের সব অপরিপূর্ণতা এবং ভুলগুলো শোধরানোর লক্ষ্যকে সামনে রেখেই এগিয়ে যাবেন।

বাদলও কম যেতে চায় না। সে বলে, ‘আমি মনে করি, এবারের নির্বাচনে উৎরে গেলে; ডোনাল্ড ট্রাম্প আগের চেয়ে বেশি সংযত হবেন। তাঁর ব্যক্তি-ইমেজকে উজ্জ্বল করতে; সচেষ্ট হবেন।  অন্যদিকে ট্রাম্প তাঁর নির্বাচনী সভায় বলেছেন, ‘বাইডেনের আমলে দ্রব্যমূল্য, বাসস্থান, বেকারত্ব, অভিবাসন সমস্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এবং এর বিহিতের জন্য রিপাবলিকান প্রার্থীকে, অর্থাৎ তাঁকে ভোট দিতেই হবে।’

তাঁকে ভোট দিতেই হবে! নিজের কথা, বলবেনই তো তিনি!

এদিকে ইতোমধ্যেই কমলার দৃষ্টিভঙ্গি আরও নেতিবাচক হয়েছে বলে মনে করছেন মার্কিন ভোটাররা। যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে, কমলার গ্রহণযোগ্যতাও কমে গিয়েছে। অপর দিকে ভোটারদের কাছে প্রেসিডেন্ট থাকাকালে ট্রাম্পের কর্মকাণ্ডের গ্রহণযোগ্যতা বেড়ে গিয়েছে।

সুরভী বলে, ‘আচ্ছা সবই দেখা যাবে আগামী ৫ নভেম্বরের নির্বাচনে। সেই দিন পর্যন্ত আমাদের সবাইকে অপেক্ষা করতেই হবে। তবে মনে রেখো, এবারের নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের অতীতের সব ইতিহাস পাল্টেই যাবে!’

বাদল বলে, ‘ঠিকই বলেছ, সুরভী তুমি। আমিও বিশ্বাস করি তা–ই। এই নির্বাচনে জয়ী হয়ে, আমাদের ডোনাল্ড ট্রাম্প অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে দেবেন! তাঁর নেতৃত্বে, যুক্তরাষ্ট্র আবার ঘুরে দাঁড়াবে! তখন হবে, নতুন আরেক যুক্তরাষ্ট্র! তাঁর ভাষায়, যুক্তরাষ্ট্র ইজ ফার্স্ট!’

সুরভী হাত নেড়ে বলে, ‘আমি বলছি; কমলার কথা! আমাদের কমলা হ্যারিস, এবার যুক্তরাষ্ট্রকে  ঠিকই আমূল পাল্টে দেবেন! হ্যাঁ!’

বাদল দাঁড়িয়ে বলে, ‘বুঝেছি! তুমি তোমার যুক্তিতে অনড়। ‘কমলা’ প্রসঙ্গে তো ভালোই বলেছ।’

সুরভীও দাঁড়িয়ে বলে, ‘তুমিও তো কম অনড় না! ‘ট্রাম্প’ প্রসঙ্গে বলতে তো পাগল! ঠিক তাঁরই মতো! আগে ভোটটা দেই। তারপর দেখা যাবে, কোথাকার পানি কোথায় গড়ায়।’

বাদল বলে, ‘হ্যাঁ। ভোটটা আগে দেই। দেখা যাবে তখন, আমাদের অবস্থান কী হয়। আজ এ পর্যন্তই! ধন্যবাদ সুরভী!’

ঘুরে দাঁড়িয়ে সুরভী বলে, ‘বাদল, ধন্যবাদ তোমাকেও। আগামী নির্বাচনের পর, নিশ্চয় আমাদের দুজনের অবস্থানও বদলে যাবে!’

বাদল হেসে বলে, ‘বাহ্! তুমি তো আমার মনের কথাই বললে!’

সুরভী বাদল পরস্পর হাত মিলিয়ে বলে, ‘তারপরও বলতে হবে, দিনের শেষে আমরা দুজন তো একই সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে আছি। একই পথের পথিক, আমরা! ঠিক আমাদের মতোই, ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং কমলা হ্যারিস!  তাঁরাও  দুজন, একই লক্ষ্য সামনে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন!’

ওহ্ যা বলেছ, সুরভী তুমি! একেবারেই খাঁটি সত্য কথা! দিনের শেষে, আমাদের ‘নির্বাচনী বাহাস’ তো, ভালোই জমেছে!

ঠিকই বলেছ, বাদল! আমাদের আজকের এই নির্বাচনী বাহাস, যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়েই থাকবে!