যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন
নির্বাচন ‘ওয়ার্কিংডে’তে, কাজে যাওয়ার আগে–লাঞ্চ টাইমে–কাজ শেষে ভোট দেন অনেকে
১৯৯৬ সালে আমি প্রথম যুক্তরাষ্ট্রে আসি বেড়াতে। অক্টোবর মাস। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টশিয়াল ইলেকশন। আমি তখন সাপ্তাহিক বিচিত্রা, আনন্দ বিচিত্রাতে সাংবাদিকতা করি। ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনসে পড়াশোনা করি। সঙ্গে নাটকের কাজ তো আছেই।
নির্বাচন নিয়ে আমার তখন প্রচণ্ড আগ্রহ। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের কেমন আগ্রহ ভোটিং নিয়ে, প্রচার কেমন, মিটিং–মিছিল হয় কি না জানার চেষ্টা করি। খুঁজি কিন্তু কিছুই পাই না। শুধু রাস্তার মোড়ে মোড়ে ঘাসের মধ্যে গেঁথে রাখা ছোট ছোট প্ল্যাকার্ড। যেখানে দল ও প্রার্থীর নাম লেখা। না খুঁজলে তা চোখে পড়ে না।
কিছু মানুষকে জিজ্ঞেস করলাম। কাকে ভোট দেবেন। ইলেকশন নিয়ে কী ভাবনা, তাঁরা অবাক হয়ে উল্টো জিজ্ঞেস করেন, ও ইলেকশন তো আসছে, কবে যেন? এইরকম সব আজব উত্তর–প্রতিক্রিয়া। আমার এসব অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি প্রতিবেদন পাঠালাম বিচিত্রায়। ফ্যাক্স করে। এখনকার মতো অনলাইন সুবিধাতো আর ছিল না তখন। লেখাটি ঐ সপ্তাহেই বিচিত্রায় পাবলিশ করা হয়। ঐ সময় একজন সাংবাদিকও এসেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে। তিনিও লেখা পাঠিয়েছেন। কিন্তু আমার লেখাটি আগে ছাপানোর কারণ পরে গিয়ে শ্রদ্ধেয় সম্পাদক শাহাদৎ চৌধুরীকে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনি বলেছিলেন, আমার লেখাটি ছিল ফ্রেশ এবং সহজ। নতুন একটি প্রক্রিয়াকে দেখার আর্শ্চযজনক অভিজ্ঞতার চমক ছিল তাতে।
এখন ২০২৪ সাল। আর কয়েক দিন পর ৫ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ৬০তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। রিপাবলিক দলের ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ডেমোক্রেটিক দলের কমলা হ্যারিস প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। একই সঙ্গে তাঁদের ভাইস প্রেসিডেন্টও নির্বাচিত হবেন।
১৯৯৬ থেকে ২০২৪। ২৮ বছর পর। এখনও যুক্তরাষ্ট্রের এই নির্বাচন নিয়ে, যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে যত আলোচনা হয়, এখানে ততটা হয় না। শুধু টেলিভিশনে রাজনৈতিক চ্যানেলগুলোতে দিন–রাত আলোচনা, সমালোচনা। আর টিভিতে গর্ভনর, সিনেটরদেরকে নিয়ে প্রচুর বিজ্ঞাপন চালানো হয়।
মূল ইলেকশন হয় ‘ওয়ার্কিংডে’তে, এবার মঙ্গলবারে হবে। যে যার মতো কাজে যাওয়ার আগে অথবা লাঞ্চ টাইমে অথবা কাজ শেষে ভোট দেবেন, বাড়ি যাবেন। এখানে ৫০ শতাংশ ভোটার ভোট দিলেই সেটি প্রত্যাশিত বলে মনে করা হয়। ভোট কেন্দ্রে কোনো হৈ চৈ নেই, ভিড় নেই। শুধু লাইন ধরে যাওয়া। তবে মূল নির্বাচনের দিনে ভিড় না হওয়ার আরেকটি কারণ ‘আর্লি ভোটিং’ যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি স্টেটের মধ্যে দুয়েকটি ছাড়া সব স্টেট ১০ থেকে ৪৬ দিন আগে থেকে ‘আর্লি ভোটিং’ এবং ‘মেইল ইন ভোট’–এর সুযোগ দেয়।
প্রেসিডেন্ট ইলেকশন নিয়ে সবার আগ্রহ থাকে মূলত এবার কোন দলের প্রার্থী জয়ী হবেন? ডেমোক্রেটিক না রিপাবলিকান? এবার বেশি আগ্রহ অথবা প্রশ্ন আবার কি ডোনাল্ড ট্রাম্প জিতবেন, নাকি ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস জিতে আমেরিকার প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হিসেবে ইতিহাস গড়বেন? যদিও প্রথম নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি ইতিমধ্যে ইতিহাসে নাম লিখিয়েছেন।
২০১৬ সালে হিলারী ক্লিনটন যখন ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ঠিক যতটা হাইপ হয়েছিল এবার কমলার সময় ঠিক ততটা হচ্ছে বলে মনে হয় না। তবে হিলারি ক্লিনটন আমেরিকার প্রথম নারী প্রার্থী ছিলেন না, যিনি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
শতাব্দী আগে ১৮৭২ সালে ভিক্টোরিয়া উডহাল ইক্যুায়াল পার্টি থেকে নমিনেশন নিয়ে প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য প্রার্থী হয়েছিলেন। যদিও প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীর বয়স ৩৫ হতে হবে। এই শর্তটি তিনি পূরণ করতে পারেননি। ঐ সময় তাঁর বয়স ছিল ৩৪ বছর। বিভিন্ন কারণে তাঁর প্রার্থীতাকে সিরিয়াসভাবে নেওয়া হয়নি। ভোটের আগেই তাঁকে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠানো হয় এবং ব্যালট বাক্সে তাঁর নামও রাখা হয়নি। এর এক শ বছর পর ১৯৭২ সালে শার্লি চিশম নামের একজন কৃষাঙ্গ রাজনৈতিক ব্যক্তি, যিনি নারী অধিকারের ব্যাপারে সোচ্চার ছিলেন, তিনি প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হন। তিনি ইতিমধ্যে নিউইর্য়ক ১২তম কনগ্রেশনাল ডিস্ট্রিক্ট থেকে নির্বাচিত হয়ে কংগ্রেসও ছিলেন ১৯৬৯ থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত। অনেকের মতে শার্লি চিশমের অবদানকে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সেভাবে মর্যাদা দেওয়া হয়নি।
ভিক্টোরিয়া উডহালের পর শার্লি চিশম, হিলারি ক্লিনটনের পর এবার কমলা হ্যারিস। নতুন ইতিহাস রচিত হয় কি না, তা দেখার জন্য মাত্র আর কয়েক দিনের অপেক্ষা।