নির্মমতা কত দূর হলে জাতি হবে নির্লজ্জ!
প্রথম আলো পত্রিকার নাগরিক সংবাদে লেখা ‘শুক্রবারে কেন ছাত্রছাত্রীদের হাফ ভাড়া নয়’ লেখাটিতে এসেছে, জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে গণপরিবহনের ভাড়া বাড়ানো হয় আর ভাড়া বাড়ানো নিয়ে নানা সমস্যাও রয়েছে। তেলের দাম যদি বাড়ে ১০ গুণ, ভাড়া বাড়ে ২০ গুণ। সেই সঙ্গে নানা ছুতোয় আন্দোলনের নামে গণপরিবহন–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দেশবাসীকে জিম্মি করে রাখে।
ধরতে গেলে সরকারও একধরনের জিম্মি তাদের কাছে। সরকার হয়তো জনগণের কথা ভেবেই তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয় না। আমি দেশের বাইরে থাকি। অনেক কিছু সম্পর্কে আমার সচেতনতা নেই।
তবে লেখাটি পড়ে একটি বিষয়ে জানলাম, সেটা হলো জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির সময় মালিক ও সরকারপক্ষ আলোচনায় বসে। এ সময় ছাত্রছাত্রীদের হাফ পাস নেই বলে জানায় মালিকপক্ষ। তারপর অনেক ছাত্রছাত্রীর আন্দোলনের মুখে সরকারের অনুরোধের পর হাফ পাস কার্যকর হয়। তবে তা করা হয় সপ্তাহে ছয় দিন। এটা আমাকে মুগ্ধ করেছে।
আমি থাকি সুইডেনে। এখানে অবশ্য বিষয়টি ভিন্ন। সবাই সরকারকে ট্যাক্স দেয়। সেই ট্যাক্সের একটি অংশ শিক্ষা খাতে ব্যয় করা হয়। স্কুল ও কলেজশিক্ষার্থীরা বিনা খরচে লেখাপড়া করার সুযোগ পায়। সুইডেনে যানবাহনের জন্য স্কুল–কলেজশিক্ষার্থীদের মাসিক টিকিট স্কুল কর্তৃপক্ষ থেকে দেওয়া হয়, যাতে তারা সময়মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসতে পারে। তবে শনি ও রোববার এ সুযোগ নেই। তখন তারা নিজ দায়িত্বে চলাফেরা করে থাকে।
বলা হয়েছে, দেশটা আজ অনেকাংশেই মগের মুল্লুক হয়ে গেছে। এ কথা সত্য, তবে সব বাধাবিঘ্নের মধ্যে যে সরকার ও যানবাহন কর্তৃপক্ষ এমন চমৎকার একটি পদক্ষেপ নিয়েছে, এর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই।
আমি যে বিষয় তুলে ধরতে চাই, সেটা হলো সরকারি উচ্চপদস্থ অধিকাংশ কর্মকর্তা জনগণের ট্যাক্সের টাকার গাড়ি ব্যবহার করে থাকেন। মূলত, এসব গাড়ি শুধু সরকারি কাজে ব্যবহৃত হওয়ার কথা। কিন্তু সেটা কি দেশে হচ্ছে? প্রতিদিন এসব কর্মকর্তা শপিং থেকে শুরু করে স্কুল, কলেজ এবং অন্য ব্যক্তিগত কাজে যে পরিমাণ সরকারি গাড়ি ব্যবহার করেন এবং যে পরিমাণ সরকারের তেল অপচয় করেন, সেটা কি কখনো ভেবে দেখা হয়েছে?
আমার এখানে সংসদ সদস্যদের বা জনগণের প্রতিনিধিদের মূলত কোনো সরকারি গাড়ি দেওয়া হয় না (ব্যতিক্রম প্রধানমন্ত্রী)। আমরা যারা সরকারি বা বেসরকারি কাজে গাড়ি পাই, সেটা শুধু কাজের জন্যই ব্যবহার করে থাকি। ছুটিতে বা সপ্তাহান্তে কখনো সরকারি গাড়ি ব্যবহার করি না, তখন আমরা ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করি। এ ক্ষেত্রে দেশের জনগণের অর্থের অপচয় করার কোনো সুযোগ থাকে না।
এখন ভাবুন কী পরিমাণ অর্থ দেশের কর্মরত দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা অবৈধভাবে ব্যয় করছেন? যাঁদের সামর্থ্য রয়েছে, তাঁরাই কিন্তু সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন। কেউ কিন্তু বিষয়টি তুলে ধরছে না বা এটা নিয়ে কথা উঠছে না। এর কারণ কী?
একটি গরিব দেশে যখন তেল আনতে নুনের খবর থাকে না, সেখানে এ ধরনের বিলাসিতা, তা–ও গরিবদের ঠকিয়ে? একটি সৃজনশীল শিক্ষিত সমাজে এটা করা কি ঠিক?
তাহলে দেখা যাচ্ছে, আমরা যে বিবেকের কথা বলি বা শিক্ষার কথা বলি, সেগুলোর সঙ্গে সত্যিকারের সঠিক ও সুশিক্ষার কোনো মিল নেই। যার ফলে দেশভরা অরাজকতার ঢেউ, সে ঢেউ এত ভয়ংকর যে সাধারণ জনগণ কিছু বললে দিনেদুপুরে ঘুম হয়ে যাবে বিধায় চুপচাপ রয়েছে।
‘আমি চিৎকার করে কাঁদিতে চাহিয়া করিতে পারিনি চিৎকার। বুকের ব্যথা বুকে চাপায়ে নিজেকে দিয়েছি ধিক্কার।’ হায়দার হোসেনের এ গান বাংলাদেশের সবার মনের কথা হওয়া উচিত। তাহলে অনেক দুর্নীতি দূর হয়ে যাবে দেশ থেকে।