খণ্ডকালীন চাকরি ও বাস্তব অভিজ্ঞতা–পর্ব ৩
চাকসুতে ছাত্রকর্মী হিসেবে কাজ করার মধ্যে একটা অজানা আশঙ্কা ছিল। স্বল্প উপার্জনের পাশাপাশি কখনো-সখনো গুরুত্বপূর্ণ ক্লাসগুলো মিস করে ফেলতাম। এভাবে ক্লাসে আর চাকসু বিল্ডিংয়ে টম অ্যান্ড জেরি খেলাটায় বেশি দিন থিতু হতে পারলাম না। তৃতীয় বর্ষে যখন কোনো ক্লাস মিস হতো তখন সুযোগ করে প্রিয় শিক্ষকের চেম্বারে ছুটে যেতাম। রুমে গিয়ে সালাম, শুভেচ্ছা বিনিময় করতাম। সংশ্লিষ্ট টপিক নিয়ে আলোচনা ওঠানোর চেষ্টা করতাম। মাঝেমধ্যে স্যারের কাছে ধরা খেতাম ক্লাসে অ্যাটেন্ড না করার কারণে। বিভিন্ন ছুতোয় প্রিয় স্যারদের সঙ্গে সমসাময়িক জাতীয়-আন্তর্জাতিক রাজনীতি নিয়ে আড্ডা হতো। আহা! কী মধুর সময়ই না কেটেছে সেই দিনগুলোতে।
আমাদের ক্লাসমেট ও এফ রহমান হলের বন্ধু ওই সময়ে মাঝেমধ্যে বাংলাবাজারে যাতায়াত করত। গভীর রাতে তাকে ডেকে তুলে জানার চেষ্টা করতাম বাংলাবাজার প্রকাশনী পাড়ায় গমনাগমনের কৌশল। অবিস্মরণীয় প্রকাশনীর প্রেস ম্যানেজারের সঙ্গে ওই বন্ধুর সহায়তায় কন্টাক্ট করলাম। প্রকাশনীটা তখন নিয়মিত উচ্চমাধ্যমিক থেকে শুরু করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্সভিত্তিক গাইড বাজারে বের করত।
একবার ওদের অপারেশন অফিসে গেলাম। টপিকভিত্তিক কিছু প্রশ্ন আমাকে ধরিয়ে দেওয়া হলো।
নাগরিক সংবাদে জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই–মেইল: [email protected]
সারা দিন ক্লাস, চাকসু ডিউটি, সন্ধ্যায় টিউশনি এবং বন্ধুদের সঙ্গে প্রাত্যহিক আড্ডা সেরে ক্যাম্পাসে যখন তুলনামূলক নীরবতা আসত তখন টেবিলে বসে যেতাম। টেবিল ল্যাম্পের আলোয় টিউটরিয়াল টেস্টের প্রস্তুতি এবং নেক্সট ক্লাসের রিপ্লাই প্রিপারেশনের পাশাপাশি বাংলাবাজারের ধান্দা (!) নিয়ে কাজ করতে করতে প্রায়ই ভোর হয়ে যেত। প্রথমবারই ৪০টা প্রশ্নের উত্তরপত্র কাগজে সম্পাদনাপূর্বক লিখে ফেললাম। কাজটা গোপনীয়তার সঙ্গেই করতাম। কোনো এক ছুটির দিনকে সামনে নিয়ে তূর্ণা নিশীথায় চেপে কমলাপুরে আসি। স্টেশনে নেমে হালকা ফ্রেশ হয়ে বাসযোগে ধান্দার (!) অফিসে যাত্রা করি। বাসের নম্বর সব এলোমেলো হয়ে গেল। দেখতে দেখতে মতিঝিলে পৌঁছে গেছি। তারপর একে-ওকে জিজ্ঞেস করে হাঁটা ধরলাম। কারণ, পকেটে শুধু ফিরতি ট্রেনের ভাড়া অবশিষ্ট ছিল। সম্পূর্ণ ঘেমে-নেয়ে প্রেসে পৌঁছালাম। অফিসের তালা খোলায় সহায়তা করলাম। প্রেসের কর্মচারী আমার হাতে ব্যাগ দেখেই ঠাওর করেছিলেন বোধ হয়।
প্রতিটি প্রশ্নের উত্তরের মূল্যমান ছিল ১৬০ টাকা মাত্র। এই প্রথম একদমে নিজের পরিশ্রমের বিনিময়ে উপার্জিত এতগুলো টাকা হাতে পেয়ে আনন্দেই হোক আর লম্বা জার্নির কারণেই হোক কেন জানি না আমার ক্ষুধা উবে গিয়েছিল। প্রেসের এডিটর এবং অন্য কর্মচারীদের সঙ্গে সারা দিন কাটল। সকালের নাশতা থেকে শুরু করে লাঞ্চ পর্যন্ত তাঁরাই অফার করেছিলেন। চলবে...
*লেখক: এম এ সালেক, প্রাক্তন শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা, কর্মসংস্থান ব্যাংক