ডিগ্রি আছে, চাকরি নেই: সমস্যার মূল কোথায়?
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক সমস্যার মধ্যে অন্যতম হলো বেকারত্ব। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (BBS) অনুযায়ী দেশের প্রায় ৩৮ লাখ মানুষ বেকার। দেশের এক-তৃতীয়াংশই তরুণ। তবে এই বেকারত্ব তরুণদের ধ্বংসের পথে নিয়ে যাচ্ছে। এখন প্রশ্ন হতে পারে, সমস্যার মূল কারণ কোথায়? এর পেছনে অনেকগুলো কারণ বিদ্যমান।
প্রথমত আমাদের শিক্ষা কারিকুলামে ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট স্কিলগুলোকে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয় না। অর্থাৎ এগুলো আলাদা করে শেখানো হয় না। এখান প্রশ্ন আসে, স্কিল বলতে কী বোঝায়? বর্তমান যুগ হলো ডিজিটাল যুগ, যেখানে টিকে থাকতে হলে নিজেকে অন্যদের থেকে আপগ্রেড করতে হবে। বর্তমানে সব কোম্পানি এমন মানুষ চায়, যাঁদের মধ্যে প্রয়োজনীয় দক্ষতা রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ ডিজিটাল মার্কেটিং, গ্রাফিক ডিজাইন, স্পিকিং ইংলিশ, প্রবলেম সলভিং স্কিল, কাস্টমার হ্যান্ডলিং ইত্যাদি। আমাদের দেশের বেশির ভাগ যুবক এই দক্ষতায় পারদর্শী নন। ফলে তারা উচ্চ সিজিপিএ থাকা সত্ত্বেও চাকরি পায় না।
আরেকটি সমস্যা হলো বিশ্ববিদ্যালয় ও চাকরির বাজারের মধ্যে বিরাট ফাঁক। এখানে পর্যাপ্ত ওয়ার্কশপ ও সেমিনারের ব্যবস্থা নেই। শিক্ষার্থীদের চাকরির বিষয়ে কোনো ধারণা দেওয়া হয় না। শিক্ষার্থীরা মুখস্থবিদ্যার ওপর বেশি জোর দেয় এবং নিজের চিন্তাধারা বিকাশের সুযোগ পায় না।
চাকরির ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হলো পুরোনো কারিকুলামের সিলেবাস, যা বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে মানানসই নয়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, ‘যেকোনো চাকরি পেলেই হবে’ এই মানসিকতা শিক্ষার্থীদের ভেতরের প্রতিভা বিকশিত হতে দেয় না। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় চার-পাঁচ বছরে পড়াশোনা শেষ করে কম বেতনের চাকরিতে আত্মতুষ্টি আসে না। কারণ, ব্যবসা করে চাকরির তুলনায় ভালো আয় করা সম্ভব। এখানে আবার আরেকটি সমস্যা হলো পুঁজির অভাব।
বাংলাদেশের মানুষের অন্যতম সমস্যা হলো বিসিএস ক্যাডার হওয়া। এটি যেন সোনার হরিণ; সবাই বিসিএস ক্যাডার হতে চান, কিন্তু স্কিল ডেভেলপ করতে চায় না। প্রতিবছর যেসব মানুষ বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন, তার মাত্র এক থেকে দুই শতাংশ মানুষ নিয়োগ পায়। এটি একটি অসুস্থ প্রতিযোগিতার মতো, যেখানে যারা ব্যর্থ হয়, তারা পুনরায় ঘুরে দাঁড়ানোর সাহস পান না। এ ক্ষেত্রে আরেকটি বাধা হলো নেপোটিজম। যেকোনো চাকরিতে নিকটাত্মীয়দের আগে সুযোগ দেওয়া হয়, যারা বড় পদে আছেন।
বাংলাদেশের বেকারত্বের পেছনে এই কারণগুলো উল্লেখযোগ্য। তবে এ সমস্যা থেকে দ্রুত মুক্তি পেতে হবে। প্রথমে স্কিল ডেভেলপ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, সিজিপিএ সম্মান আনে কিন্তু স্কিল আনে সম্ভাবনা। তাই যেই কোম্পানিতে যেমন প্রয়োজন, তেমন স্কিল ডেভেলপ করতে হবে। অনেক সময় দেখা যায়, ভুল সিভি দেওয়ার কারণে চাকরি হয় না।
এখন যেহেতু ফ্রিল্যান্সিংয়ের যুগ, সবার উচিত এতে পারদর্শী হওয়া। নেটওয়ার্কিং ও মাইন্ডসেটের ওপর জোর দেওয়া আবশ্যক। প্রশাসনকে নজরদারি করতে হবে যাতে নেপোটিজম না হয়। শুধু বিসিএসকেই একমাত্র কর্মসংস্থানের পথ মনে করা ঠিক নয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চাকরিবিষয়ক সেমিনার ও ওয়ার্কশপের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন, যাতে শিক্ষার্থীরা আগে থেকেই সচেতন হতে পারে।
*লেখা: সাদিয়া সুলতানা জীম, শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
নাগরিক সংবাদে জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]