প্রথম উপহার: সম্পর্কের সূক্ষ্ম রেখা–২

অলংকরণ: আরাফাত করিম

সাইকোলজিতে একটা টার্ম আছে ‘মেরে এক্সপেসিওর ইফেক্ট’। ১০ থেকে ১২ বার কোনো বিষয় সামনে এলে হোক সেটা কারও বলার মাধ্যমে অথবা আপনা–আপনি। বিষয়টি ব্যক্তিকে চরমভাবে ভাবিয়ে তোলে। তখন ব্যক্তি নিজ থেকে জানতে আগ্রহী হয়, সংস্পর্শে আসার চেষ্টা করে। প্রথম প্রথম ভালো না লাগলেও ধীরে ধীরে ভালো লাগার গভীরতা বাড়ে।

রুবা বলেছিল সাবিতকে বই দেবে। এরই মধ্যে একদিন কুরিয়ারের ঠিকানা নেয় সাবিতের থেকে। ২৩ তারিখ দুপুরের দিকে সাবিত কুরিয়ার সার্ভিস থেকে খুদে বার্তা পায়। ক্লাস শেষে সোজা চলে যায় পরিবহন মার্কেটের কুরিয়ার সার্ভিস সেন্টারে। বইটি যথাযথ রিসিভ করে রুমে আসে। সাবিত কাপড় না ছেড়েই কাগজে মোড়ানো বইটি খুলতে বসে যায়। ভেতরে ত্বরিত উত্তেজনা। রুবা এত তাড়াতাড়ি বই পাঠাবে, সাবিত ভাবেনি। জাকারিয়াও এ সময় ক্লাস শেষে রুমে ঢুকতেই সাবিতকে দেখতে পায় চৌকিতে বসে কিছু একটা করছে।

জাকারিয়া: বেশ আনন্দিত লাগছে দেখছি, ওটা কী?

সাবিত: বই।

জাকারিয়া: কিনলা নাকি?

সাবিত: না, গিফট পাইলাম।

জাকারিয়া: ওরে ভণ্ড, কে দিল?

সাবিত: (মিষ্টি হেসে) দিছে একজন, বলা যাবে না।

জাকারিয়া: কও, নইলে খুলতে দিমু না।

জাকারিয়া সাবিতের হাত থেকে বই কেড়ে নেওয়ার অবস্থা। না বলে পারা গেল না।

সাবিত: বান্ধবী দিছে।

জাকারিয়া: টাঙ্গাইলের বান্ধবী নাকি?

সাবিত: হ্যাঁ, কুরিয়ার করছে।

জাকারিয়া: তাইলে ভালোই লেনাদেনা হচ্ছে? তলে তলে মেলা দূর! রুমমেট হয়েও বলতে চাও না।

সাবিত: যা ভাবছ তা না।

জাকারিয়া: (হেসে) থাক আর বলতে হবে না, ধরা খাইয়া গেছ।

জাকারিয়া ওর প্রিয়জনকে ভিডিওকলে রেখে সবকিছু দেখায়। ‘দেখো বন্ধু আমার নতুন নতুন প্রেমে পড়ছে, সেই লেভেলে লেনদেন চলছে। এই যে আজকে ওরে এই বইটা পাঠাইছে। তুমি কী করলা, আমাকে একটা বই দিলেও তো পার’ (হাসি)।

‘সরাসরি বললেই তো পার’ রুবার এ কথার ভিত্তি কী হতে পারে? আবার বলল ‘ভাব নিও না’। সাবিত কোনোভাবে হিসাব মেলাতে পারে না। বিষয়টি ওকে ভাবিয়ে তোলে, করে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। সাবিতের বুঝতে দেরি হয় না।
সমরেশ মজুমদারের ‘সাতকাহন’ উপন্যাসের প্রধান চরিত্র দীপাবলি আচ্ছন্ন করেছিল অনেক পাঠককে

সাতকাহন; বেশ মোটা একখানা বই। ৭২৯ পেজ! সাবিত এত মোটা বই কখনো পড়েনি। সর্বোচ্চ বলতে ‘পথের পাঁচালি’। তাও অনেক দিন লেগেছিল শেষ করতে। তবে এ বই নিশ্চয়ই পড়বে গুরুত্ব দিয়ে; যতদ্রুত সম্ভব। সাবিত বইটি কম্বলের ওপর রেখে বেশ কিছু ছবি তুলে রাখে। রুবাকে পাঠানোর জন্য। ব্যাকগ্রাউন্ডে লেখা ছিল LOVE, প্রথমে লক্ষ্য না করলেও পরে ইচ্ছা করেই লেখাটা (LOVE) ফোকাসে রাখে।

বিকেল সাড়ে চারটায় জেলা সমিতির মিটিং। নবাগতদের নিয়ে এটাই প্রথম। জাকারিয়া আর সাবিত নির্ধারিত সময়ের মিনিট দশেক আগে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে চলে আসে। ওরা দুজন ছাড়া কারও হদিস নেই। বাঙালি বলে কথা। দেরি করা স্বভাবে গাঁথা। মিটিং শুরু হতে দেরি হবে বোঝা গেল। সাবিত সামনের বাঁধানো রেইনট্রি গাছের নিচে বসে পড়ে। জাকারিয়াও বসে। তবে ওর ফটোগ্রাফির নেশা; মসজিদের পাশে ফুলবাগান দেখে লোভ সামলাতে পারে না; চলে যায় ছবি তুলতে।

রুম থেকে আসার আগে সাবিত বইটির স্টোরি দেয় ফেসবুকে। স্বভাবতই দেওয়ার কথা। কোনো এক রমণী বই পাঠিয়েছে অথচ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে না, তা কি হয়! অন্তত সবাই প্রত্যাশা করে। তবে সাবিত কাস্টমাইজড করে রাখে, শুধু রুবাকেই দেখার জন্য। সাবিত একটু পরপর চেক করে কখন রুবা সিন করবে। অপেক্ষার পাল্লা খুব বেশি দীর্ঘ হয় না।

রুবা: স্টোরি তো ভালোই দিছ।

সাবিত: হুম, তোমার দেওয়া উপহার বলে কথা। না দিয়ে পারি!

রুবা: সরাসরি বললেই তো পার।

সাবিত: (কয়েক মুহূর্ত ভেবে) কী বলব?

রুবা: থাক, ভাব নিও না।

সাবিত: আগামাথা না বোঝা আমি। তুমি কি আমাকে বলতেছ নাকি অন্য কাউরে?

রুবা: হ্যাঁ, হ্যাঁ তোমাকেই বলতেছি।

মসজিদের দক্ষিণে মহাসড়ক। সড়কের দক্ষিণে বিস্তীর্ণ বেতার মাঠ। মাঝে এক পায়ে দাঁড়িয়ে আছে সুউচ্চ রেডিও টাওয়ার। সাবিত টাওয়ারের চূড়ায় হেঁয়ালিভাবে তাকিয়ে ভাবতে থাকে। ‘সরাসরি বললেই তো পারো’ রুবার এ কথার ভিত্তি কী হতে পারে? আবার বলল ‘ভাব নিও না’। সাবিত কোনোভাবে হিসাব মেলাতে পারে না। বিষয়টি ওকে ভাবিয়ে তোলে, করে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। সাবিতের বুঝতে দেরি হয় না। কিন্তু তৎক্ষণাৎ সায় দেয় না। সম্পর্ক বিষয়টি নিছক ছেলেখেলা নয়। অনেক বিষয় থাকে ভাববার। রুবা হয়তো সাবিতকেই চেনে। ওর পরিবার, পারিপার্শ্বিক অবস্থা, ভৌগোলিক অবস্থান তখনো অজানা। সাবিত মনে মনে চাইত রুবা ওর অজানা দিকগুলো জানুক। তারপর নাহয় সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে।

আরও পড়ুন

আগের চেয়ে ওদের কথা বলার পরিমাণ বেড়েই চলছে। ছোট ছোট বিষয় নিয়ে ওরা বিস্তর কথোপকথন করে। যার অধিকাংশই তুচ্ছ না হলেও খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়। অথচ রাত্রির নিস্তব্ধতা নামলেও মাঝেমধ্যে ওদের চোখে তার লেশমাত্র আসে না। এমনও অনেক রাত কেটে ভোর হওয়ার উপক্রম। প্রয়োজনীয় কথার সীমা থাকলেও অপ্রয়োজনীয় কথাই অসীম। প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে যেকোনো দিকে নেওয়া যায়। এ কথায় রসবোধ বেশি। শুনতে-বলতে মধুর লাগে।

সাবিতের ঘনিষ্ঠ মেয়ে বন্ধু হিসেবে রুবাই প্রথম। সাবিত সবকিছু রুবার সঙ্গে শেয়ার করে। যখন যা হয় সবই সঙ্গে সঙ্গে; জানতে চাইলে কিংবা না চাইলেও। ও নিজের থেকেই বলে। গোপনীয়তা বলতে কিছু নেই, নির্দ্বিধায় বলে যেকোনো বিষয়। জীবনে যত কথা রুবার সঙ্গে হয়েছে তার চার ভাগের এক ভাগ বাকি মেয়েদের সঙ্গে হয়েছে কি না সন্দেহ; তাও বিশেষ প্রয়োজনে। ভার্সিটিতে তখনো কোনো মেয়ের সঙ্গে সাধারণ বন্ধুত্বও গড়ে ওঠেনি।

জুন মাসে বেশ কিছুদিন ছুটি। সাবিতের মন চাচ্ছে কোথাও ঘুরতে যেতে। বন্ধুবান্ধব অনেকেই টাঙ্গাইল যেতে আহ্বান করে। কেউ কেউ তো বলতেছে মিষ্টি খাওয়াতে হবে বলে যাচ্ছে না। এদিকে সাবিতেরও কলেজে যাওয়া প্রয়োজন; সার্টিফিকেট তুলবে। এমন সুযোগ পরে কখন হবে কে জানে। ঠিক করল বাড়ি যাওয়ার পথে টাঙ্গাইল হয়ে যাবে। ঘোরাঘুরি হবে, বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হবে, সঙ্গে সার্টিফিকেটও উঠানো হবে। এক ঢিলে তিন পাখি মারবে!

অলংকরণ: মাসুক হেলাল

পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সাবিত টিকিট কেটে রাখে। ১২ জুন সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে সিল্ক সিটি ট্রেন। জানালার পাশে সিট। সবুজ প্রকৃতির বুক চিরে ট্রেন চলছে। সাবিত আপন মনে দেখছে নাতিদূরের কর্মব্যস্ত গ্রামের মানুষদের। কেউ মাঠে গরু চরাচ্ছে, কেউ ঘাসের বোঝা মাথায় বইছে, কেউ–বা গাছতলায় গল্পের আসর জমাতে মশগুল। গাছে গাছে পাকা আম দুলছে মৃদু বাতাসে। মনে হয় ঢিল ছোড়ার দুষ্ট ছেলের দল এ গ্রামে নেই। আর থাকবেই–বা কী করে। প্রতিটি বাড়ির উঠান ভর্তি আমগাছ, মাঠে মাঠে ছোটবড় বাগান।

ট্রেন ঈশ্বরদী স্টেশন আসার আগমুহূর্তে মাঝারি বর্ষণ শুরু। চারদিক বৃষ্টিস্নাতে আচ্ছন্ন। কখন থামবে বোঝা যাচ্ছে না। যেন অনন্তকাল ধরে চলবে এ বর্ষণ। দোকানের সামনে ছাউনির নিচে মানুষের উপচে পড়া ভিড়। মাঠের ফাঁকা জমিতে আধ–হাঁটু কাদাপানিতে গরুগুলো গুটিসুটি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সাবিত উদাস মনে দেখে। অজান্তেই মন ভারাক্রান্ত হওয়ার উপক্রম। সাবিত কৃষক পরিবারের সন্তান, গ্রামেই বেড়ে ওঠা। এ রকম আবহাওয়া পীড়াদায়ক। ও ভালো করেই জানে। ওর ধারণা, প্রকৃতি আর মন একই সূত্রে গাঁথা। যে প্রকৃতি মানুষের মনকে করে প্রফুল্ল, সেই একই প্রকৃতির আরেকটি রূপ বিষণ্নতায় ভরা।

উল্লাপাড়া স্টেশনের পর থেকে বৃষ্টি নেই। রোদে টিনের চালগুলো চকচক করছে। আকাশটাও স্বচ্ছ। বোঝার উপায় নেই একটু আগেই বৃষ্টি হয়েছে। কয়েক মিনিট পর যমুনা নদী। নদী দেখতেই সাবিতের মন বেশ উৎফুল্ল। এ নদীর একেবারে উত্তরাংশে সাবিতের ঠিকানা। আর দুদিন পরেই এর জল স্পর্শ করবে। নিচ দিয়ে অসংখ্য বাল্কহেড বালু বোঝাই করে চলছে উজান বেয়ে। তিনশ মিটার উত্তরে রেলসেতুর নির্মাণকাজে ব্যস্ত শ্রমিক।

সাবিত এ রুটে এবারই প্রথম। ওর গন্তব্য টাঙ্গাইল স্টেশন হলেও টিকিট পেয়েছে ইব্রাহিমাবাদ পর্যন্ত। ট্রেন টাঙ্গাইল স্টেশন থামলেও সাবিত জানত না। ওর ধারণা হয়তো পরেরটা টাঙ্গাইল স্টেশন। ট্রেন যখন মির্জাপুর স্টেশনের দিকে ধেয়ে যাচ্ছে, একজন এসে সিট দাবি করতেই সাবিতের টনক নড়ে।

জনৈক: ভাই, এ সিটটা আমার।

সাবিত: আমি টাঙ্গাইল নেমে যাব, আপাতত ওই খালি সিটে বসেন।

জনৈক: আপনে তো স্টেশন রাইখা আসলেন।

সাবিত: কী বলেন, আমি তো ভাবছি এরপরই টাঙ্গাইল স্টেশন!

জনৈক: মির্জাপুর স্টেশনে নাইমা যাইয়েন। ওখান থেকে বাসে যাইয়েন।

সাবিত পরের স্টেশনে নামতে আর ভুল করে না। মনে মনে হাসে আর নিজেকে অনেক বড় বোকা ভাবতে থাকে। দুই মিনিট হাঁটলে মহাসড়ক। ভেজা রাস্তা দিয়ে আরও দুই মিনিট হাঁটলে বাস স্টপেজ। কয়েক মিনিট দাঁড়াতেই বাস আসে। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে বাস টাঙ্গাইল পুরান বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছে যায়। ঠাসা ভিড়! ততক্ষণে জোহরের আজান পড়েছে। ঠিক দেড় ঘণ্টা আগে এখানে পৌঁছানোর কথা ছিল। অতিরিক্ত সময় লাগলেও বিশেষ কোনো প্রভাব পড়েনি। এ বাসস্ট্যান্ডে সাবিতের অনেক দিনের স্মৃতি। করোটিয়া থেকে বাসস্ট্যান্ড, বাসস্ট্যান্ড থেকে কলেজ আবার বিপরীত স্টেপে করোটিয়াতে ফিরত। অ্যাডমিশনের কোচিংয়েও এখান দিয়ে নিয়মিত আসা-যাওয়া হতো।

বাসস্ট্যান্ডে একটি ওষুধের দোকানে ব্যাগ রেখে সাবিত চা খেয়ে ক্লান্তি দূর করে। তারপর ফায়ার সার্ভিসের সামনের গলির পথ ধরে হাঁটতে থাকে কলেজের দিকে। সার্টিফিকেট উঠিয়ে কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে দেখা করে। এরপর কলেজের আঙিনায় একাকী একটু চক্কর দেয়। যদিও এ কলেজে ওর তেমন স্মৃতি নেই বললেই চলে। একজন বোকা কিসিম বালকের মতো আসত, ক্লাস করত, আর চলে যেত। তবু বেশ কয়েকজন সমমনার বন্ধু ছিল, এখনো তাদের সঙ্গে ওর ভালো বন্ধুত্ব। ওদের একেকজনের ডেডিকেশন দেখে সাবিতের ভীষণ হতাশা কাজ করত। আর এই হতাশাই ওকে স্বপ্ন দেখায় ভার্সিটি পড়ার।

কলেজ থেকে বেরিয়ে সাবিত গ্রিন মসজিদের পাশে এক পূর্বপরিচিত বড় ভাইয়ের মেসে ওঠে। কোচিংয়ের পুরো সময়টা এ মসজিদেই ওর নিয়মিত প্রার্থনা হতো। ফ্রেশ হয়ে খাবার খেয়ে সটান হয়ে শুয়ে পড়ে; এ যেন কত দিনের মহা ক্লান্তি। রুবা ও বাকিদের সঙ্গে আগে থেকেই দেখা করার স্থান ঠিক করা আছে। তিনটার সময় ওরা মিলিত হবে। এখনো ঘণ্টাখানেক দেরি।

আরাম-আয়েশ হলেও এপাশ-ওপাশ করতে করতেই তিনটা বেজে যায়। সাবিত আরও পনেরো মিনিট দেরিতে বের হয়। বাসস্ট্যান্ড থেকে এশিয়াটিক হাসপাতাল খুব বেশি দূরে নয়; অটোতে পাঁচ-সাত মিনিটের পথ মাত্র। অটোতে উঠে সাবিত এদিক-ওদিক তাকায়। একটুও পরিবর্তন হয়নি এ শহর । এক বছর পেরিয়ে গেলেও রাস্তার দুপাশের ভবন আগের মতোই। শুধু পুরোনো পোস্টারের ওপর নতুন পোস্টার দেয়ালে জায়গা করে নিয়েছে, শুধু এটুকুই। অটোতে ওঠার পরপরই রুবার ফোন।

রুবা: কই তুমি, আসো না কেন, আমরা বইসা আছি?

সাবিত: পাঁচ মিনিটের মধ্যে আসতেছি।

রুবা: আসো তাড়াতাড়ি, তোমার খবর আছে!

অটো এশিয়াটিক হসপিটালের কাছে আসতেই সাবিত থামতে বলে। হাসপাতালের পাশে টাঙ্গাইল টেক্সটাইল কলেজ। এখানেই ওরা ১২ থেকে ১৪ জন জমির ভাইয়ের কাছে ইংরেজি প্রাইভেট পড়ত অ্যাডমিশনের সময়। সামনে উঠানের মতো একটু জায়গা; আছে কংক্রিটে বাঁধানো বসার স্থান। ওখানেই বসে আছে রুবা, আতিয়া আর পিংকি।

সাবিত ইতস্ততভাবে ভেতরে প্রবেশ করে। সবার আগে নজর পড়ে রুবার দিকে। কালো মাক্সে আবৃত মুখ। চোখজোড়া স্থির-নিবন্ধ। আতিয়া আর পিংকি ওর গা ঘেঁষে পেছনে বসা।

আতিয়া: টাঙ্গাইলে স্বাগতম বন্ধু।

পিংকি: কেমন আছ বন্ধু, মেলা দিন পর টাঙ্গাইল আসলা?

সাবিত: আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি বলেই তোমাদের সঙ্গে দেখা করতে এলাম।

আতিয়া: ভার্সিটি পেয়ে আমাদের ভুলেই গেছ। এখন আর আস না।

সাবিত: বেশি এলে কদর থাকে না।

রুবা: (হেসে) ওই থাম তোরা, সাবিত আগে মিষ্টি দাও খাই।

সাবিত সকালে জমির ভাইকে জানায় পুরোনো অফিসে আসবে দেখা করতে। কিন্তু ভাই ময়মনসিংহ গেছেন কোচিংয়ে ক্লাস নিতে। ফিরবেন রাতে। দেখা হওয়ার সুযোগ নেই। তবে তাঁর ভাগনে রাসেলকে সাবিতদের কথা জানিয়ে রাখে। তিনি তাঁদের দেখে এগিয়ে আসেন।

রাসেল: আপনারা মামার স্টুডেন্টস

সাবিত: হ্যাঁ?

রাসেল: মামা আপনাদের কথা বলছে আমারে। তিনি তো নেই। চলেন ভেতরে বসবেন।

সাবিত: হ্যাঁ, আমার সঙ্গে কথা হইছে।

ওরা ভেতরে বেশিক্ষণ বসে না। ওখানে থাকতেই কোথাও যাওয়া যায় ঠিক করতে লাগে।

রুবা: চল সবাই, কোথাও যাওয়া যাক।

আতিয়া: কই যাবি?

পিংকি: পৌর উদ্যান চল।

রুবা: না, দূর হয়ে যায়। ডিসি লেকে গেলে কেমন হয়?

আতিয়া: সাবিত, তুমি কই যেতে চাও?

সাবিত: তোমরা যেখানে নিয়ে যাবে সেখানেই।

পিংকি: চল ডিসি লেকেই যাই। কাছাকাছি প্লাস নিরিবিলি জায়গা। চলবে....

*লেখক: মো. সবুজ আহমেদ, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

*আগামীকাল পড়ুন তৃতীয় পর্ব

নাগরিক সংবাদে জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই–মেইল: [email protected]