প্রথম উপহার: সম্পর্কের সূক্ষ্ম রেখা–১

অলংকরণ: আরাফাত করিম

অক্টোবরের মাঝামাঝি, ২০২২। হাতে প্রচুর সময়, একাডেমিক পড়ালেখা নেই, অ্যাডমিশনের জার্নি শেষ, বাড়িতে তেমন কাজও নেই। দুপুর গড়িয়ে সূর্য বিকেলের পথে হাঁটছে। ছিমছাম প্রকৃতি। কোথাও হই-হুল্লোড় নেই। ছেলের দল স্কুল থেকে ফিরছে সবে; এখনো খেলতে বের হয়নি। সামনের মেঠোপথে দু–একজন মানুষ নিঃশব্দে আসা-যাওয়া করছে। গোশালায় গরুগুলো শুকনো খড় চিবাতে ব্যস্ত। লাল বাছুরটা ছুটোছুটি করছে। কখনো সাবিতের গা ঘেঁষে দাঁড়ায়; শোঁ শোঁ শব্দে নিশ্বাস নেয়, কী যেন ভাবে, আবার দেয় ভোঁদৌড়, কিছুক্ষণ ওর হদিস পাওয়া যায় না। আবার ফিরে আসে মুহূর্তে।

সাবিত উঠানে আমগাছটার নিচে বসে গভীর মনে ‘যদ্যপি আমার গুরু’ বই পড়ছে। ওর পড়া এটাই আহমদ ছফার প্রথম বই। যদিও এখন তাঁর প্রবন্ধের ফ্যান হয়ে গেছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি গ্রন্থ পড়া শেষ। পড়ার ফাঁকে ফাঁকে অকারণে ফেসবুক স্ক্রলিং করেছে। হঠাৎ রুবার এসএমএস এলো; ফটো। সমরেশ মজুমদারের একসেট উপন্যাস। ফেসবুক থেকে নেওয়া; ছাড়ে বিক্রি হচ্ছে। সঙ্গে ডেলিভারি ফ্রি।

রুবা: সাবিত, বইগুলো গিফট কর।

সাবিত: এতগুলো তো সম্ভব না, যেকোনো একটা সিলেক্ট কর।

রুবা: আরে মজা করলাম, দিতে হবে না।

সাবিত: সমস্যা নেই, দিতে চাইলাম অবশ্যই দেব। কোনটা পছন্দ বল? কয়েক দিনের মধ্যে রাজশাহী যাব, ওখান থেকে পাঠিয়ে দেব।

রুবা: আচ্ছা, দিও তাহলে, তোমার পছন্দমতো। আমি কিন্তু মজা করে কইছি (হাসির ইমোজি)।

সাবিত: তোমার পছন্দ থাকলে বল।

বেশ কয়েকবার না না করা সত্ত্বেও অবশেষে ‘মেয়েরা যেমন হয়’ উপন্যাসটি নিতে সম্মত হলো। বই নিয়ে ওদের আরও অনেক কথা হয়।

রুবা বেশ সুশ্রী; হাস্যোজ্জ্বল ও বন্ধুসুলভ। যতদিন ধরে চেনা-জানা ভালো মনের অধিকারিণী বললেও মিথ্যে হবে না। বাসা টাঙ্গাইল। পড়ালেখা করছে কুমুদিনী সরকারি কলেজে অর্থনীতিতে। প্রচুর বই পড়ার নেশা। ব্যক্তিগত সংগ্রহে পছন্দের লেখকের অর্ধশত বইয়ের সমাহার ছাড়িয়ে গেছে। ওরা একসঙ্গে অ্যাডমিশন কোচিং করেছে ‘আইকন প্লাস’ টাঙ্গাইল শাখায়। তখনো কেউ কারও সঙ্গে পরিচিত হয়নি। কোচিংয়ের পাশাপাশি ওরা আলাদাভাবে ইংরেজি প্রাইভেট পড়ত কোচিংয়ের সাধারণ জ্ঞানের শিক্ষক জমির ভাইয়ের কাছে। সেখান থেকেই পরিচয়। যদিও খুব একটা যোগাযোগ হতো না টাঙ্গাইল থাকা অবধি, এমনকি বইটি গিফট করার আগপর্যন্ত।

১ নভেম্বর ক্লাস শুরু; সাবিত ২৯ অক্টোবর রাজশাহী আসে। ওঠে বিনোদপুর মন্ডলের মোড়, আরবি বিভাগের অধ্যাপক আবু বকর স্যারের বাসায়। খুবই ক্লান্ত; এমনিতেই জার্নির সময়ে সাবিত কিছু মুখে তোলে না স্যালাইন পানি ছাড়া। কিছুটা পথ হেঁটে, কিছুটা নৌকা, কখনো অটো, তারপর ট্রেন, সর্বশেষ লোকালবাস; ১০ ঘণ্টা পথ পাড়ি দিয়ে নতুন শহরে নতুন প্রত্যাশায় পদায়ন। এই লোকাল বাসটি শরীরের বারোটা বাজিয়েছে। তবু সৌভাগ্য এ শহরে আসার।

রাজশাহীতে আসার আগে থেকেই রুবার সঙ্গে নিয়মিত কথা হতে থাকে। পুরোপুরি ফ্রি না হলেও এখন ওরা অনেকটা শিথিল। আপাতত কথা হয় খোঁজখবরমূলক।

সাবিত ৩১ অক্টোবর বিকেলে শহরে যায় কিছু কেনাকাটা আর একটু ঘোরাঘুরি করবে বলে। সঙ্গে বন্ধু জাকারিয়া আর সাব্বির। সাহেব বাজার জিরো পয়েন্ট, প্রায় ৬ কিলোমিটার। তখন বিনোদপুর থেকে তালাইমারি পর্যন্ত রাস্তাটার নাজেহাল অবস্থা। অটো চলছে লক্কড়ঝক্কড় করে। সুস্থিরে বসে থাকার জো নেই। এখন প্রতিটি রাস্তাই এক-একটি দর্শনীয় স্থান। গুণে-মানে সারা দেশে অতুলনীয়। টার্কিস ল্যাম্পপোস্টে সয়লাব। আহ্! কতই–না সুন্দর এ শহর। যেন প্রেমোদয়ী এক ষোড়শী কন্যা। প্রথম নজরে পড়লে যেমন অনুভূতির উন্মেষ হয়। রাস্তায় বাহারি ফুলের বাগান। মনে হয় সাজানো ফুলসজ্জা, সন্ধ্যা নামলেই সড়কবাতিগুলো ফুলসজ্জার সৌন্দর্যকে আরও পূর্ণতা দেয়। রাস্তার কিনারা ধরে বাঁধ। ওকেও রাঙিয়ে তুলেছে বরের সঙ্গী-সাথিদের মতোই। বাঁধের ওপাশে বয়ে চলছে অবিরাম পদ্মাবতী। নির্মল বাতাসে মাতোয়ারা করে প্রেয়সীর আঙিনা।

ওরা প্রথমে রাজশাহী কলেজে যায়। উপমহাদেশের পুরাতন কলেজের মধ্যে একটি। ১৮৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত। নাম-যশ দেশব্যাপী। আঙ্গিক গঠনেও আভিজাত্যের অহংকার। একদম সাজানো গোছানো, কোনো কমতি নেই। আগাগোড়া স্বয়ংসম্পূর্ণ। এ শহরে যে একবার এল অথচ রাজশাহী কলেজ দর্শন করল না, সে হতভাগা। আফসোস থেকে যাবে নিঃসন্দেহে।

সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। পুরো বিকেল ওরা রাজশাহী কলেজ আর পাশের পদ্মা গার্ডেনে ঘোরাঘুরি করে। ফেরার পথে কোনোভাবেই বইটি না কিনে যাওয়া যাবে না। সাবিতের মনে ক্ষণে ক্ষণে ঘণ্টা বাজে। ভুলে চলে যাবে না তো বইটি না কিনেই! ভুলে গেলে চলে! উপহার বলে কথা। তাতে প্রথম কোনো উপহার, কোনো মেয়েকে দেবে।

কলেজ পেরিয়ে সামনে গলির রাস্তাটা ঘিরেই বইয়ের দোকান। সাবিত ওদের বলল ‘চলো একটা বই কেনা লাগবে।’ জাকারিয়া আর সাব্বির জানত না সাবিত কাউকে দেওয়ার জন্য বই কিনবে। ওরা গলির রাস্তা ধরে ভেতরের একটি দোকানে গিয়ে দাঁড়ায়।

অলংকরণ: আরাফাত করিম

জাকারিয়া: ভার্সিটি আইসা সারা পারলা না, ক্লাসও শুরু হয় নাই এখনই বই কেনা শুরু করলা, তোমরাই তো স্টুডেন্ট?

সাব্বির: বন্ধু আমার এখন থেকেই সিরিয়াস, বই ছাড়া কিছু বোঝে না।

জাকারিয়া: (মিষ্টি মিষ্টি হেসে) কি! বউ ছাড়া কিছু বোঝে না!

একগাল হাসির রোল পড়ে গেল। দোকানদারও না হেসে পারল না।

রুমে এসে ওরা দ্রুত নামাজ পড়ে নেয়। তখনো খালা খাবার দেয়নি। জাকারিয়া আর সাব্বির বিছানায় গড়াগড়ি দিচ্ছে আর ফোনে মগ্ন। আরেকদিকে সাবিত বইটি বের করে নেড়েচেড়ে দেখছে। দেখতে দেখতে রুবাকে এসএমএসে জানায় বই ক্রয়ের বিষয়।

সাবিত: তোমার পছন্দের বইটি নিলাম আজকে।

রুবা: ওমা, তাই?

সাবিত: হুম, এখন দ্রুত পৌঁছাতে পারলেই হয়।

রুবা: কীভাবে দিবা?

সাবিত: সেটাই ভাবতেছি। এক বন্ধু যাওয়ার কথা, নয়তো কুরিয়ার করব।

রুবা: আচ্ছা, তোমার সুবিধামতোই দিও।

রুবা উপন্যাস বেশি পছন্দ করে। যে উপন্যাসের চরিত্রে ফুটে উঠবে রোমান্টিকতা, দ্বন্দ্ব, সংগ্রাম, বেঁচে থাকার আকাঙ্ক্ষা, রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা। সাবিতের পছন্দ প্রবন্ধ, ছোটগল্প, রাজনৈতিক বই সঙ্গে রুবার পছন্দের একাংশ। প্রত্যেকের মনোজগতে পছন্দ–অপছন্দের স্থান ভিন্ন, তবে ভিন্নতার মাঝেও কিছু অভিন্নতা থাকে, যা মানুষকে ঐকতানে আবদ্ধ রাখে।

বাহির হতে খালার ডাক ‘মামা, খাবার ন্যান।’ উঠে গিয়ে জাকারিয়া খাবার এনে টেবিলে রাখতে রাখতে বলল—‘সাবিত, কী যেন বই কিনলা, নামই তো ভুলে গেলাম?’

সাবিত: মেয়েরা যেমন হয়।

জাকারিয়া: এই বই পড়ে তুমি কী করবা, নাম শুনেই তো বেডি বেডি লাগে?

সাবিত: (চিলতে হেসে) বেডি মানুষের জন্যই নিয়েছি।

জাকারিয়া: ওরে ভণ্ড, আমাদের তো কোনোদিন গিফট কর না, তলে তলে বেডি মানুষরে দেখি ঠিকই গিফট করতেছো। এই সাব্বির, দেখছ তোমার বন্ধু নষ্ট হয়ে গেছে। স্কুলে কোনোদিন বেডি মানুষের সঙ্গে কথাই বলত না। আর এখন!

সাব্বির: কী বন্ধু! ঘটনা কি সত্যি নাকি?

সাবিত হাসতে হাসতে লুটিয়ে পড়ার অবস্থা।

সাবিত: আরে, তোমরা যা ভাবছ তা না। বান্ধবী হয় মাত্র।

জাকারিয়া: বুঝি বুঝি, সব বুঝি, তোমার স্টেজ পার করেই আইছি।

সাবিত: তুমি তো পাক্কা খেলোয়াড়, বান্ধবীর সঙ্গে রিলেশন কর, তার মানে সবাই যে করে তা কিন্তু নয়।

জাকারিয়া: যাইতে দাও কয়েক দিন, দেখমু।

সাব্বির: তোমার কাছের বন্ধু হয়েও কিচ্ছু না জানা আমি!

জাকারিয়া: ভাবির বাসা কোথায়?

সাবিত: ভাবি না রে, বান্ধবী।

সাব্বির: ওইতো হলো, বাড়ি কই?

সাবিত: তোমাদের টাঙ্গাইলে।

সাবিত দুজনকে কোনোভাবে বোঝাতে পারছে না রুবার সঙ্গে কোনো বিশেষ সম্পর্ক নেই। যা আছে তা নিতান্তই বন্ধু–বান্ধবের সম্পর্ক। মানুষের মানসিকতা সন্দেহপ্রবণ। বিশেষ করে ছেলেমেয়ের ব্যাপারে। অনলাইন কিংবা অফলাইন দুজনকে কথা বলতে দেখলেই কানাঘুষা শুরু করে। ধরেই নেয় ওরা প্রেমিক-প্রেমিকা। কী অদ্ভুত! পরিচিত বন্ধু-বান্ধব একসঙ্গে দেখলে তো কথাই নেই। কোনো বাছবিচার ছাড়াই চালিয়ে দেয়া মামুলি ব্যাপার; সত্য সন্ধানের প্রয়োজন বোধ করে না।

রুবার টাঙ্গা সাবিতের সব সময় কথা হয়। ভেঙে ভেঙে সারা দিন। ফোনে মুখ গুঁজলেই কারও না কারও এসএমএস। মজার কোনো টপিক পেলেই একে অপরকে শেয়ার করে। কিছুক্ষণ হাসিঠাট্টার আমেজ চলে। শুভরাত্রি অথবা শেষ এসএমএস দেওয়ার পর আবারও চলে একমুহূর্ত। কী দরকার ওদের এত কথা বলার? হয়তো ওরা নিজেরাও জানে না। কেনই–বা এত কথোপকথন?

আজ প্রতিটি ডিপার্টমেন্টে অরিয়েন্টেশন ক্লাস। ১০টায় উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। সাবিতের বুকের ভেতর চাপা উত্তেজনা, অনেক অস্থির করে তুলছে। সাব্বির আর জাকারিয়ার অবস্থা বোঝার দরকার হলো না; সেইম। কেউ পুরো খাবার খেতে পারছিল না। গলায় আটকে যাচ্ছিল বারবার। দায়সারা খেয়ে রিকশা নিয়ে ওরা বেরিয়ে পড়ে ক্যাম্পাসের দিকে। ততক্ষণে একটু দেরি হয়ে যায়। তবে দেরি হলেও তখনো অরিয়েন্টেশন শুরু হয়নি। ঘণ্টাখানেক দেরি হয়, ডেকোরেশন পুরোপুরি শেষ না হওয়ায়।

অলংকরণ: আরাফাত করিম

অরিয়েন্টেশন ক্লাসে চেয়ারম্যান স্যারের কথাগুলো অসম্ভব সুন্দর লাগে সাবিতের। তিনি বলেন, ‘তোমরা হয়তো বেশির ভাগই দৈবক্রমে সমাজবিজ্ঞান সাবজেক্ট পেয়েছ। প্রথম প্রথম ভালো না–ও লাগতে পারে। একটা সময় যখন তোমাদের ক্যাম্পাস ছেড়ে যাওয়ার মুহূর্ত ঘনিয়ে আসবে, মনে মনে ভারাক্রান্ত হবে যদি আর কিছুদিন এখানে থেকে যেতে পারতাম। ঠিক একটি নতুন শার্ট বা জামার মতো। কেনার পরপর নানা ত্রুটি চোখে পড়ে—হাতা ঢিলা, ফিট করছে না ভালোমতো। কিন্তু কয়েক দিন গায়ে দেওয়ার পর ঠিকই ভালো লাগা কাজ করে, ত্রুটিগুলো এড়িয়ে। পুরোনো হয়ে গেলেও ফেলে দিতে মন চাইবে না।’ সাবিতের কল্পনাতেও সমাজবিজ্ঞান সাবজেক্ট ছিল না। অথচ এ বিষয়ে পড়তে হবে চার-পাঁচ বছর। যদিও সাবিত এ বিষয়ে উদ্বিগ্ন নয়।

সাবিত ক্যাম্পাস থেকে ফেরে আড়াইটায়। তার আগেই জাকারিয়া আর সাব্বির রুমে উপস্থিত। ওরা ফ্রেশ হয়ে দুপুরের খাবার শেষ হতে না হতেই যার যার মতো বিছানায় গড়াগড়ি করতে ব্যস্ত। অথচ তিন মাস আগেও কেউ কাউকে লাইনে পেত না সময়মতো; নিশ্বাসে-প্রশ্বাসে অ্যাডমিশনের পড়ালেখা। এখন সুদে-আসলে, সুযোগে সদ্ব্যবহার করছে ফোনের সঙ্গে।

সাবিতও ফ্রেশ হয়ে বিছানায় গাত্র হেলিয়ে নক দেয় রুবাকে। তখন লাইনে না থাকায় কয়েক মিনিট পরে ওর রিপ্লাই আসে।

সাবিত: রুবা, কী করছো?

রুবা: কিছু না, তুমি?

সাবিত: অরিয়েন্টেশন ক্লাস ছিল, রুমে এসে খেয়ে শুইলাম।

রুবা: বাহ্! কেমন ছিল অরিয়েন্টেশন?

সাবিত: মোটামুটি ভালো ছিল, তবে কিছুদিন পর নবীনবরণ করবে তখন অনেক সুন্দর আয়োজন করবে বলল।

রুবা: ওহ্, তাহলে তো ভালোই। তোমাদেরই সুখ, এখন ভালো দেখে একজন মেয়ের সঙ্গে রিলেশন কইরো।

সাবিত: ভার্সিটি আসলাম কেবল, আগে তো আবহাওয়া বুঝি।

রুবা: হ্যাঁ, চাপ নিও না, হয়ে যাবে।

আমাদের ধারণা ভার্সিটি এলেই বুঝি প্রেম হয় আপনাআপনি। আড্ডা, ঘোরাঘুরি খালি চিল আর চিল। অ্যাডমিশন ক্লাসে এরূপ রসালো কথা বলে মোটিভেইড করা হতো রোজ রোজ। অথচ হাজারো অভাগা মরূদ্যানে ফুল চাষে ব্যর্থ। কারও বা ছড়াছড়ি। গ্রামে গেলে কাউকে বোঝানো সম্ভব হয় না। বিশেষ করে বন্ধুদের, ওরা ধরেই নিয়েছে ভার্সিটি মানেই প্রেমের আস্তানা হয়। আসলে সবার দ্বারা প্রেম জমে না। এই কথা বোঝানো দায়।

৮ তারিখ রাবির ভর্তি বাতিল করে সাব্বির চলে যায়। ওর বাড়িও টাঙ্গাইল। সাবিতের কলেজ ফ্রেন্ড। ঢাকা–কেন্দ্রিক পড়াশোনার প্রবল টানে এ শহরে মন টেকেনি। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পাড়ি জমায়। সাবিত সাব্বিরের মাধ্যমে বইটি পাঠায়। আগে থেকেই রুবাকে সব বলা ছিল। সাবিত দুজনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে। সেদিন সকাল ৭টায় রুবার কম্পিউটার ক্লাস থাকায় অনেকটা সকালে বাসা থেকে বের হয়। এদিকে সাব্বির পৌঁছায় ১১টা ৩০ মিনিটের মধ্যে। ফলে অনেকটা সময় রুবাকে বসে থাকতে হয়। তবু অপেক্ষা করে অস্থির চিত্তে, বাসা থেকে বারবার বের হবে না তাই। অস্থিরতার বাঁধ ভাঙার আগেই সাব্বির পৌঁছায় কুমুদিনী কলেজ গেট।

দুপুরের পরপর আবারও রুবার এসএমএস।

রুবা: অনেক অনেক ধন্যবাদ, সাবিত।

সাবিত: তোমাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ, উপহার গ্রহণ করার জন্য।

রুবা: তোমাকেও একটা বই দেব।

সাবিত: আমাকে! আমি তো চাইনি?

রুবা: না চাইলে দেওয়া যায় না বুঝি?

সাবিত: অবশ্যই যায়, তা কী বই দিবা?

রুবা: দিলেই দেইখো, আগেই নাম না বলি। অনেক ভালো বই-ই দেব। নিশ্চয়ই তোমার ভালো

লাগবে। আমিও পড়ছি।

সাবিত: ঠিক আছে, অপেক্ষায় রইলাম।

রুবা: আর হ্যাঁ, কুরিয়ার ঠিকানা দিও যখন চাইব।

সাবিত খুবই উচ্ছ্বসিত। উচ্ছ্বসিত হওয়ারই কথা। ও গিফট পেতে যাচ্ছে! তাও কোনো মেয়ের থেকে। কখনো কারও কাছে এমন প্রত্যাশাও করেনি। উপহার এমন একটা জিনিস, সবাই মুখ ফুটে প্রত্যাশা করে না, তবে কেউ দিলে মন্দ লাগে না। চলবে...

রাতে সাব্বিরের ফোন। যদিও দুপুরের দিকে একটু কথা হয়। তখন সাব্বিরের ব্যস্ততার জন্য কথা শেষ না হতেই ফোন রাখতে হয়।

সাব্বির: বন্ধু, জিতছ জিতছ।

সাবিত: (অবাক হয়ে) হঠাৎ কী জিতলাম?

সাব্বির: চালিয়ে যাও বন্ধু, সেই হবে।

সাবিত: তোমাকে কেমনে বোঝাই, ওর সঙ্গে জাস্ট বন্ধু হিসেবে কথা বলি। যদি কিছু থাকত অবশ্যই তোমারে বলতাম।

সাব্বির : যেভাবে কথা কইতেছ হতে সময় লাগবে না।

সাবিত : (হাসি) বাদ দাও। শোনো, কেমন দেখতে ও?

সাব্বির : মুখ ঢাকা ছিল, যতটুকু বুঝলাম সুন্দর হবে। চলবে...

*লেখক : মো: সবুজ আহমেদ, সমাজবিজ্ঞান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

নাগরিক সংবাদে জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই–মেইল: [email protected]