বাসে নারী হেনস্তা: নারীদের আসন জরুরি প্রয়োজন
ঢাকায় প্রতিদিন অসংখ্য নারী জীবনের নানান প্রয়োজনে পথে নামেন। কিন্তু পথে নামলেই তাঁদের জন্য অপেক্ষা করে এক অদৃশ্য আতঙ্ক—হেনস্তা। পাবলিক বাসে উঠলেই যেন এই ভয় আরও বহুগুণে বেড়ে যায়। সেই ভয়, সেই ট্রমার কারণে অনেক মেয়ে আজ বাসে উঠতেই চান না। আমি নিজেও সেই তালিকায় পড়ি। প্রয়োজনে সাইকেল বা রিকশায় যাতায়াত করি, শুধু এ কারণে বাসের ভেতরে যে অস্বস্তি, অপমান ও লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়, তা সহ্য করা যায় না।
গত এক বছরে ইভ টিজিং ও নারী হেনস্তার ঘটনা মারাত্মকভাবে বেড়ে গেছে। ভুক্তভোগী প্রায় প্রতিটি মেয়েই। প্রতিদিন যাঁরা টিউশনের জন্য দূরে যাতায়াত করেন, তাঁদের প্রতিদিনই এই মানসিক যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে যেতে হয়।
কিছুদিন আগে আমি নিজেই একটি ঘটনায় জড়াই। বাসে উঠেছিলাম। আমার আশেপাশে ৬৫ বছরের এক বয়স্ক লোক বসা ছিলেন। হঠাৎ তিনি গায়ে হাত দেন। আমার অবিশ্বাস হচ্ছিল—এত বয়সী একজন লোকও কি এভাবে নারীর শরীর স্পর্শ করতে পারেন? তখন এক আন্টি প্রতিবাদ করলে লোকটি দ্রুত কিছু না বলে নেমে যান। এই ঘটনার পর থেকে আমার ভেতরে এক ধাক্কা কাজ করছে।
আমার বান্ধবী সুমাইয়া প্রতিদিন টিউশনে যান। তাঁরও বাজে অভিজ্ঞতার শেষ নেই। কয়েকদিন আগে কলাবাগানে বাসে একজন তাঁকে বেড টাচ করেন। আশেপাশের কয়েকজন মেয়ে মিলে প্রতিবাদ করলে উল্টো সুমাইয়ার পর্দাহীনতা আর গলার স্বর নিয়েই প্রশ্ন তোলেন ওই লোক। আরও ভয়ংকর ব্যাপার হলো, বাসের পুরুষ যাত্রীরা সেই লোকের পক্ষেই দাঁড়ালেন।
নারী হেনস্তার এই চিত্রে ধর্মীয় বা জাতিগত বিভাজনও জুড়ে গেছে। অন্য ধর্মের এক নারী তাঁর শিশু বাচ্চাকে নিয়ে বাসে উঠেছিলেন। তখন এক ব্যক্তি ইচ্ছা করেই পায়ে চাপা দেন এবং ধাক্কা দেন। প্রতিবাদ করলে নারীকে বলা হলো—‘উলঙ্গ হয়ে বাসে উঠছো, আবার এত বড় গলা!’
নাগরিক সংবাদে জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]
এই অভিজ্ঞতাগুলো একটাই সত্য প্রমাণ করে—পাবলিক স্পেস পুরুষের দখলে, নারীর কোনো জায়গা নেই এখানে। সমাজ যেন চাইছে মেয়েরা ঘর থেকে বের না হোক, পথ-ঘাট-বাস কোনো জায়গাতেই যেন নারীর উপস্থিতি না থাকে।
কিন্তু আমরা জানি, মেয়েরা ঘরে বসে থাকবে না। শিক্ষা, কাজ কিংবা নিত্য প্রয়োজনের জন্য মেয়েদের বের হতেই হবে। তাই এখন সময় এসেছে পাবলিক বাসে নারীদের জন্য আলাদা আসন নিশ্চিত করার। অতিদ্রুত, কার্যকরভাবে, আইন প্রয়োগের মাধ্যমে।
নারীদের আসন কেবল বসার জায়গা নয়, এটি নিরাপত্তার একটি প্রতীক। এটি নারীদের জন্য রাষ্ট্র ও সমাজের স্বীকৃতি—তাঁরা এই শহরের সমান নাগরিক। বাসে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে তাঁরা বারবার এই অদৃশ্য বাধার কাছে হেরে যাবেন, যা আমাদের আধুনিক নগরজীবন ও নারী অগ্রযাত্রার পথে বড় বাধা।
আজ প্রয়োজন সবার মিলিত দাবি—
‘বাসে নারীদের আসন চাই, নারী হেনস্তা বন্ধ হোক।’
লেখা: নুসরাত রুষা, শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, [email protected]