মেডিকেল কলেজের দিনগুলো

অলংকরণ: মাসুক হেলাল

‘এই আসফাক ডাক্তার, রুমে আছেনি?’—আনসার ভাইয়ের সুইট কণ্ঠস্বর শুনে অন্য হোস্টেলনিবাসীদের মতো আমিও লাফ দিয়ে হেলিপোর্ট হোস্টেলের দুই নম্বর রুমের দরজার সামনে দাঁড়াই। ঢাকা থেকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার দূরত্বের মেডিকেল কলেজের হোস্টেলে আনসার ভাই আমাদের পরম সুজন, ‘পত্রদূত’। ছেলেদের হেলিপোর্ট, পিন্নু, মুক্তা এবং মেয়েদের লেডিজ হোস্টেল ও ইন্টার্ন ডাক্তারদের হোস্টেলের এমন কোনো মানুষ নেই যাঁকে আনসার ভাই নামে না চেনেন! পড়ন্ত দুপুরে মাঠে ক্রিকেট খেলার মাঝেও রাস্তা থেকে জনে জনে ডাক দিয়ে চিঠি বিলান। ফার্স্ট ইয়ার হোক, ফিফথ ইয়ারই হোক, সবাই আনসার ভাইয়ের কাছে ডাক্তার।

আনসার ভাই শুধু চিঠি বিতরণই করেন না, মাসের প্রথম দিকে অনেকের মানি অর্ডার নিয়ে আসেন। তাই দুপুরে সাইকেলের ক্রিং ক্রিং আওয়াজ কানে সুধা ঢালে। প্রায়ই রুমে রুমে চিঠি বিলানোর সময় মানি অর্ডারপ্রত্যাশী টোটো ভাই সাইকেল থেকে আনসার ভাইয়ের ঝোলা নিয়ে লুকিয়ে রাখেন। আগামী দিন চিঠি অথবা মানি অর্ডার আনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ঝোলা ফেরত পান।

সকাল সাতটা থেকে যে টেনশন নিয়ে দিনের শুরু হয়, দুপুরে ক্লাস শেষে কিছুটা রিলিফ দেন আনসার ভাই। আনসার ভাইয়ের পর কলেজের বাস ড্রাইভার আজিজ ভাই দ্বিতীয় স্বস্তি নিয়ে আসেন। সাড়ে তিনটা থেকে চারটার মধ্যে মুক্তা-পিন্নু হোস্টেলের পাশের মহাসড়কে কাউসার হোটেল বরাবর মেডিকেল কলেজের লাল বাসটি অপেক্ষা করে। শহরের সুপারমার্কেট, জাহাজ কোম্পানির মোড়, আর শাপলা চত্বরে কেনাকাটা করতে ইচ্ছুক এবং অন্য বন্ধুদের ঘাড় মটকাতে ইচ্ছুক বন্ধুদের জন্য এটা স্বপ্ন-শকট। রাত আটটার দিকে শহর থেকে রওনা দেয়। গড়পড়তা সরকারি ড্রাইভারদের থেকে ব্যতিক্রম হাসিখুশি আজিজ ভাইয়ের বাস হাতে গোনা দু–চার দিন বন্ধ পেয়েছি।

অলংকরণ: আরাফাত করিম

টানটান উত্তেজনার দিনগুলোর তৃতীয় শান্তির পরশ আসে বিকেল পাঁচটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে জাতীয় পত্রিকাগুলোর আগমনে। হকার দুইতলার কমন রুমে পত্রিকাগুলো দিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই একেকজন পত্রিকার একেকটি পাতা নিয়ে গবেষণা শুরু করে। ইরাকের সাদ্দাম-বুশের উপসাগরীয় যুদ্ধ টপমোস্ট টপিক।পাঠকের সংখ্যা অগুণতি হওয়ায় এর ঘাড়ের ওপর দিয়ে ও, তার বগলের নিচ দিয়ে সে খুব কষ্ট করে পেপার পড়া শুরু করে। কিন্তু বেশ কিছু আঁতেলের যন্ত্রণায় শান্তিমতো পছন্দসই নিউজ পড়তে না পেরে কেউ কেউ ক্যারম বোর্ড, টেবিল টেনিসের ব্যাট হাতে নিয়ে মকশ করার চেষ্টা করলে হোস্টেলের খেলোয়াড় সম্প্রদায়ের অনেকেই কটূক্তি শুরু করে।

আরও পড়ুন

সন্ধ্যার পর টিভি রুম, কমন রুম, হোস্টেল ফাঁকা করে সবাই ওয়ার্ডে চলে যায় ক্লাস করতে। সারা দিন তিনতলার টিভি রুমে ডিশ অ্যান্টেনায় এমটিভিতে গান চলে। পুরো টিভি রুমে তিন-চারজন দর্শক পড়াশোনার ফাঁকে একটি সিগারেট ফুঁকতে যে সময়টুকু লাগে, ততটুকু সময় এক দুটি গান শুনে পড়াশোনা করতে চলে যায়। এর মাঝে ব্যতিক্রম সোমবার সন্ধ্যায় বিটিভির ছায়াছন্দ। গান শুরুর সঙ্গে সঙ্গে টিভির ফুল ভলিউমের সঙ্গে সহপাঠী তুখোড় আবুর হাঁক-চিৎকার, ‘জমছে রে জমছে’ শুনে এই সিঁড়ি ওই সিঁড়ি দিয়ে ঢলের মতো দর্শক-শ্রোতা টিভি রুম প্লাবিত করে। শুধু নীরব ঢল নামে ‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকের সময়।

মেডিকেল কলেজের তীব্র আতঙ্ক আর চাপের মাঝে ‘ঝাঁকের কই’ না হলে পপাত ধরণী তল। ওয়ার্ডের পড়াশোনা, আইটেম-কার্ড ফাইনাল, প্রফের যন্ত্রণায় সহপাঠীরাই হচ্ছে প্রকৃত সুহৃদ। এ ছাড়া সিনিয়র ভাই-আপারা পড়া খুব সহজে বুঝিয়ে দিতে কোনো কুণ্ঠা বোধ করেন না। এটা এমন এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, যেখানে একজন অন্যজনকে পড়াশোনা জিজ্ঞেস করলে বা বুঝতে চাইলে হাসিমুখে খুব আন্তরিকতা নিয়ে বোঝাতে শুরু করে। ‘যতই বলিবে, ততই চাপার জোর বাড়িবে’ এই মূল মন্ত্রে নিজের পড়ার তীক্ষ্ণতা বাড়াতে পারস্পরিক ডিসকাশন। নাশতা খেতে যাওয়ার সময় বা কলেজ থেকে আসার সময়, ‘বল তো অ্যানিমিয়ার কজ কী কী’ কিংবা ‘ব্রাকিয়াল প্লেক্সাস সম্বন্ধে কী জানিস’ শোনা যায়।

অলংকরণ: মাসুক হেলাল

ক্লাসে আতঙ্ক, কখন কোন স্যার বা ম্যাডাম পড়া ধরে দাঁড় করিয়ে না রাখেন! মাঝে মাঝে মুক্তি নিয়ে আসে মান্থলি ফিস্ট, অ্যানুয়াল ফিস্ট এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক-ক্রীড়া সপ্তাহের বারতা। অ্যানুয়াল ফিস্টের দুই তিন দিন পিন্নু-মুক্তা হোস্টেলের মুখোমুখি মাইকে হিন্দি/ব্যান্ডের গানের সঙ্গে সঙ্গে ওয়াজের সুরের অনুকরণে চলে বিশিষ্ট ভাষাবিদদের অপর পক্ষকে তুলোধনা। এর মাঝেই চলে শীর্ষেন্দু, সমরেশ, হুমায়ূন আহমেদের বই নিয়ে গ্রন্থকীট গ্রুপের বই বিনিময়। নতুন নতুন বইয়ের লোভে আলমের রুমে ঢুকলেই বন্ধু নজরুল চোখ দিয়ে ইশারা করে আলমকে ‘মিয়া’ বলে ডাকতে। মাঝেমধ্যে তাদের অপর রুমমেট চৌধুরী ‘গম আছো নি’ বলে সাদর সম্ভাষণ করে। পাল্টাপাল্টি-‘তোমাদের খবর কি মিয়া’ বলার সঙ্গে সঙ্গে আলম তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে বলে ‘বক্সিং দিয়ে দাঁত ফেলে দেব’! আক্কেল গুড়ুম আমি আরও অবাক হই টকটকে ফরসা নজরুলের অট্টহাস্য দেখে। প্রাণ উজাড় করা হাসিতে গড়াগড়ি খায় সজ্জন নজরুল। অনেক চেষ্টা করে চৌধুরীর কাছ থেকে জানতে পারি, চাটগাঁইয়া ভাষায় ‘মিয়া’ মানে দুলাভাই বা নতুন জামাই!

সার্বক্ষণিক রাজনৈতিক কর্মী ও পার্টটাইম ছাত্র হিরণকে দেখলে দুই কারণে বুকের ধড়ফড়ানি বেড়ে যায়। হয় রাজনৈতিক দাওয়াত কিংবা জটিল কোনো কোশ্চেনের উত্তরপ্রত্যাশী হিরণ। হারপার, হাচিসন, লিপিংকট, গ্যানন-গুলে খাওয়া হিরণের অনেক প্রশ্ন মাথার রাডারের ওপর দিয়ে চলে যায়। আফসোস হয় এত মেধাবী মানুষটির জন্য।

হেলিপোর্ট হোস্টেলে ডাইনিং রুমের কাছাকাছি রুম হওয়ায়, রান্নাঘরে কুক হক ভাইয়ের অনেক তৎপরতা টের পাই। একদিন রুমমেট জাহিদ ডেকে নিয়ে দেখায় হক ভাইয়ের কেরামতি! তরকারির ঝোলের ঘনত্ব বাড়ানোর জন্য ভাতের মাড়, মিষ্টিকুমড়াবাটা ইত্যাদি অনুষঙ্গ অ্যাড করেন হক ভাই!

প্রথম বর্ষে শুরুর তীব্র প্যানিকের দিনগুলোতে মূর্তিমান বিভীষিকা ডিসেকশন রুমের ফরমালিনের ট্যাংক ও সিমেন্টের টেবিলগুলো। প্রথম দিকে ডিসেকশন রুমে ভয়ে চোখের সমান্তরালে না তাকিয়ে ছাদের দিকে তাকিয়ে থাকার অভ্যাস লেকচারার আলমগীর স্যার হাতে বেতিয়ে ও মুখে ধমকিয়ে তাড়ান। অ্যানাটমি ডিপার্টমেন্টের আশপাশের করিডরে সব সময় ১৪৪ ধারা থাকে। প্রবাদতুল্য শিক্ষক অধ্যাপক শহিদুল্লাহ্ স্যারের ছায়া দেখলেই করিডর থেকে ডানে–বাঁয়ে যেদিকে পালানোর ব্যবস্থা আছে, সেদিকেই ছাত্ররা পালিয়ে যেত।

ফার্স্ট ইয়ারের তীব্র ভীতির দিনগুলোতে কলেজের তৃতীয় তলার ফিজিওলজি ও বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগে যাতায়াত কিছুটা শান্তি নিয়ে আসে। অতি দুষ্টু প্রকৃতির সহপাঠীদের কেউ কেউ অধ্যাপক মজিদ স্যারের রুমের ফ্রিজ খুলে ঠান্ডা পানি দিয়ে গলা ভেজায়, লেবুর টুকরা পেলে শরবত বানানোর চেষ্টা করে, দু–একজন চা বানানোর কনডেন্সড মিল্কের কৌটা চুমুক দিয়ে সাবাড় করে দেয়। লেকচার গ্যালারিতে কলেজের প্রিন্সিপাল ও ফিজিওলজি বিভাগের প্রধান ছাত্র–অন্তঃপ্রাণ মজিদ স্যার মাঝেমধ্যে আক্ষেপ করে বলেন, ‘তোদের জন্য প্রায় প্রতিদিনই আমাকে কনডেন্সড মিল্ক কিনতে হচ্ছে; লেবু চা-আদা চায়ের ব্যবস্থাও রাখছিস না। আমি জানি, এটা তোদের ক্লাসের কারা করে।’

বিভিন্ন মত ও পথের অনুসারী ছাত্রদের সারা দিনের কর্মকাণ্ড যা–ই হোক না কেন, রাত বারোটা-সাড়ে বারোটায় মুক্তা-পিন্নু হোস্টেল থেকে ‘ওই চা খাইতে যাবি’ ডাক শুনলেই সুড়সুড় করে বের হয়ে আসে ১০–১২ জন সহপাঠী। রাত জেগে পড়াশোনার রসদ সংগ্রহে হোস্টেলের বিশাল মাঠ আড়াআড়ি ক্রস করে হসপিটালের গেটের পাশে হোটেলে গরম গরম ডিম-পরোটা-চা খেয়ে ফজর পর্যন্ত রিচার্জ নেয়। তীব্র শীতের মৌসুমে চা–প্রত্যাশী দু–একজন বন্ধু লেপকে গায়ে চাদরের মতো করে ফেলে তাল মিলায়। এই চা-নাশতা খাবার পথে মাঝে মাঝে শিক্ষকদের কোয়ার্টারের আশপাশের ডাবগাছ, আমগাছগুলোর নিচে মাথায় গামছা বাঁধা-লুঙ্গি কাছা মারা লোকজনকে দেখলে ধাওয়া দিতে গিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। ‘সেম সাইড’! সিনিয়ার-ইয়ারমেটদের অনেকে ‘যে স্যার যত বেশি কড়া, ওনার গাছের ডাব তত বেশি মিষ্টি’—এ নীতিতে গাছ সাবাড় করে।

চিকিৎসক
প্রতীকী ছবি

প্রফেশনাল পরীক্ষার দিনগুলোতে মনে হয় ‘কেন ডাক্তারি করতে আইলাম!’ চারদিকে অন্ধকার। এর মাঝে বেজ অব দা স্কাল নিয়ে হাতে গোনার তার দিয়ে ফোরামিনা-ক্যানাল বের করে আশপাশের রুমের সহপাঠী মাথা আউলিয়ে দেয়। বলে, ‘এদিক দিয়ে কী যায়? কোর্স বল।’ দম মনে হয় নাকের ডগায় এসে পড়ে। পরীক্ষার সময় কিউরেটার, লেকচারার কিংবা ওয়ার্ডের সিএ, ইন্টার্ন ডাক্তাররা হাত ধরে ধরে বিভিন্ন বোর্ডে দিয়ে আসে।

প্রতিবেশী রুমমেট রুবেলের একটানা ৩২ থেকে ৩৬ ঘণ্টা পড়াশোনার টেস্ট ম্যাচ শেষে পরীক্ষা দিতে যাওয়া দেখলে বুকে থর হরিকম্প শুরু হয়। না ঘুমিয়ে শুধু খাবার, নামাজ, টয়লেটে যাওয়া ছাড়া টেবিলে বসে একটার পর একটা রেফারেন্স বইয়ের পাতা নীরবে উল্টে যাওয়া রুবেলকে দেখলে ভয় জাগে। হাতের ননস্টপ সিগারেটের উচ্ছিষ্টের পাহাড় জমে ডানোর ছোট কৌটায়। পরীক্ষাগুলো মাথা ঠান্ডা করে অ্যাটেইন করে একটানে পাশ করে যাওয়াটা সত্যিই বিস্ময়কর।

কদিন ধরে স্পাইডারম্যান চোরের যন্ত্রণায় বারান্দায় লুঙ্গি, গেঞ্জি, প্যান্ট, শার্ট ঝুলিয়ে রাখার জো নেই। এক চোর দুটি হোস্টেলের পেছন দিকের পাইপ বেয়ে ওপরে উঠে আসে। প্রায়ই ভোরের দিকে আলগোছে কাপড়চোপড় নিয়ে গায়েব হয়ে যায়। বেশ কয়বার বিভিন্ন বারান্দায় তাকে দেখতে পেলেও তার অ্যাক্রোবেটিক নৈপুণ্যের কাছে ছাত্ররা ফেল। শেষ পর্যন্ত এক রাতে চোর ধাওয়া খেয়ে পেছন দিকের গ্রামে পালাতে না পেরে সামনের মাঠে দৌড় দেয়। দুই হোস্টেলের শত শত ছাত্র যেমন অবস্থায় ঘুম থেকে উঠেছে, সেভাবেই হাতে টর্চ-বেত নিয়ে চোর পাকড়াতে নেমে যায়। ধূর্ত চোর মাঠের এক কোণে বড় বড় ঘাসের মাঝে লুকিয়ে থাকে। এক ফাঁকে ছাত্রদের সঙ্গে মিশে মেডিকেলের পূর্ব গেটের দিকে এগোতে থাকে। হঠাৎ সামনের দিকে হল্লা শুনে সবাই দেখতে পায় চোর জানে-পরাণে দৌড়ে পালাচ্ছে। চোরের ওপর যত না রাগ তার চেয়ে তাকে দৌড়ানি দিতে পারাতেই সবার আনন্দ।

হোস্টেল মানে কোনো ব্যক্তিগত সম্পদ থাকবে না, সবই সর্বজনীন। একা একা ড্রাই কেক খাওয়া যাবে না, একা একা আচার খাওয়া যাবে না, একা একা পারফিউম মাখা যাবে না, রোগীর পরীক্ষার জন্য টর্চ একা ব্যবহার করা যাবে না! বেলাইন হলেই দেয়াল আলমারির তালা বিশেষ উপায়ে খুলে ব্লকসুদ্ধ সবাইকে ইন্সট্যান্ট দাওয়াত দিয়ে আচার-ড্রাই কেক সাবড়ে বয়াম-টিনের কৌটায় বিচি-শর্ট বোনস রেখে দেওয়াটা ডালভাত। পারফিউম রুম ও আশপাশের রুমের শার্ট, প্যান্ট, গামছা, আন্ডারওয়্যারে স্প্রে শেষে পরবর্তী ঝামেলা থেকে বাঁচতে আশপাশের নেতাগোছের বড় ভাইদের রুমালে সযত্নে মেখে দেওয়া হয়। টর্চ না দিলে তালা খুলে শুধু টর্চটা জ্বালিয়ে রাখলেই হলো—সন্ধ্যার মধ্যে টর্চের ব্যাটারি থেকে পানি বের হয়ে যায়। কাউকে চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলা যাবে না ‘ম্যালেরিয়ার যমতিতা কুইনাইন চাবাইয়া খেতে পারবি?’ বিরিয়ানি খাওয়ার লোভে বন্ধুদের সহযোগিতায় চ্যালেঞ্জগ্রহীতা এন্টাসিড ট্যাবলেট চিবিয়ে স্টুডেন্ট কেবিনে গলা ধরে কিছুক্ষণ বিছানায় গড়াগড়ি দিয়ে অভিনয় করলেই চ্যালেঞ্জদাতার মন নরম হয়ে যায়। চ্যালেঞ্জার পয়সা পেয়ে বন্ধুদের নিয়ে মৌবনে বিরিয়ানির খেতে চলে যায়।

মনের দুঃখে কিংবা পড়ার চাপে একজন কয়টি সিডিল ট্যাবলেট খেয়ে ফেলে। স্টমাক ওয়াশ দেওয়ার পর স্টুডেন্ট কেবিনে প্রফেসর নাগ স্যার এসে ওই স্টুডেন্টকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন—‘ডায়াজিপামের লেথাল ডোজ কত, তুই কয়টা খেয়েছিস?’ মরার জন্য দুই তিনটা ট্যাবলেট খেয়েছে শুনে স্যার খেপে যান, ‘পড়াশোনাটা ঠিকমতো করলে তো জানতে পারতি, কয়টা খেলে মরতে হয়!’ ইন্টার্ন ডাক্তার রাতে তার ডায়েট কি হবে জানতে চাইলে, ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে যাওয়ার মুখে স্যার বলেন, ‘গু’।

ফাইনাল প্রফের আগে একটানা চরম চাপে হঠাৎ করে উপশম নিয়ে আসে বন্ধু মামুন ভাই সাহেবের দাওয়াত। ওর অতি সজ্জন, ভদ্রলোক রুমমেটের সার্জারি ‘বেইলি অ্যান্ড লাভ’ বইটি কিছু দুষ্টু বন্ধু গায়েব করে কেক-বিস্কুট খাবার জন্য ওয়াদা করায়। রাত ১০টায় কথিত জন্মদিনের পার্টিতে তাদের রুমে গিয়ে দেখি এলাহী কারবার। ব্যবহৃত বলপেন, ভাঙা ওয়ান টাইম রেজার, বারান্দার টবের সন্ধ্যা-মালতী ফুলসহ অভূতপূর্ব, অশ্রুতপূর্ব, অদৃষ্টপূর্ব সব গিফট নিয়ে আমাদের ফাইনাল প্রফের পরীক্ষার্থী বন্ধুরা হাজির হয়। নিমেষেই একটানা সব চাপ থেকে মুক্ত হয়ে সবাই অনেক দিন পর হাসি–গল্পে মেতে উঠি।

*লেখক: আসফাক বীন রহমান, সহকারী অধ্যাপক, শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ, গাজীপুর

**নাগরিক সংবাদে ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল অ্যাড্রেস [email protected]