সরকারি আজিজুল হক কলেজের ৮৪তম জন্মদিন

উত্তরাঞ্চলের অন্যতম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারি আজিজুল হক কলেজের ৮৪তম জন্মদিন ছিল গতকাল রোববার। ১৯৩৯ সালের ৯ জুলাই প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান আয়তন ৬৩ একর। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন বাংলায় প্রথম সম্মান কোর্স চালু করেছিল বগুড়ার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ ছিলেন ড. এম এম মুখার্জি ও উপাধ্যক্ষ ছিলেন শ্রী এস পি সেন।

অবিভক্ত বাংলার বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব স্যার মুহাম্মদ আজিজুল হকের নামে এ প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করা হয়। তখন তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন। ১৯৬৮ সালের ১৫ এপ্রিল কলেজটি সরকারীকরণ করা হয়। এ প্রতিষ্ঠানে অধ্যক্ষ ছিলেন প্রখ্যাত ভাষাবিজ্ঞানী ও সাহিত্যিক ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ এবং সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলী। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধে এ কলেজের বেশ কয়েকজন ছাত্র শহীদ হন। কলেজের শিক্ষকদের মধ্যে ছিলেন সাহিত্যিক শাহেদ আলী ও কবি আতাউর রহমান। শিক্ষার্থীদের তালিকায় আছেন কণ্ঠশিল্পী শওকত হায়াত খান, কবি মহাদেব সাহা, ভাষাসৈনিক গাজীউল হক, বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক ড. আনোয়ার হোসেন, জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক ড. এনামুল হক, শিক্ষক মমতাজুর রহমান তরফদার প্রমুখ।

বর্তমানে সরকারি আজিজুল হক কলেজে প্রায় ২৫ হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা করেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির দুটি ক্যাম্পাস চালু রয়েছে। যার একটি ক্যাম্পাস ফুলবাড়ীতে, অন্যটি কামারগাড়িতে। শিক্ষার্থীদের আবাসনব্যবস্থার জন্য রয়েছে পাঁচটি হল, যার মধ্যে শহীদ আকতার আলী মুন, শের-ই বাংলা ও শহীদ তিতুমীর হল ২০০৯ সাল থেকে বন্ধ আছে। চালু আছে বেগম রোকেয়া হল ও ফখরুদ্দিন আহমদ হল।

গত বছরের ২৩ অক্টোবর ‘দ্য ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউনট্যান্টস অব বাংলাদেশের’(আইসিএমএবি) কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (সিএমএ) কোর্স চালুর জন্য সমঝোতা স্বাক্ষর ছাড়াও নতুন আরেকটি ভবনে ১৯টি নতুন অনার্স কোর্স চালুরও প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

শিক্ষার মান ধরে রাখায় প্রতিষ্ঠানটি উত্তরবঙ্গের অন্যতম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।

উচ্চমাধ্যমিকে ভালো ফলাফল ছাড়াও অ্যাডমিশন রেজাল্টে প্রতিবছর এগিয়ে থাকে। ২০১৬ সালে কলেজ র‌্যাঙ্কিংয়ে জাতীয় পর্যায়ে পঞ্চম স্থান এবং ২০১৮ সালে তৃতীয় স্থান অধিকার করে আজিজুল হক কলেজ।

আরও পড়ুন

২৩টি বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স কোর্সের পাশাপাশি বিএসসি, বিএ, বিএসএস ও বিকম কোর্স চালু আছে।

এ ছাড়া রয়েছে বিএনসিসি, রোভার, স্কাউট, রক্তদাতা সংগঠন বাঁধন, কলেজ থিয়েটার, পরিবেশবাদী সংগঠন তীর, রেড ক্রিসেন্ট, পুণ্ড্র ডিবেটিং ক্লাবের মতো সংগঠন। যার মধ্যে তীর—শিক্ষার্থীদের পরিবেশবাদী সংগঠনটি ২০২১ সালে বন্য প্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণে কাজ করায় জাতীয় পদক লাভ করে।

উচ্চমাধ্যমিকে বোর্ডের মেধাতালিকায় প্রতিবছরই এই কলেজ স্থান লাভ করে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাক্রমেও প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় স্থানসহ প্রতিটি বিষয়ে এ কলেজের স্থান রয়েছে। মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য সরকারি বৃত্তি ছাড়াও কলেজ থেকে মেধাবী ও দরিদ্র শিক্ষার্থীদের মধ্যে আর্থিক সাহায্য দেওয়া হয়।

এ ছাড়া হাবিবুর রহমান মেমোরিয়াল স্কলারশিপ ফান্ড ও রইস উদ্দীন খাতেমুন্নেছা বৃত্তি নামক দুটি বৃত্তির ব্যবস্থা রয়েছে।

কলেজের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী প্রসঙ্গে অধ্যক্ষ শাহজাহান আলী বলেন, সরকারি আজিজুল হক কলেজ বরাবরই শিক্ষার মান ধরে রাখতে বদ্ধপরিকর। কলেজের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতেও একটি ফুলের বাগান ও বোটানিক্যাল গার্ডেন নির্মাণ করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের কথা ভেবে রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইতিহাস, ব্যবস্থাপনা ও হিসাববিজ্ঞান বিভাগের ৪টি ক্লাসরুমে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত যন্ত্র লাগানো ও টাইলস লাগানো হয়েছে। ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে উচ্চমাধ্যমিকে ২৪০ জন শিক্ষার্থী বুয়েট-ঢাবি-মেডিকেলে চান্স পেয়েছেন। এ ছাড়া প্রতিবছর বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট থেকে বিসিএস ক্যাডার ও সাব-ইন্সপেক্টর পদে নিয়োগ লাভ করে।

কলেজের সাফল্য ধরে রাখার ক্ষেত্রে শিক্ষকদের অবদানের কথা উল্লেখ করে অধ্যক্ষ আরও বলেন, ‘আমাদের শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের প্রতি অনেক আন্তরিক। শিক্ষকেরা তাঁদের সর্বোচ্চ চেষ্টার মাধ্যমে কলেজের সুনাম অক্ষুণ্ন রাখতে কাজ করে যাচ্ছেন। ভবিষ্যতে প্রতিষ্ঠানটি আরও এগিয়ে যাবে।’

  • লেখক: সাব্বির আহমেদ সাকিল, বগুড়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, প্রথম আলো বগুড়া বন্ধুসভা