৭১ পয়সার কপালপোড়া কৃষকেরা
ফুলতলা গ্রামের কামরুজ্জামান একজন লেবুচাষি। এ বছর ৪০ কাঠা জমিতে কলম্বো জাতের লেবু আবাদ করে গাছে ফল আসার আগপর্যন্ত পরিচর্যা বাবদ তাঁর খরচ হয়েছে প্রায় ৮ লাখ টাকা এবং তিনি এখন পর্যন্ত বিক্রি করতে পেরেছেন ৬ লাখ টাকার লেবু। লেবু চাষ করে লাভবান হওয়া তো দূরের কথা, আদৌ পুঁজি উঠবে কি না, তা নিয়ে চিন্তিত কৃষক কামরুজ্জামান। কেননা, বর্তমানে বাজারে কামরুজ্জামানের মতো শত শত কৃষক প্রতি হালি লেবু ‘৭১ পয়সা’ বিক্রি করে ঘরে ফিরছেন। তাই কামরুজ্জামান হেসে হেসে বলেন, ‘আমরা হইলাম ৭১ পয়সার কপালপোড়া কৃষক।’
এক হালি লেবুর দাম ৭১ পয়সা শুনে অনেকে হয়তো বলতে পারেন, লোকটা পাগল হয়ে গেছে। কেননা, গতকালও রাজধানীর কারওয়ান বাজার থেকে ১০–১২ টাকা হালি লেবু কিনে বাসায় ফিরেছেন কেউ কেউ। আর সেখানে ৭১ পয়সা হালি লেবুর দাম বললে পাগল ছাড়া আর কী বলবে লোকে। আসলে ফুলবাড়িয়ার লেবুচাষিদের কপালটা এ বছর ৭১ পয়সার। অন্যদিকে মহাজনের ঋণের বোঝা, এনজিওর লোন ও সার–কীটনাশকের দোকানে বাকি এখন পর্যন্ত পরিশোধ করতে না পারায় চরম বিপাকে লেবুচাষিরা।
মূল বিষয়টি ফুলতলা গ্রামের লেবুচাষি কামরুজ্জামানের কাছে জানা গেল। কামরুজ্জামানের ভাষ্য, একজন কৃষক তাঁর আবাদ করা এক বস্তা লেবু হাটে এনে দাম পান সর্বোচ্চ ৮০০ টাকা। ১ বস্তায় লেবু থাকে কমপক্ষে ১ হাজার ৪০০টি। ১ হাজার ৪০০ লেবু (৩৫০ হালি) ৮০০ টাকা বিক্রি করা গেলে প্রতি হালি লেবুর দাম আসে ২ টাকা ২৯ পয়সা।
এক বস্তা লেবু কৃষকের হাটে আনতে খরচের ফিরিস্তিও বড়। ১ হাজার ৪০০ লেবু বাগান থেকে তুলে বস্তায় ভরতে শ্রমিকের মজুরি দিতে হয় প্রায় ৩৫০ টাকা। মাটির রাস্তা পেরিয়ে বাজারে সেই লেবুর বস্তা নিতে ভ্যানের ভাড়া দিতে হয় ১৫০ টাকা। একটি পাটের বস্তার দাম কমপক্ষে ৫০ টাকা। সব মিলিয়ে লেবু বাজার বা হাটে আনতে কৃষকের কম করে হলেও খরচ হচ্ছে ৫৫০ টাকা। ১ হাজার ৪০০ লেবু বিক্রির ৮০০ টাকা থেকে কৃষকের ৫৫০ টাকা খরচ বাদ দিলে, পকেটে যাচ্ছে মাত্র ২৫০ টাকা। আর সেই ২৫০ টাকায় ১ হাজার ৪০০ লেবুর দাম হিসাব করলে প্রতিটি লেবুর দাম আসে মাত্র ৭১ পয়সা।
এতে দেখা যায়, দিন শেষে কামরুজ্জামানের মতো লেবুচাষিরা তাঁদের আবাদ করা জমির লেবু হালি ৭১ পয়সায় বিক্রির টাকা পকেটে পুরে মলিন মুখে বাড়ি ফেরেন। কারও ভাগ্যে আবার তা–ও জোটে না, কখনো–সখনো আম–ছালা দুই–ই যায়।
*লেবুর দাম কমে যাওয়ায় সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছেন কৃষকেরা
*বিদেশেও রপ্তানি হয় এনায়েতপুরের লেবু
*রাস্তাঘাট সংস্কারসহ বাজার তদারকির তাগিদ চাষিদের
এতক্ষণ বলছিলাম ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার পাইকারি লেবুর হাট এনায়েতপুরের কথা। শুধু এনায়েতপুর বললে ভুল হবে, ফুলবাড়িয়ার উপজেলার প্রায় সব গ্রামে কমবেশি লেবুর আবাদ হয়। বলা হয়ে থাকে, দেশের ভিটামিন সির অভাব বা ঘাটতি পূরণে লেবুর জুড়ি মেলাভার। আর সেই লেবুর একটি বড় অংশের চাহিদার জোগান আসে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার প্রান্তিক লেবুচাষিদের আবাদ করা জমির লেবু থেকে। এবার ভালো ফলনেও দরপতন, তাই হতাশ ফুলবাড়িয়ার লেবুচাষিরা। অন্যদিকে লেবুর দাম নেমে আসার পর তা থেকে খরচ বাদ দিলে আর কিছুই থাকে না কৃষকের। হাটের ইজারাদার মোশাররফ হোসেন জানান, এ লেবুর হাটে হাটবারে প্রায় কোটি টাকার লেবু বিক্রি হয়। তবে এবার লেবুর দাম আকস্মিক কমে যাওয়ায় বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না বলে আশঙ্কা করছেন ইজারাদার।
মোশাররফ হোসেন বলেন, ফুলবাড়িয়ায় একমাত্র লেবুর হাট এনায়েতপুর হাট। এ হাটে আশপাশের ৫ থেকে ৭টি ইউনিয়নের লেবুচাষিরা লেবু বিক্রি করতে আসেন।
গোপীনাথপুর, ফুলতলা, তালতলা, কৃষ্ণপুর এলাকার রাস্তাঘাট প্রচণ্ড খারাপ। এ এলাকার কৃষকদের লেবু হাটে বিক্রি করলে শেষে আর কিছুই থাকে না। তাই অন্ততপক্ষে সরকার যদি লেবু চাষের কথা চিন্তা করে রাস্তাঘাটের উন্নয়ন এবং বেশ কিছু শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে, লেবু যাতে কাজে লাগানো যায়, পচে না যায়, তাহলে কৃষকেরা তাঁদের ন্যায্যমূল্য পাবেন, অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবেন।
এ বছর ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার চাষিরা লেবুর ব্যাপক আবাদ করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার উপজেলায় লেবুর ফলনও হয়েছে ভালো। লেবুর হাট এনায়েতপুরে বিভিন্ন জেলা থেকে এবং রাজধানী বিভিন্ন জায়গা থেকে পাইকারেরা আসেন। লেবুর দাম কম হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন চাষিরা। অথচ অন্য বিভাগীয় জেলা কিংবা উপজেলা শহরে ১০ থেকে ১৫ টাকা হালি লেবু বিক্রি হলেও প্রান্তিক পর্যায়ে চাষিরা তাঁর ফসলের ন্যায্যমূল্য তো দূরের কথা, নামমাত্র দামও জুটছে না তাঁদের কপালে। বাজার ব্যবস্থাপনায় সংশ্লিষ্ট কৃষি বিপণনকেন্দ্রের তদারকির করার কথা থাকলেও তারা তা করছে না বলে জানান কৃষকেরা। ফলে বাজারে কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকায় কতিপয় সিন্ডিকেট চক্রের ফাঁদে পড়ে দিন দিন অর্থনৈতিকভাবে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেন কৃষকেরা।
উপজেলার একমাত্র লেবুর হাট এনায়েতপুরে গিয়ে দেখা গেছে, হাটে প্রচুর পরিমাণে লেবুর আমদানি। পানির দরে বিক্রি হচ্ছে লেবু। আমদানির তুলনায় পাইকারদের চাহিদা কম থাকায় লেবুর ভালো দাম পাচ্ছেন না প্রান্তিক চাষিরা।
এনায়েতপুর লেবুর হাটে কথা হলেসাগরদীঘি ইউনিয়নের লেবুচাষি জয়নাল আবেদিন, কালাদহ ইউনিয়নের চান মিয়া, এনায়েতপুর ইউনিয়নের সমসের আলীসহ অনেক চাষিই জানান, এক বস্তায় (প্রায় ১ হাজার ৪০০) লেবু বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকায়। প্রতি বস্তা কৃষকদের খরচ হচ্ছে ৫৫০ টাকা। এক পাখি (৫৬ শতাংশ) জমির লেবু বিক্রি করে খরচ বাদে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা রোজগার হলেও এ বছর লেবুর দাম কম। উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে ৫০০ পাখির অধিক জমিতে বাণিজ্যিকভাবে লেবুর চাষ হয়। প্রথম দিকে চাহিদা থাকায় ভালো দাম পেলেও বর্তমানে লেবুর দাম একেবারেই কম।
তাঁরা বলেন, ‘মাঠে এক পাখি জমি লিজ গ্রহণ করতে জমিমালিকদের এককালীন দুই বছরের টাকা দিতে হয়। আমাদের এলাকায় পাখিপ্রতি জমির লিজ বাবদ মালিকেরা ৩০ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা নিয়ে থাকেন। পরবর্তী সময়ে জমি পরিপাটি করতে হয়, শেষে চারা রোপণ করতেও অনেক খরচের সম্মুখীন হতে হয়। এরপর লেবুর সঠিক দাম না পেলে উৎপাদন খরচ উঠবে না। ফলে আমাদের অনেক বড় লোকসানে পড়তে হবে।’ কৃষিঋণের পাশাপাশি কৃষিতে ভর্তুকি দেওয়ার কথা বলেন প্রান্তিক চাষিরা।
এ ছাড়া এনায়েতপুর ইউনিয়নের আবদুল মোতালেব, হেলাল উদ্দিন ও আবদুস সালামের অভিযোগ, ‘কদিন আগেও লেবুর বাজার ভালো ছিল। হঠাৎ বাজার কমে গেছে। আজ যে লেবু বেচেছি, তাতে ভ্যান ভাড়ার টাকা উঠবে না। সরকারের কাছে আমরা ঋণসহায়তা চাই, ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের কৃষিতে ভর্তুকি চাই।’
এনায়েতপুর হাটের লেবু ব্যবসায়ী মোতালেব, আলাল উদ্দিন, শাফিক ইসলাম ও মোশারফ হোসেন বলেন, ‘প্রতিবছর এ অঞ্চল থেকে লেবু পার্শ্ববর্তী জেলা সিলেট, টাঙ্গাইল, বরিশাল, খুলনাসহ রাজধানী ঢাকায় রপ্তানি হলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে আগের বছরের মতো বাজারজাত করা সম্ভব হচ্ছে না। লেবুর চাহিদা কম থাকায় আমরা বেশি লেবু ক্রয় করছি না। বাজারে চাহিদার তুলনায় লেবুর আমদানি বেশি থাকায় কম দামে কিনতে পারছি। আমাদের পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে। এখানে কোনো সিন্ডিকেট নেই।’
দেশব্যাপী করোনাভাইরাসের বিরূপ প্রভাবে এবং থেমে থেমে বিধিনিষেধের জাঁতাকলে এবার লেবুর বাজারে চরম দরপতনের প্রভাব পড়েছে বলে অভিযোগ ক্রেতা-বিক্রেতাদের। যে কৃষক পাথরের মতো কঠিন মাটির বুক চিড়ে নিজের ভাগ্যকে রোপণ করে এসেছিলেন দিনবদলের আশায়, আজ সেই ঘামঝরা কৃষকের ফলন হাটে মাত্র ৭১ পয়সায় বিক্রির টাকা নিয়ে ফিরতে হচ্ছে।
ফুলবাড়িয়া উপজেলার অধিকাংশ মৌসুমি সবজি ও ফলচাষিরা বেসরকারি সংস্থা থেকে চড়া সুদে ঋণের টাকায় সবজি উৎপাদন করেন। ফলে এখন তাঁরা চরম বিপাকে পড়েছেন। এভাবে বাজারদর চলতে থাকলে সামনের মৌসুমে লেবুর চাষাবাদ কৃষক আদৌ করবেন কি না, তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাংলাদেশের মানুষ ভিটামিন সির অভাব পূরণের জন্য যে লেবু খাবার হিসেবে খায়, তার প্রায় ৪০ শতাংশই ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার এনায়েতপুর ইউনিয়নে চাষ হয়। তবে রাঙ্গামাটিয়া, কালাদহ, নাওগাঁও, পুঁটিজানা, ভবানীপুরসহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে ছড়িয়ে পড়েছে লেবুর আবাদ।
বিগত সময়ে কলম্বো জাতের লেবু চাষে ভালো লাভ হওয়ায় এ লেবুর চাষ হয় বেশি। পাশাপাশি সিডলেস ও কাগজিলেবুর আবাদও হয়। উপজেলার সব লেবুচাষির একই অবস্থা লক্ষ করা গেছে। করোনার প্রভাবে বিধিনিষেধ থাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকার না আসা, সবজি কিংবা লেবু উৎপাদন করা ইউনিয়নগুলোতে মাটির কাঁচা রাস্তা থাকায় যথাযথ পরিবহনব্যবস্থার অভাব, পর্যাপ্ত সার–কীটনাশকের ঘাটতি, কৃষিবিষয়ক পরামর্শের অভাবের কারণে কৃষিতে চরমভাবে প্রতিবছরই লোকসান গুনতে হয় এ উপজেলার কৃষকদের।
এ ছাড়া রাস্তাঘাটে এখনো অনেক সমস্যা রয়েছে। কৃষক তাঁর প্রয়োজনীয় ইউরিয়া সার ও কীটনাশক সময়মতো পান না, এ নিয়ে কৃষি বিভাগে অভিযোগ করেও সুফল পান না বলে অভিযোগ কৃষকদের। করোনার সময় কৃষককে আম, লিচু, কলা, লেবুসহ মৌসুমি সবজি বিক্রি করতে বিপাকে পড়তে হয়। তাই সরকারের কাছে প্রান্তিক লেবুচাষিদের চাওয়া, কৃষক যেন তাঁর আবাদ করা ফসলের দামটা পান, তার পণ্যগুলো যেন সিন্ডিকেটের কবলে না পড়ে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে, সে ব্যবস্থা সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের পক্ষ থেকে যেন করা হয়।
উপজেলার রাঙ্গামাটিয়া ইউনিয়নের পাহাড় অনন্তপুর, এনায়েতপুর ইউনিয়নের গোপীনাথপুর, ফুলতলা, বাক্তা ইউনিয়নের নিশ্চিন্তপুর, শ্রীপুর, কালাদহ ইউনিয়ন এবং পুঁটিজানা ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, লেবুর বাজার কমে চরম বিপাকে কৃষকেরা। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন স্থানীয় বাজারে বিধিনিষেধ থাকায় কৃষক তাঁর আবাদ করা লেবু নিতে পারেননি, পাশাপাশি বাজারে পাইকার না থাকায় ন্যায্যমূল্যওও পাচ্ছেন না চাষিরা।
স্থানীয় ব্যক্তিরা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে লেবুর চাষ থেকে চাষিরা মুখ ফিরিয়ে নিলে দেশে পুষ্টিঘাটতি দেখা দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এই সমস্যা দূর করতে সরকারের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট কৃষি অফিসের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের নামের তালিকা করে তাঁদের প্রণোদনা দেওয়ার মাধ্যমে লেবু চাষে উৎসাহিত করা প্রয়োজন।
লেবুচাষিদের এমন ভয়াবহ সংকটকালে সংশ্লিষ্ট কৃষি বিভাগসহ স্থানীয় কোনো জনপ্রতিনিধি সবজিচাষিদের সবজি বিক্রি এবং তাঁদের ঘাটতি নিরসনে কোনো প্রকার তদারকি করছেন না বলে অভিযোগ কৃষকদের। যদিও প্রতিটি উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে মাঠপর্যায়ে কাজ করার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্লক সুপারভাইজার বা কৃষি উপসহকারীদের ফসলের মাঠে কৃষকের ফসলের খোঁজ নিতে আসার কথা থাকলেও সময়মতো তাঁদের দেখা মেলে না বলে অভিযোগ কৃষকদের। অন্যদিকে বিভিন্ন মানহীন কীটনাশক কোম্পানি কৃষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ভুলিয়ে-ভালিয়ে মানহীন কীটনাশক হাতে ধরিয়ে দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে টাকাপয়সা।
ফুলবাড়িয়া উপজেলায় এ বছর প্রায় ১ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে চাষ হয় বিভিন্ন মৌসুমি ফলের। এর মধ্যে প্রায় ৪০০ হেক্টর জমিতে লেবুর চাষ হয়েছে। সম্প্রতিকালে প্রায় দ্বিগুণ দাম কৃষককে দিয়ে কৃষি অফিসের মাধ্যমে এনায়েতপুর ইউনিয়ন থেকে ১০ টন লেবু ইউরোপে রপ্তানি করা হয়েছে, এমন তথ্য নিশ্চিত করেন এনায়েতপুর ইউনিয়নের কৃষি উপসহকারী আবু রায়হান।
এ বিষয়ে ফুলবাড়িয়া কৃষি কর্মকর্তা জেসমিন নাহার বলেন, ‘লেবুর চাহিদাটা মূলত নির্ভর করে আবহাওয়ার ওপর, যদি গরম থাকে, লেবুর চাহিদা বাজারে বেশি থাকে। আর যদি ঠান্ডা কিংবা বর্ষা–বৃষ্টি থাকে, চাহিদা কমে যায়। তখন লেবুর দাম তুলনামূলক কম থাকে। তবে এবার যে লেবুর দাম ফুলবাড়িয়ার কৃষকেরা পাচ্ছেন, তা অকল্পনীয়। কৃষকদের প্রচুর লোকসান গুনতে হচ্ছে। আমার মতে, এর পেছনে বাজার সিন্ডিকেট দায়ী থাকতে পারে। কারণ, আমি নিজেও বাজার থেকে ১৫ টাকা হালি লেবু কিনে খেয়েছি। তাহলে কৃষককে এত লোকসান দিয়ে কেন বিক্রি করতে হচ্ছে। তাই শুধু কৃষি বিভাগের সমাধান করতে পারবে না। আমার মতে, এর জন্য প্রয়োজন সরকারের লেবুর জন্য আলাদা নির্ধারিত মূল্যতালিকা করা এবং সংশ্লিষ্ট কৃষি বিপণনকেন্দ্র রয়েছে বাজারজাত নিয়ন্ত্রণের জন্য। সেগুলোও আবার জেলা পর্যায়ে সব সময় প্রান্তিক পর্যায়ে মনিটরিং করতে না পারায় সিন্ডিকেট চক্রগুলো সক্রিয় থাকে সব সময়। পাশাপাশি কৃষিপণ্য সময়মতো বাজারে আনার জন্য ভালো রাস্তাঘাটের প্রয়োজন রয়েছে।’
জেসমিন নাহার আরও বলেন, ‘আমরা ইউরোপে এনায়েতপুর ইউনিয়নের ১০ টন লেবু বিক্রি করেছি। করোনার কারণে রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। আশা করছি কিছুদিন পর আবার চালু হবে, তখন লেবুর বাজার আরও চাঙা হবে। আপাতত লেবুতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের নামের তালিকা কিংবা ভর্তুকি দেওয়ার বিষয়ে কোনো নির্দেশনা আমাদের কাছে আসেনি।’
*লেখা ও ছবি: ইমতিয়াজ আহমেদ