৭ কলেজের শিক্ষার্থীদের করোনা টিকা নিশ্চিতের দায় কার
করোনা মহামারি পরিস্থিতিতে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার ফলে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা চরম দুর্বিষহ অবস্থার দিকে ধাবিত হচ্ছে। এ মাসের শেষ দিন পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা আছে। তবে এর মধ্যে শর্ত বিদ্যমান, বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক হলে থাকা শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের করোনাভাইরাসের টিকা নিশ্চিতের পর শুরু হবে শিক্ষা কার্যক্রম।
অতীতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা ঢাকার ঐতিহ্যবাহী সরকারি সাতটি কলেজকে ২০১৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ের (ঢাবি) অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
ঐতিহ্যবাহী কলেজগুলো হচ্ছে ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি তিতুমীর কলেজ, মিরপুর বাঙলা কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ এবং সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ। ঢাবি অধিভুক্ত হওয়ার পর ওই কলেজগুলোর শিক্ষার্থীদের বিড়ম্বনা যেন দিন দিন বেড়েই চলছে। বর্তমান করোনা মহামারির ভয়াবহ পরিস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম যখন স্থগিত, ঠিক সেই মুহূর্তে ঢাবি অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের করোনা টিকা অনিশ্চিতের ফলে ফের সেশন জটের আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের করোনা টিকা নিশ্চিতের লক্ষ্যে গত মার্চ মাসের মধ্যেই নিবন্ধন করতে বলা হয়েছিল। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়টির অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের টিকা নিশ্চিতে নেওয়া হয়নি কোনো পদক্ষেপ। শিক্ষার্থীদের করোনা টিকা দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বলা হয়েছিল সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা দেওয়া হবে। যে অগ্রাধিকারের মধ্যে স্থান নেই রাজধানী ঢাকায় অবস্থিত ঢাবি অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পক্ষ থেকে ইউজিসিকে দেওয়া ১ লাখ ৩ হাজার ১৫২ জন আবাসিক শিক্ষার্থীর তালিকা দেওয়া হলেও এই তালিকায় স্থান পায়নি সাত কলেজের আবাসিক শিক্ষার্থীরা।
ইউজিসিকে করোনা টিকা প্রাপ্তির লক্ষ্যে আবেদনের সবচেয়ে বেশি তালিকা দিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। ঢাকার বাইরে অবস্থিত হওয়ার পরও এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫ হাজার ২৫৪ শিক্ষার্থীর তালিকা দেওয়া হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯ হাজার ১৩০ শিক্ষার্থীর তালিকা দেওয়া হয়েছে। যে তালিকায় নেই বিশ্ববিদ্যালয়টির অধিভুক্ত কলেজগুলোর শিক্ষার্থীরা। অথচ অত্যধিক ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ঢাকায় অবস্থিত এ কলেজগুলোর শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় দুই লাখ। কলেজগুলোর আবাসিক হলে অবস্থান করা শিক্ষার্থীদের সংখ্যা সব মিলিয়ে প্রায় ৩০ হাজার। তবে কি তাদের করোনা টিকা নিশ্চিত না করেই ক্যাম্পাস খোলা হবে? নাকি অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে শিক্ষা কার্যক্রম চালু না করে সেশনজটে পড়তে হবে ঢাবি অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের।
বর্তমানে ঢাবি অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের মধ্যে অন্যতম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঢাকা কলেজ। এ কলেজের ইতিহাস কারও অজানা নয়। একসময়ের পূর্ব বাংলার উচ্চশিক্ষার প্রাণকেন্দ্র এই কলেজটি। শুধু শিক্ষাক্ষেত্রেই নয় বরং বাংলাদেশের প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রাম, অর্জনের ইতিহাসের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত এ কলেজ। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সৃষ্টির ইতিহাস পর্যালোচনায়ও দেখা যায় অস্বীকার্য অবদান রয়েছে ঢাকা কলেজের। তবে ঢাবি অধিভুক্ত হওয়ার পর থেকে নানা সমস্যার ফলে এ কলেজের গৌরবময় ইতিহাস দিন দিন মলিন হয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া ইডেন মহিলা কলেজসহ বাকি কলেজগুলোরও গৌরবগাথা ইতিহাস সুদূরপ্রসারী। তবে করোনা টিকা অনিশ্চিতের ফলে পূর্বের মতো পুনরায় সেশনজটের দেখা দিলে আরও কয়েক ধাপ পিছিয়ে পড়বে কলেজগুলোর শিক্ষা কার্যক্রম।
ইউজিসির তথ্যমতে জানা যায়, সরকারি-বেসরকারি সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের করোনা টিকার আওতায় আনার লক্ষ্য তাদের। তবে শিক্ষার্থীরা আবাসিক হলগুলোতে যেহেতু একসঙ্গে বেশিসংখ্যক থাকেন, সুতরাং প্রথমে তাঁদের টিকার আওতায় আনা অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ। তবে ঢাবি অধিভুক্ত সাত কলেজের আবাসিক হল থাকার পরও শিক্ষার্থীদের টিকা প্রাপ্তির বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হয়নি কারও পক্ষ থেকে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য (শিক্ষা) ও অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের প্রধান সমন্বয়কারী অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেছেন, ‘ইউজিসি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে আবাসিক শিক্ষার্থীদের তালিকা চেয়েছে।
আমরা আমাদের আবাসিক শিক্ষার্থীদের তালিকা পাঠিয়েছি। অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্বশীলদের ভাষ্যমতে বোঝাই যাচ্ছে ঢাবি অধিভুক্ত হওয়ার পরও সাত কলেজ সম্পর্কে তাদের দায়সারা অবস্থান। শুধু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনই নয়, সাত কলেজগুলোর প্রশাসনেরও দায়সারা অবস্থান বলা চলে।’ তাদের কারও ভাষ্যমতে, ‘করোনার টিকা যেহেতু সরকারের উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্তের বিষয়, সেহেতু মন্ত্রণালয়ের ওপর ডিপেন্ড করবে কবে তারা টিকা দেবে।’ অন্য কেউ বলছেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের টিকা নিশ্চিতের ব্যাপারে চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।’ উভয় প্রশাসনের এমন দায়সারা অবস্থানের ফলে ঢাবি অধিভুক্ত সাত কলেজের লাখ লাখ শিক্ষার্থীর স্বপ্ন মাটিচাপা দিতে হচ্ছে। মানসিকভাবে চরম হতাশার মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের দিনগুলো। দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় তাঁদের সাফল্যমণ্ডিত অবদান নিশ্চিতের লক্ষ্যে দ্রুত যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ এখন সময়ের দাবি।
*লেখক: মাহমুদুল হাসান ইজাজ, শিক্ষার্থী, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা কলেজ, ঢাকা