৭ অক্টোবর, রাত ১২টা ২০ মিনিট
(নানি মোমিনা বেগমের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য)
‘বাড়িত কোন দিন আসিব’—এই অপেক্ষার
প্রহর শেষ হলো ৭ অক্টোবর রাত ১২টা ২০ মিনিটে।
ইদানীংকালে খুব কম কথা হতো, নানা ব্যস্ততায়
দৌড়ঝাঁপ, এটা–সেটা কারণে।
কে জানত, সেই রাতেই হবে শেষ কথা।
সারাক্ষণ যার ভাবনা ছিল আমাদের
আমাদের চারপাশের। মানুষজনের।
এতটাই নীরবে
শরতের শুভ্রতায়
বিরক্তহীন চিৎকারে
চলে যাবে—এখনো কল্পনা করতে পারি না।
আকাশ দেখছি, শহর পেরিয়ে রাতভর ছুটছি
তুমি নেই—হে প্রিয়তমা।
আমি তো তোমার ডাকে ঢাকা শহরে ফেলে
তোমার কাছে সমস্ত কাশবনের ফুল নিয়ে ছুটছি
৭১৫ নম্বর মুক্তিযোদ্ধা কেবিনে।
আমি ভেবেছিলাম—তুমি খুশি হয়ে
আবার জেগে উঠবে নতুন সকালের মতো।
এদিক–সেদিকে, এপাড়া–ওপাড়া আমাকে নিয়ে ছুটবে
পরিচয় করিয়ে দেবে কত অজানা মানুষের কাছে,
আমাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়বে
এটা–ওটা কী সব খাবার নিয়ে হাজির হবে
শোনাবে মুক্তিযুদ্ধের সেই সংগ্রামের দিনগুলোর কথা,
শোনাবে তোমার ছেলেহারা বেদনার কথা
শোনাবে সেই কালে তোমার বেড়ে ওঠার গল্প
শোনাবে বৃষ্টিভেজা চিরযৌবনের
অমৃত নানার ভালোবাসার কথা।
তুমি এভাবে চলে গেলে, প্রিয়তমা
একেবারে নিঃসঙ্গ কর
নিভৃতে।
আশ্বিনের অন্ধকার রাতে
তুমি যখন চুপটি মেরে
অক্সিজেন নিতে নিতে দূরদেশের
যাত্রার জন্য প্রস্তুত নিতেছ
সেই সময় আমরা সবাই তোমার পাশে
রাতের খাবার খেয়ে আগামী দিনের স্বপ্ন দেখছি
তুমি জেগে উঠবে, গ্রামে যাবে
তোমার প্রতিদিনের অভ্যাস বাগানবাড়িতে বেড়াবে
এই বাড়ি ওই বাড়ি, হাসি–তামাশা করে দিন কাটাবে
এই সময়ে তোমার পালস অক্সিমিটার
যে শূন্য হয়ে শূন্যে চলে যাবে—কী অবিশ্বাস্য!
এভাবে তুমি কিছু না বলে চলে যাবে
চিরতরে। চির ভালোবাসা দিয়ে।