হ্যালো বিশ্ব মানবতা, আপনাকে বলছি

গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলে বিমান হামলা। ফিলিস্তিন, ১৩ মে
ছবি: এএফপি

চারদিকে লাশের সারি দেখে অন্তরাত্মা কেঁপে ওঠে। বাদ যাচ্ছে না বাচ্চা-শিশুরাও। এ কেমন হত্যার লীলাখেলা। ক্ষণে ক্ষণে কেঁপে উঠছে প্রিয় আল–আকসা। মুহূর্তে মুহূর্তে বিদায় নিচ্ছে আমাদের প্রিয় ভাইয়েরা। বাদ যাচ্ছে না শিশুরাও। তাদের ক্ষোভ আর চিৎকারে ভারী হয়ে যাচ্ছে হৃদয়। ঠিক কত মানুষ মারা গেছে, তা বলা সম্ভব নয়। কারণ, এ লেখা লিখতে লিখতে হয়তো মৃত্যুর মিছিলে আরও ভাইয়েরা নাম লিখিয়েছে, ভারী হচ্ছে লাশের বোঝা।

পবিত্র রমজান মাসে মসজিদের এসে এভাবে মুসলমানদের ওপরে আঘাত করার কোনো কারণ অনেকেই খুঁজে পান না। আসলে ইসরায়েলের এই আগ্রাসনের পেছনে একটা নির্দিষ্ট কারণ আছে। অনেকেই আসলে ইসরায়েল রাষ্ট্রের শুরুর ইতিহাস জানে না। এই ফিলিস্তিনের বুক চিরে একদিন জন্ম হয়েছিল দখলদার ইসরায়েল রাষ্ট্রের। তারা প্রথমে প্রবেশের জন্য কতই–না আর্তনাদ করেছিল। আসলে ওরা চায় চিরতরে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে ধ্বংস করে দিতে। চিরতরে তাদের বিতাড়িত করে দিতে। ওরা চায় এখানে ওদের চিরস্থায়ী ঘাঁটি তৈরি করতে। ওরা তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনামাফিক এগোচ্ছে। প্রতিনিয়ত অত্যাচার–নিপীড়ন চালায় নিরীহ ফিলিস্তিনিদের ওপর। মূলত শেখ জাররার কয়েকটি পরিবারকে উচ্ছেদ করা হবে—এমন একটি সম্ভাবনা থেকেই আসলে এবারের বিক্ষোভের উৎপত্তি। কিন্তু এটা আসলে কোনো এক দিনের ঘটনা নয়, কোনো স্বল্প সময়ের হিসাব নয়। এর পেছনে লেগে আছে যুগ–যুগান্তরের হিসাব–নিকাশ।

কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে এত নির্মম অত্যাচার দেখেও বিশ্ববিবেক আজ জাগ্রত হচ্ছে না। যারা সারা বিশ্বের শান্তির গান গেয়ে বেড়ায়, শান্তির পতাকা বহন করে বেড়ায়, পুরস্কার পেয়ে বেড়ায়, তাদের কোনো আওয়াজ দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু দেখা যাবে যে ইসরায়েলের একটা বুলেটের প্রতিবাদে যদি ফিলিস্তিনিরা একটা ঢিল ছুড়ে মারে, সেটাকে জঙ্গি হামলা বলে আখ্যায়িত করবে। নিশ্চিতভাবে বলা পৃথিবীতে এমন জাতিগত হামলা বর্তমানে কোনো জাতির ওপরেই নেই।

আসলে এখানে মুসলিম বিশ্বনেতাদেরও দূরদর্শিতারও চরম অভাব আছে। নিজেদের মধ্যে সমন্বয়হীনতার বিরাট ঘাটতি রয়েছে। মুসলিম দেশগুলোর যেসব সংগঠন রয়েছে, ওগুলো এখন শুধুই চাকরি পরীক্ষার্থীদের ঝামেলা বাড়াচ্ছে। কবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, কবে সম্মেলন—এসব তথ্য জানা ছাড়া কোনো কাজ নেই এগুলো নিয়ে। নিজেদের মধ্যে ঐক্য না থাকলে আসলে অন্যরা তো সুযোগ নেবেই।

ঐক্য আসলে কেন নেই? মতের অমিল কোথায়? বিভিন্ন জায়গায় মতের অমিল থাকতেই পারে, কিন্তু একটা নির্দিষ্ট জায়গায় তো সবাই এক হতেই পারে। একটা সঠিক নীতিমালা করে তো এগেনো যেতেই পারে। কিন্তু সেটা না করে একে অপরের পেছনে লেগে থাকবে দোষ ধরার জন্য। আর এখন তো টাকা আর ক্ষমতার লোভ অনেককেই অন্ধ করে দিয়েছে। একসময় ইসয়ারালের সঙ্গে অনেক মুসলিম দেশের গোপন সম্পর্ক বিদ্যমান আছে, তা জানা যেত, কিন্তু এখন সেই সম্পর্ক একদম প্রকাশ্যে নিয়ে এসেছে অনেকেই। আর সেই তালিকায় সবার আগের নাম হচ্ছে আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)–এর জন্মস্থান সৌদি আরবের নাম যখন শোনা যায়, তখন আসলে সব মুসলমানের কষ্টে বুক ফেটে যায়। আর আরব আমিরাত তো কূটনৈতিক সম্পর্কই স্থাপন করে ফেলেছে। আসলে তেল আর অস্ত্রের ব্যবসা ভালোই চলছে সবার। তাহলে প্রতিবাদ করবে কে? জবাব চাইবে কে?

জাতিসংঘ আছে কী করতে? তাদের কাজ কী? একটা বিবৃতি হয়তো তারা দেবে, এ সম্মানটুকু অবশ্যই করবেন আশা করি। কিন্তু এ সম্মান কেউ চেয়েছে? সবাই তো চায় রুখে দাঁড়াতে, তাদের সঙ্গে কথা বলার সাহসও হয়তো কারও নেই। তাই তো এখন তাদের নিয়ে গিয়ে আমোদ–ফুর্তি করছে অনেক মুসলিম দেশের হর্তাকর্তারাই!

এখন অনেকেই আবার এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে নারাজ। খোদ আমাদের দেশের অনেকেই এর বিরুদ্ধে কথা বলতে নারাজ। এমনকি যারা কথা বলছে, তাদের নিয়েও বিভিন্ন ফোবিয়া ছড়ানো হচ্ছে। এখন প্রথম কথা হচ্ছে, শুধু মুসলিম হিসেবে নয়, একজন মানুষ হিসেবে তো অবশ্যই প্রতিবাদ করার কথা। আর পরের কথা হচ্ছে, একজন মুসলিম হিসেবে সবার জানা উচিত আল–আকসার সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের কত স্মৃতি। প্রিয় নবী (সা.) ও আরও অনেক নবী–রাসুলদের স্মৃতি জড়িয়ে আছে এই প্রিয় মসজিদের সঙ্গে। আমাদের হৃদয়ের স্পন্দন এই মসজিদ। সেখানে নির্বিচারে মানুষের ওপর হামলা চালানো হচ্ছে, কিন্তু বিশ্ব নির্বাক হয়ে দেখছে। কারও মুখে প্রতিবাদের কোনো গান নেই, সবাই চুপ। আর অসহায়ের মতো এ অত্যাচার সহ্য করে যাচ্ছে আমাদের ভাইয়েরা। তবে তারাও ভেঙে পড়ছে, শিশুরাও পর্যন্ত ক্ষোভে উত্তাল হয়ে বলছে, একদিন জয় করবই আমরা! ওদের কাছে বন্দী হয়েও বিচলিত নয় আমার ভাইয়েরা।

তোমার কাছে বন্দী মানে তা নয় আমার পরাজয়,
স্বপ্নে হলেও পৌঁছে যাব হৃদয়ের আকসায়!