স্মৃতিপটে মাহে রমজান

মন ফিরে যেতে চায় হারানো শৈশবে। যখন ভোররাতে উঠে মা রান্না করতেন উনুনে। তখন আমিও উঠে উনুনের পাশে পিঁড়ি নিয়ে বসে থাকতাম। রাস্তায় শোনা যেত মাইকের আওয়াজ। আহা তখনকার দিনগুলো ছিল শ্রুতিমধুর, যা চাইলেও আর ফিরে পাব না। এই দিনগুলোতে সবাই সবাইকে ডেকে তুলত। বারবার মন ফিরে পেতে চায় স্মৃতিপটে শৈশবের মাহে রমজানে।

শৈশবে রমজান ছিল অনেক আনন্দদায়ক। শৈশবে রমজান মানে খুশির আমেজ। সাহ্‌রিতে বেশির ভাগ সময় আমাকে কেউ ডাকত না। তখন আমি বিছানায় এপাশ–ওপাশ করি, যখন ডাকত, কিন্তু আমি সহজে উঠতাম না, ঘুমানির ভান করে থাকতাম তবে আমার ইচ্ছা থাকত ওঠার। তখন আমি কিছুক্ষণ পর উঠে পানি চাইতাম। তখন সবাই বলত অনেক ঢং হইছে এবার খেতে বস আমি টুপ করে বসে পড়তাম খেতে।
সাহ্‌রি খাওয়ার পর বন্ধুরা মিলে দল বেঁধে সবাই ফজরের নামাজ পড়তে যেতাম। অন্ধকার থাকতে নামাজ শেষ হয়ে যেত। তখন সব বন্ধু মিলে ঘুরতে যেতাম। আমাদের এখানে সদর উপজেলার ভেতরে ছোটদের কিছু খেলনাসামগ্রী ছিল। সেগুলোতে কেউ দোল খেতাম, কেউ ঢেঁকি খেলতাম আবার কেউ ব্যায়াম করতাম। সকাল আটটা বাজলে সেখান থেকে বাসায় চলে আসতাম। আবার কোনো দিন ফজরের নামাজ শেষে মানুষের বাসার কলবেল বাজিয়ে দৌড় দিতাম। এখন ওই স্মৃতিগুলো হাতড়ে বেড়াই, ফিরে যেতে চাই শৈশবে।

শৈশবে সবার সঙ্গে সাহ্‌রি খাওয়া ইফতার খাওয়া একসঙ্গে সবাই তারাবিহ পড়ার মজাই ছিল অন্য রকম। রমজান মাসের আমার প্রিয় সময় ছিল ভোররাত। ভোররাতে কাবলা পার্টিরা মাইকিং করত, সবাইকে জাগিয়ে তুলত। আর একটা প্রচলিত গজল ছিল সবারি জানা, ‘ও আমার আব্বু আব্বু আমার আজ রাতে সাহ্‌রিতে যদি না ডাকো ঈদের দিনেও কথা বলব নাকো।’ এই গজলটা মাইকে কাবলা পার্টিরা কিছুক্ষণ পরপর বাজাত। এখন মিস করি এই কাবলা পার্টিদের। কালের বিবর্তনে তাদের ভরা কণ্ঠের আওয়াজ আর মাইকে পাওয়া যায় না।

ছোটবেলায় রমজান মাসে দেখতাম কাবলা পার্টিরা বিভিন্ন গ্রামে যেত, চাউল নিত, টাকা নিত এবং মাইকে সুন্দর সুন্দর গজল বাজাত। এখন আর এসবের দেখা মেলা ভার।
রমজান মাসের ইফতারির সময় যখন হতো তখন আজান দেওয়ার আগে খেতে মন চাইত। কখনো কখনো খেয়ে ফেলতাম আজানের আগে। ছোটবেলায় আমরা সবাই একসঙ্গে বসে ইফতারি করতাম অনেক আনন্দময় সময় ছিল। যদিও এভাবে সবার সঙ্গে এখন ইফতার করা হয় না। এখন সবাই সবার মতো কর্মজীবনে ব্যস্ত।

সময়ের সঙ্গে সবকিছু পরিবর্তন হয়েছে, তেমনভাবে আমিও বড় হয়েছি। এখন রমজান মাসের কথা শুনলে মনের মধ্যে ছোটবেলার মতো আনন্দ পাই না। এখন ফজরের নামাজের পরে বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে যাওয়া হয় না দল বেঁধে তাদের সঙ্গে তারাবিহ পড়তে যাওয়া হয় না। তারাবিহতে অনেক দুষ্টুমি করতাম, এখন আর সেই সুযোগ হয় না।

এখন রমজান মাসে নিয়মিত নিজ দায়িত্বে রোজা রাখি, নামাজ পড়ি নিয়মিত। শৈশবের ইবাদত খুব নির্ভেজাল হয়। তাই বারবার ইচ্ছা করে আবার সেই শৈশবে ফিরে যাই। কিন্তু আর সম্ভব না আনন্দময় শৈশবের রমজানে ফিরে যাওয়া।
লেখক: শিক্ষার্থী