স্বাধীনতার মাসে পাঠাগারের উদ্বোধন

চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার পশ্চিম আমিরাবাদ গ্রামের তরুণেরা গড়ে তোলেন ‘পশ্চিম আমিরাবাদ আদর্শ পাঠাগার’
ছবি: লেখক

শরীরের চিকিৎসার জন্য যেমন দরকার হাসপাতাল, ঠিক তেমনি মনের চিকিৎসার জন্য দরকার পাঠাগার। কিন্তু আমাদের দেশে রাস্তার মোড়ে মোড়ে বিউটি পারলার আর সাইবার ক্যাফে গড়ে উঠলেও গড়ে ওঠেনি পাঠাগার। পাঠ্যবইয়ের বাইরের কোনো বইয়ের স্পর্শ পায় না দেশের অধিকাংশ শিক্ষার্থী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চাকচিক্যের আড়ালে পত্রিকায় চোখ বোলানোর অভ্যাসও উঠে যাচ্ছে সমাজ থেকে। এসব বিষয়কে আমলে নিয়ে চট্টগ্রামের কিছু তরুণ নিজেদের অর্থায়নে গড়ে তুলেছেন উন্মুক্ত পাঠাগার। চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার পশ্চিম আমিরাবাদ গ্রামের তরুণেরা গড়ে তোলেন ‘পশ্চিম আমিরাবাদ আদর্শ পাঠাগার’। উদ্বোধনের জন্য বেছে নেন বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার মাস মার্চ মাসকে। গত ২৭ মার্চ উদ্বোধন করা হয় তরুণদের এই পাঠাগার।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য, স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, ব্যবসায়ী ও সমাজসেবকেরা। পশ্চিম আমিরাবাদ গ্রামটি আর্থিক সচ্ছলতায় সমৃদ্ধ হলেও মননশীলতা ও সৃষ্টিশীলতায় অনেক পিছিয়ে। এখনো বই পড়া এখানে বিলাসিতা। দশম শ্রেণি পড়তে না পড়তে মেয়েদের বিয়ে ও ছেলেদের দোকানের চাকরিতে পাঠিয়ে বেতন নেওয়ার চিন্তা অভিভাবকদের। ফলে, এলাকার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া তরুণ, শিক্ষাবিদ ও সমাজসেবকদের সম্মিলিত প্রয়াসে প্রতিষ্ঠা করা হয় এই পাঠাগার। প্রতিষ্ঠার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা বলছেন, গ্রামের পড়ুয়ারা নিজেদের অবসর যদি বইয়ে খুঁজে নিতে পারে, তবে তরুণদের বিপথে যাওয়ার আশঙ্কা নেই। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল পড়লে কেউ মাদকমত্ত হতে পারে না। এ ছাড়া বই সমাজকে বৈচিত্রতায় ঐক্য খোঁজার প্রয়াস জোগাবে। একটি আলোকিত সমাজ গঠনের নেতৃত্ব দেবে পাঠাগার।

পাঠাগারের সভাপতি ইহছানুল হক বলেন, ‘২০১৭ সাল থেকে সীমিত পরিসরে আমাদের পাঠাগারের কার্যক্রম ছিল। এই করোনাকালে লকডাউনে এলাকার সবাই যখন গ্রামে তখন আমরা সবাই মিলে পাঠাগারের পরিসর বৃদ্ধি করে একটি স্থায়ী রূপ দেওয়ার চেষ্টা করেছি। এখন থেকে পাঠাগারে নিয়মিত বেশ কয়েকটি জাতীয় দৈনিক ও ম্যাগাজিন আসবে। বর্তমানে তিন শতাধিক বই আমাদের আছে। খুব শিগগির আমরা বইয়ের সংখ্যা হাজারে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছি। এত দিন আমাদের নির্দিষ্ট কোনো পাঠাগার ঘর ছিল না। বর্তমানে আমরা একটি পাঠাগার ঘর ভাড়া নিয়েছি। দৈনিক ৪০ থেকে ৫০ জন পাঠক আমাদের পাঠাগারে পড়তে আসে। পাঠাগারটি উন্মুক্ত, যেকেউ পাঠাগারে এসে বই, পত্রিকা বা ম্যাগাজিন পড়তে পারে। আমরা আশা করছি, চলতি বছরে আমরা দৈনিক পাঠকসংখ্যা ১০০ পার করতে সক্ষম হব।’

পাঠাগারের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের কিশোর, তরুণেরা বইবিমুখ হয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার ফলে শিক্ষার্থীরা আরও এলোমেলো হয়ে পড়েছে। ফলে আমরা সমাজের পড়ুয়াদের জন্য একটি উত্তম পাঠাগার করার পরিকল্পনা করছিলাম। এলাকার তরুণ, যুবক ও মুরব্বিদের সহযোগিতায় আমরা সফল হয়েছি। এখন উদ্দেশ্য কীভাবে সবার হাতে পৌঁছে দিতে পারি বই।’

স্থানীয় ইউপি সদস্য হোসাইন মোহাম্মদ শারফু বলেন, ‘একটি মননশীল, সহনশীল ও সৃজনশীল সমাজ গঠনে বইয়ের কোনো বিকল্প নেই। পাঠাগারের উদ্যোগকে আমি সাধুবাদ জানাই। সেই সঙ্গে পাঠাগারের প্রতি আমার সমর্থন, সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।’

উদ্বোধনকালে আনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠানসূচি শেষে কেক কেটে পাঠাগারের উদ্বোধন করেন পাঠাগার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।