সীমান্তে জমেছে ঈদবাজার

প্রথম আলো ফাইল ছবি

ঈদ মানে আনন্দ, যা ফিরে আসে প্রতিবছর। রোজার শেষে এ ঈদ আসে বলে আমরা বলি রোজার ঈদ। এ সময় আপনজনেরা অপেক্ষায় থাকে। অপেক্ষায় থাকেন ঘরনি। ঢাকা কিংবা বিদেশ থাকা মানুষের জন্য অপেক্ষায় থাকে সীমান্তের বাজারও।
শুরু হয়ে গেছে ঈদের কাউন্টডাউন। সীমান্তবর্তী আটোয়ারী, রুহিয়া কিংবা লাহিড়ীর মতো বাজারে ঈদের কেনাকাটাও শুরু হয়েছে। কিন্তু ব্যবসায়ীরা অপেক্ষায় আছেন তাঁদের জন্য, যাঁদের সৌজন্যে শেষ মুহূর্তে জমে উঠবে ঈদের বাজার। সীমান্ত এলাকার ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, প্রতিবছরই দেখা যায়, ঈদের বাজার প্রথমে শুরু হয় ঢিমেতালে। তারপর শেষের দিকেই হঠাৎ বাজার উঠতে শুরু করে। কারণ, সে সময়েই ঢাকা, সিলেট কিংবা ভিন্ন দেশে কাজে যাওয়া বেশির ভাগ লোকজন বাড়ি ফেরেন।

গত শনিবার ঠাকুরগাঁও সদরের রুহিয়া বাজারের বস্ত্র ব্যবসায়ী মো. আলী বলছেন, ‘করোনায় অসুবিধা ক্রেতা–বিক্রেতা সবারই। তবে তার জন্য যে বাজার খারাপ যাচ্ছে, এমনটা বলা যাবে না। তা ছাড়া বাজার তো সবে শুরু হলো। বাজার যাঁদের অপেক্ষায় থাকে, তাঁরা সবাই তো এখনো বাড়ি ফেরেননি। তাঁরা ফিরলেই বাজার আরও চাঙা হবে।’

ক্রেতাদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে জিনিসপত্রও মজুত করেছেন সীমান্তের ব্যবসায়ীরা। প্রতিবছরই ঈদের আগে বিশেষ কিছু পোশাক কিংবা জুতোর নাম মুখে মুখে শোনা যায়। বছর কয়েক আগে সীমান্তের বাজারগুলোয় সাড়া ফেলে দিয়েছিল পাখি, কিরণমালা, রাজকুমারী কিংবা ঝিলিক। শাড়ি বললেই কটন শাড়ি। আর আটোয়ারী ও বালিয়াডাঙ্গী এলাকার বাজারগুলোয় হইহই করে একসময় বিক্রি হয়েছে কিরণমালা। এবার যেমন চাহিদা রয়েছে পাখি চুড়িদার ও লেহেঙ্গার। ছেলেদের পোশাকের মধ্যে ভালো বিক্রি হচ্ছে ন্যারো জিনস ও টি–শার্ট।

রুহিয়া বাজারের বস্ত্র ব্যবসায়ী সোহেল রানা বলেন, ‘বেশ কয়েক বছর ধরে আমরা দেখছি ব্র্যান্ডের পোশাকের চাহিদা বেড়েছে। সেই মতো ঈদ কিংবা পূজার আগে আমরা মূলত ব্র্যান্ডের পোশাকেই বেশি জোর দিচ্ছি।’ আটোয়ারী বাজারের এক জুতো ব্যবসায়ী বলছেন, ‘ঈদের বিক্রি শুরু হয়ে গিয়েছে। বাইরে থাকা লোকজন ফিরতে শুরু করেছে।’

রুহিয়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক দুলাল রব্বানী জানান, সীমান্তবর্তী এলাকার বহু মানুষ দেশের বিভিন্ন জায়গায় তো বটেই; কাতার, কুয়েত, সৌদি আরবেও কাজ করেন। উৎসবের মুখে তাঁরা অনেকেই বাড়ি ফেরেন। আর কেনাকাটাও করেন স্থানীয় বাজারগুলো থেকেই। ফলে, স্থানীয় বাজারগুলোও ওই বাইরে থাকা লোকজনের ওপর অনেকটাই নির্ভর করে।

ইতিমধ্যে কাতার থেকে বাড়ি ফিরেছেন রুহিয়ার মিন্টু ও দুবাই থেকে সাত্তার আলী। তাঁদের কথায়, অনেক বছর পরে বাড়িতে এসেছেন। পরিবারের সঙ্গে ঈদ করবেন। এ সময়ের জন্য তাঁরা সবাই অপেক্ষা করেছেন। এর মধ্যে একটা ঝকঝকে দিন দেখে সপরিবারে বেরিয়ে পড়বেন বাজার করতে।

গত বছর ঈদে বাড়ি ফিরতে পারেননি ঢাকা থেকে আসা বালিয়াডাঙ্গী ধনতলা ইউনিয়নের সারোয়ার হোসেন। এবার তিনি ফিরেছেন। স্ত্রী জাহানারা বিবি বলছেন, ‘গত বছর মেয়েরা মন খারাপ করে বসে ছিল। এবার আব্বার সঙ্গে বাজারে যাবে বলে খুব খুশি।’ সারোয়ার জাহান বলেন, ‘করোনার কারণে আয়–রোজগার তেমন নেই। তবে ঈদ তো করতেই হবে। তাই মেয়ে দুটির জন্য কম দামের হলেও পোশাক নিতে এসেছি।’

জাকির হোসেন ও ইয়াকুব আলী পরিবারের সবার জন্য বাজার করে ফেরার পথে বলছিলেন, বাড়ি গেলেই সবাই হইহই করবে, এত টাকা খরচ করার কী ছিল! কিন্তু এত দিন বাদে বাড়ি ফিরে সবাইকে খুশি করতে গিয়ে অত লাভ-লোকসান নিয়ে ভাবলে চলে! করোনা তো ঈদ–পরব বোঝে না। আর এভাবেই অপেক্ষার শেষ হয়। জমে ওঠে খুশির পরব ঈদ।