সাত কলেজের সেশনজট নিরসনে অনলাইন পরীক্ষার বিকল্প নেই
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর চাপ কমাতে এবং শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে ২০১৭ সালে রাজধানী ঢাকায় অবস্থিত সরকারি সাতটি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়। এই সাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হলো ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ।
কিন্তু অধিভুক্ত হওয়ার চার বছর পর দেখা যাচ্ছে ভিন্ন চিত্র। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলো থেকে শিক্ষার্থীরা সেশনজট ছাড়া সফলভাবে বের হয়ে চাকরিজীবনে প্রবেশ করলেও সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা আটকে আছেন অনিশ্চিত ভবিষ্যতে। পরিক্ষা গ্রহণ ও ফল প্রকাশে বিড়ম্বনা, গণহারে ফেল করানো এবং একাডেমিক কার্যক্রমে সমস্যা নিয়ে অভিযোগ আছে প্রশাসনের বিরুদ্ধে। শিক্ষাপঞ্জিও ঘোষণা করা হয়নি। কেবল স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থী নন, স্নাতক চতুর্থ ও তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরাও সেশনজটের শিকার। এর প্রভাব পড়ছে প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের ওপরও। শিক্ষার্থীদের দাবি শোনার যেন কেউ নেই। তাই তো বারবার আন্দোলনে নেমে দাবি আদায় করতে হয়েছে শিক্ষার্থীদের। ২০১৭ সালে পরীক্ষার রুটিন প্রকাশের জন্য প্রথম প্রকাশ্যে আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী সিদ্দিক হারান তাঁর দুটি চোখ। পুলিশ ও শিক্ষার্থীদের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে আলোচনা, তর্কবিতর্ক চলে সংসদে। পরে সরকারি অর্থায়নে চিকিৎসা হয় সিদ্দিকের। কিন্তু তাঁর চোখের দৃষ্টি আর ফিরে আসেনি। পরে তাঁর সরকারি চাকরির ব্যবস্থা করে সরকার।
কিন্তু সাত কলেজের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি। এরপর বহুবার দাবি আদায়ের জন্য রাস্তায় নামতে হয়েছে শিক্ষার্থীদের। সর্বশেষ ২০২০ সালে সমস্যা নিরসনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নতুনভাবে কাজ শুরু করলেও করোনা মহামারির প্রাদুর্ভাবে তা আর আলোর মুখ দেখেনি। এদিকে সেশনজটে আটকে থাকা প্রায় দুই লাখ শিক্ষার্থী আরও তীব্র সেশনজটের আশঙ্কায় ভুগছেন। করোনা মহামারির এই পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের টিকা নিশ্চিত করে পরীক্ষা গ্রহণ করা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। সে ক্ষেত্রে ছোট প্রশ্ন ও এমসিকিউ পদ্ধতিতে অনলাইনে পরীক্ষা গ্রহণ কিংবা অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে পরীক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের তীব্র সেশনজট থেকে রক্ষা করা যেতে পারে। আর এই পরীক্ষা দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিতে না পারলে প্রায় দুই লাখ শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। সাত কলেজ নিয়ে এবার ভেবে দেখার সময় এসেছে। এটিকে জাতীয় ইস্যু হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। এই বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন নিয়ে যাঁরা বারবার অবিবেচনাপ্রসূত ও অবাস্তব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাঁদের এবার থামতে হবে।
লেখক: শিতাব আযিয, ইংরেজি বিভাগ, সরকারি তিতুমীর কলেজ