সাইবার বুলিং: আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাবে কবে
পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ৫১ শতাংশই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করেন। জেনে অবাক হবেন, এর মধ্যে ৬০ শতাংশই নিয়মিত কোনো না কোনোভাবে সাইবার বুলিং, আপত্তিকর মন্তব্য কিংবা হয়রানির শিকার হন।
বুলিং বলতে আমরা বুঝি দুজন ব্যক্তির মধ্যে তর্ক বা কথা-কাটাকাটির জের ধরে একজন ব্যক্তিকে সুনির্দিষ্টভাবে সবার সামনে দোষারোপ বা খারাপ ভাষায় আক্রমণ করা। আবার একজনের ছবি বা ভিডিও বিকৃতি করে অনলাইনে তুলে ধরাও বুলিংয়ের মধ্যে পড়ে। কেউ আপনাকে হেয় প্রতিপন্ন (এমনকি বডি শেমিং বা বর্ণবৈষম্যমূলক মন্তব্য করলেও) করলে সেটিও বুলিংয়ের আওতায় পড়ে। এটি একধরনের সাইবার অপরাধ। তবে এসব অপরাধ দমনে আইনও রয়েছে দেশে। দরকার শুধু সচেতন থাকা।
ইউনিসেফের ২০১৯ সালের এক জরিপ অনুযায়ী, দেশে সাইবার বুলিংয়ের শিকার হওয়া ৩৮ শতাংশ ১০ থেকে ১৩ বছর বয়সের, ৩৬ শতাংশ ১৪ থেকে ১৫ বছর এবং ১৬ থেকে ১৭ বছর বয়সী ২৫ শতাংশ। ঢাকায় অনলাইনে হয়রানির শিকার নারীদের ৭০ শতাংশের বয়স ১৫ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে৷
বাংলাদেশসহ এশিয়ার কয়েকটি দেশের ওপর চালানো এক জরিপের বরাত দিয়ে ২০১৭ সালে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এসব দেশে সাইবার বুলিংয়ের ঝুঁকি উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে এবং নারী ও অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোরীরা সবচেয়ে বেশি শিকার হচ্ছে বুলিংয়ের।
অনলাইনে হয়রানি বা সাইবার বুলিংয়ের কারণে অনেকেই হতাশায় ভোগেন। তাঁদের একটি অংশ হতাশা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। দুটি উদাহরণ জানাতে চাই।
জাপানের ২২ বছর বয়সী হানা কিমুরা একজন পেশাদার কুস্তিগির ছিলেন। এ ছাড়া নেটফ্লিক্সের জনপ্রিয় রিয়েলিটি টিভি শো ‘টেরাস হাউস’-এ অভিনয় করেছেন তিনি। গত বছরের ২৩ মে আত্মহত্যা করেন কিমুরা। অনলাইনে ‘টেরাস হাউস’–এর দর্শকদের ক্রমাগত সমালোচনার প্রতিক্রিয়ায় আত্মহত্যা করার আগে বেশ কয়েকটি টুইট করেছিলেন তিনি। কিমুরার টুইটগুলোয় আত্মহত্যার আভাস ছিল।
দক্ষিণ কোরিয়ার ২৫ বছর বয়সী সল্লি একজন অভিনেত্রী, গায়িকা ও মডেল ছিলেন। মেয়েদের বিখ্যাত কে-পপ ব্যান্ড ‘এফ (এক্স)’-এর সাবেক সদস্য ছিলেন তিনি। তবে তাঁর আরেক পরিচয়, তিনি ‘নো ব্রা’ আন্দোলনের একজন সমর্থক ছিলেন। অর্থাৎ, মেয়েদের বক্ষবন্ধনী না পরার পক্ষে ছিলেন সল্লি। এ কারণে তাঁকে সাইবার বুলিংয়ের শিকার হতে হয়েছে। এসবের কারণে হতাশায় ভুগে ২০১৯ সালে আত্মহত্যা করেন তিনি।
২০১২ সালের ১৭ জুন সাইবার বুলিংয়ের বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রথম স্টপ সাইবার বুলিং ডে পালন করা হয়। এরপর থেকে প্রতিবছরের জুন মাসের তৃতীয় শুক্রবার দিবসটি পালন করা হয়।
লেখক: তানভীর মাহতাব আবীর