শৈশব কেড়ে নিচ্ছে প্রযুক্তি
ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা ও পারিবারিক দৃঢ়তার অভাবে এখনকার শিশুরা ইন্টারনেটভিত্তিক বিনোদনে আশ্রয় খুঁজছে। পরিবার ও বন্ধু-বান্ধবের কাছ থেকে প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা পাওয়ার পর শিশুরা সহজেই ইউটিউব, ফেসবুক ইত্যাদি ব্যবহার করছে। শিশুরা এখন বুঝতে পারে ইউটিউবে, গুগলে যা সার্চ দেওয়া হয়, তা–ই আসে। কেউ ব্রাউজ করছে বিভিন্ন গেমস, কেউ–বা খুঁজছে কার্টুন ও শিক্ষাবিষয়ক অনুষ্ঠান। কিন্তু এসব করতে গিয়ে নানা ধরনের খারাপ সাইটে ঢুকে পড়তে পারে তারা। অনেকে আসক্ত হয়ে পড়ছে পর্নো সাইটেও, যা তাদের জানারই কথা ছিল না এই বয়সে।
কিশোরেরা ফেসবুকে বিভিন্ন ছেলে-মেয়ের সঙ্গে বন্ধুত্ব সৃষ্টি করছে। তাদের মধ্যে সবাই একই রকম ভালো নয়। কিশোরেরা মেসেঞ্জারের মাধ্যমে বিভিন্ন বাজে চ্যাটিং ও খারাপ ছবিও আদান-প্রদান করছে মাতা–পিতার অগোচরে। এসব আবার ছড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন বখাটের হাতে থাকা মুঠোফোনে, যার প্রভাব পড়ছে সমাজে। ঘটছে যৌন নির্যাতন, নিপীড়ন, ধর্ষণ ও খুনের মতো ঘটনা। এমনকি ধর্মীয় আদর্শের ভুল ব্যাখ্যায় প্ররোচিত হয়ে নানা ধ্বংসাত্মক কাজেও লিপ্ত হতে পারে কিশোরেরা। কেননা, তারা এই বয়সে যা দেখে ও শোনে, তাদের মনমানসিকতা সেভাবেই চালিত হয়।
তবে ইন্টারনেটের আসক্তি থেকে ফেরানোর উপায় আছে। মা–বাবার সঙ্গে পারিবারিক দূরত্বের কারণে শিশুরা ইন্টারনেটের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়তে পারে। মা–বাবা যদি শিশুকে একা ফেলে কর্মক্ষেত্রে চলে যান, তখন একাকী শিশুটির ইন্টারনেট ব্যবহারে কোনো বাধা থাকে না, যা পরিবারের সবার লক্ষ রাখা উচিত। শিশুদের ইন্টারনেটে দৈনিক একটি নির্দিষ্ট সময়ে শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান দেখতে দেওয়া যেতে পারে। মাঝেমধ্যে শিশুদেরকে নিয়ে বাইরে বেড়াতে যান। শিশুদের বন্ধু হোন। তাদের বই উপহার দিন, প্রযুক্তিগত অনুষঙ্গ শিশুদের নাগালের বাইরে রাখুন। শিশুদের কিছুতেই মুঠোফোন ব্যবহার করতে দেওয়া যাবে না। প্রয়োজনে কম্পিউটার ও মুঠোফোনে পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন, যাতে পারদর্শী শিশুরা সহজেই তা ব্যবহার করতে না পারে। এই শিশুই ভবিষ্যতের কর্ণধার। সমাজে তাদের সুস্থভাবে বেড়ে উঠতে দেওয়াটাও এই সমাজেরই দায়িত্ব। তাই আপনার সন্তানের প্রতি যত্নবান হওয়াটা জরুরি।
*লেখক: সিনথিয়া সুমি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ
*নাগরিক সংবাদে লেখা পাঠাতে পারেন [email protected]এ