শীতের বিষণ্নতায় ঢেকে আছে কুবি

শীতের সকালে ঘাসের বুকে জমা থাকা শিশিরের স্পর্শ পায়ে মেখে ক্যাম্পাসে হাজির হতো হাজারো শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীদের তারুণ্যের উত্তাপে শীতের জবুথবু সকাল উদ্দীপ্ত হয়ে উঠত। ফ্যাকাল্টির সাদা দেয়ালগুলোর মন যেন হয়ে উঠত রঙিন। অথচ এবার যখন শীত এল, শিক্ষার্থী নেই ক্যাম্পাসে। ফাঁকা ক্যাম্পাসে কেউ নেই শিশির মাড়িয়ে দিতে। যে ঘাস শিশির মাড়িয়ে দেওয়ার জন্য মন খারাপ করত, সে আজ কুবির হাজারো শিক্ষার্থীদের অভাব মনেপ্রাণে অনুভব করছে। কেবল ঘাস নয়, শিক্ষার্থীদের অভাব অনুভব করছে শীতে কাবু হয়ে যাওয়া সাদা দেয়াল, নীল বাস, ক্লাসের বেঞ্চ কিংবা চায়ের দোকানগুলো। হয়তো ফ্যাকাল্টির এক দেয়াল আরেক দেয়ালের কাছে দুঃখের কথা বলে দীর্ঘশ্বাস ফেলছে। ওরাও হয়তো আজ বিষণ্নতায় ভুগছে।

নীল বাসগুলোর মনের অবস্থা কেমন? শিক্ষার্থীদের অত্যাচারে হয়তো অতিষ্ঠ এই বাসগুলো মনে মনে কেবল হাহাকার করছে। কবে আসবে শিক্ষার্থীরা। শহীদ মিনারে শিক্ষার্থীদের আসা–যাওয়া নেই। ’৫২–এর পরে কোনো শহীদ মিনার কি এত দিনব্যাপী কখনো একাকী হয়েছে? ক্যাম্পাসের খেজুরগাছগুলো হয়তো দুরন্ত ডানপিটে কিছু শিক্ষার্থীর কথা বারবার মনে করছে। কেননা এই ডানপিটে শিক্ষার্থীরা খেজুরের রস সংগ্রহ করত। মসজিদের বারান্দাটা কি শান্তির পরশ দিত শিক্ষার্থীদের! অথচ আজ শিক্ষার্থী নেই। কেউ এসে বিশ্রামের জন্য বসছে না এসে মসজিদের বারান্দায়। হলের ছাদে রোদ পোহানো হচ্ছে না। রাতের বেলা ব্যাডমিন্টন খেলা হচ্ছে না। প্রতিবছর ডিসেম্বর মাসে বিজয় মাসে বিভিন্ন খেলাধুলার আয়োজন করা হতো হলগুলোতে। তা কি আর হচ্ছে এই বছর। আর চায়ের দোকানগুলো? যেখানে বসে শিক্ষার্থীরা রাতে জুড়ে গান ধরত, শীতের রাতের নিস্তব্ধতা দূর করত; আজ হয়তো কেবলই নীরবতা।

সেই নীরবতা নিরবচ্ছিন্নভাবে চলছে। ঘড়ির কাঁটা এগিয়ে গেছে এক সেকেন্ড, দুই সেকেন্ড...হাজারো সেকেন্ড করে। তবু ভাঙছে না নীরবতা।

মহামারির জন্য কাজ করে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা, প্রার্থনা করছে হাজারো মানুষ, যাতে করে টিকা আবিষ্কার হয় কিংবা দূর হয় এই মহামারি। এই হাজারো মানুষের সঙ্গে প্রার্থনায় বসেছে আজ এই চায়ের দোকান, নীল বাস কিংবা কাঁঠালতলা। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০ একর জমি যেন তার সবটুকু ভালোবাসা নিয়ে তার শিক্ষার্থীদের ডাকছে। শিক্ষার্থীদের মনের অবস্থা তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রাণাধিক শিশুটি হারিয়ে গেলে মায়ের যে অনুভূতি, ক্যাম্পাস থেকে দীর্ঘ বিচ্ছেদে শিক্ষার্থীদের মনের অবস্থাও তাই। শিক্ষার্থীদের মন কেবলই ছটফট করছে। শিগগিরই হয়তো ক্যাম্পাস খুলছে না। ফলে বলা যায়, এই শীতে কুবি প্রাণহীন হিমশীতল হয়েই কাটাবে। শীতের ঘন কুয়াশায় হয়তো মিলিয়ে যাবে কুবির মলিন মুখ। কুবি হয়তো মনেপ্রাণে চাইবে এমন শীত যেন আর কুবির জীবনে না আসে। তবে আমরা চাই মহামারি কেটে যাক খুব দ্রুত। মিলন ঘটুক ক্যাম্পাস আর শিক্ষার্থীদের। আর এই মিলনে শব্দবোমা আর আনন্দবোমা ফেটে পড়ুক ক্যাম্পাসজুড়ে। শীত নয়, চিরবসন্ত নামুক কুবির প্রতিটা কোনায় কোনায়।

* লেখক: শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়[email protected]