শিশু-কিশোরদের খেলাধুলার সুযোগ নেই শহুরে জীবনে

সিলেট নগরের শাহি ঈদগাহ খেলার মাঠে পণ্য প্রদর্শনীতে শিশুদের আনন্দ-উৎসবে মেতে উঠতে দেখা গেছে
ছবি: লেখক

একটা সময় ছিল, যখন সিলেট নগরে অনেক খেলার মাঠ ছিল। সে মাঠগুলোতে খেলাধুলা করত শিশু-কিশোরেরা। অথচ এখন আর এসব করার সুযোগ কোথায়। সিলেট জেলা স্টেডিয়াম ছাড়াও ফুটবল, রেজিস্টারি মাঠ, পুলিশ লাইনস মাঠ, আলিয়া মাদ্রাসা মাঠ, ওসমানী মেডিকেল কলেজ মাঠ, এম সি কলেজ মাঠ, শাহি ঈদগাহ খেলার মাঠ অন্যতম। এ ছাড়া পাড়া-মহল্লার মাঠ তো ছিলই। এসব মাঠের বেশির ভাগ এখন শুধুই স্মৃতি।

কারণ, ওসমানী মেডিকেল কলেজ খেলার মাঠে গড়ে উঠেছে নার্সিং হোম ও ইন্টার্ন আবাসিক ভবন। রেজিস্টারি মাঠ হকারদের দখলে। পুলিশ লাইনস মাঠে প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত। সিলেট আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে বছরজুড়ে ওয়াজ-মাহফিল, সভা-সমাবেশসহ নানা কাজ পরিচালিত হওয়ায় সেখানে আর খেলার সুযোগ কোথায়?
সিলেট সিটি করপোরেশন বলছে, শিশুদের জন্য খেলার মাঠ কিংবা পার্ক তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হলেও নগরে সিংহভাগই ব্যক্তিমালিকানাধীন জায়গা থাকায় তারা কার্যত কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছে না।

তাই তো শিশুদের জীবন এখন ইট–কাঠ–পাথরের জঞ্জালে চাপা পড়ে যাচ্ছে স্বাভাবিক বিকাশ।

কিন্তু শহুরে অভিভাবকেরা একটু সুযোগ পেলেই ছোটাছুটিসহ বিনোদনের জন্য বিনোদন পার্ক, চিড়িয়াখানা, বিভিন্ন প্রদর্শনীতে শিশুদের নিয়ে যান একটু স্বস্তির জন্য।
গত শনিবার (২০ মার্চ) সিলেট নগরের শাহি ঈদগাহ খেলার মাঠে পণ্য প্রদর্শনীতে বেশ কিছু শিশুকে আনন্দ-উৎসবে মেতে উঠতে দেখা গেছে। আয়োজকেরা পণ্য প্রদর্শনীতে শিশুদের জন্য নানা বিনোদনের ব্যবস্থা রেখেছেন।

পণ্য প্রদর্শনী মেলায় শিশুদের জন্য নানা বিনোদনের ব্যবস্থা আছে
ছবি: লেখক

নগরের মদিনা মার্কেট এলাকার মাসুম আহমদের স্কুলপড়ুয়া ছেলেকে নিয়ে তিনি প্রদর্শনীতে এসেছেন। জানিয়েছেন, তাঁর কেজি ওয়ানে পড়ুয়া ছেলে রাফি সারা দিন ইন্টারনেট গেমস নিয়ে বসে থাকে। শহরের আশপাশে ওসমানী শিশুপার্ক ছাড়া আর কোনো বিনোদন পার্ক নেই। সেটির পরিবেশও নোংরা, শিশুরা যেতে চায় না। আর ড্রিমল্যান্ড পার্ক শহর থেকে অনেক দূরে। চাইলেই বাচ্চাদের নিয়ে সেখানে যাওয়া সব সময় সম্ভব হয় না। তাই এখানে আসা।

এসব বিষয় নিয়ে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক হিমাংশু লাল রায় বলেছেন, শহরের মানুষ মৌমাছির চাকের মতো বসবাস করছে। এতে মানসিক যে বিকাশের প্রয়োজন, সেটি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিশেষ করে শিশুদের মানসিক বিকাশে এর প্রভাব পড়ছে সব থেকে বেশি। পাশাপাশি রয়েছে পড়াশোনার প্রতিযোগিতা। এই দুই চাপ সামলাতে গিয়ে মানুষের মতো মানুষ গড়ে ওঠা এখন অলীক ভাবনা ছাড়া আর কিছুই না। সভ্য দেশ হতে হলে অর্থনৈতিক দিকের পাশাপাশি মানবিক দিক দিয়ে সভ্য হতে হবে। যেটি একমাত্র সম্ভব যখন শিশুরা প্রকৃতির কাছে যাবে, মানবিক দিক তার ফুটে উঠবে।

*লেখক: কামরুল ইসলাম মাহি, সিলেট

**নাগরিক সংবাদে [email protected]–এ লেখা পাঠাতে পারেন