শিক্ষার অহংকার, ‘আমরা চাষাভূষা নই’

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার রাতে উপাচার্যের বাসার সামনে এই কুশপুত্তলিকাটি রেখেছেন তাঁরা।ছবি: আনিস মাহমুদ

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এখন দেশের আলোচিত ঘটনা। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে পুলিশের বর্ণনাতীত হামলার মাধ্যমে পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণের পর শিক্ষার্থীরা ভিসির পদত্যাগের দাবি জানান।

শিক্ষার্থীদের এরূপ আন্দোলনের মধ্যে শিক্ষকদের জন্য অপমানজনক স্লোগান দেওয়ার অভিযোগ তোলে শিক্ষকেরা বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের সময় অধ্যাপক লায়লা আশরাফুন বক্তব্যের একপর্যায়ে বলেন, ‘আমরা কোনো চাষাভূষা নই যে আমাদের যা খুশি তাই বলবে।’ অধ্যাপকের এমন মন্তব্য কখনোই কাম্য নয়। তিনি হয়তো জানেন না পূর্ব পাকিস্তান কিংবা স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষের মূল পেশা কৃষি। কৃষক পিতা ও কৃষি পরিবার থেকেই আমাদের উত্থান।

আমাদের শিকড় নিয়ে তাচ্ছিল্য করে কথা বলার অধিকার আপনার কিংবা আপনাদের মতো শিক্ষকদের নেই। সব সাধকের সব সাধক আমার দেশের চাষা। কৃষি ও কৃষক আমাদের গৌরব ও অহংকারের জায়গা।

শাবিপ্রবিতে আন্দোলনের সূত্রপাত যেভাবে—আন্দোলনের কারণ সম্পর্কে শাবিপ্রবির শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে জানা যায়, ছাত্রীরা ডাইনিংয়ের খাবারের মান বাড়ানো, ক্যানটিনের খাবারের দাম কমানো, ওয়াইফাই স্পিড বৃদ্ধি, সুপেয় পানির মান বৃদ্ধি, ছাত্রী অসুস্থ হলের ছাত্রীর গার্জিয়ান/মাকে হলে প্রবেশের অনুমতি, হলের টয়লেট ও গোসলখানা যথাযোগ্যভাবে পরিষ্কার, চারজনের থাকার জন্য নির্মিত সব কক্ষে জোরপূর্বক পাঁচজনকে থাকতে বাধ্য না করা নিয়ে প্রভোস্টের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চাইলে তিনি জঘন্যতম আচরণ শুরু করেন ফোনালাপে। তিনি আসতে অসম্মতি জানিয়ে, বের হয়ে গেলে বের হয়ে যাও। আমি আসতে পারব না। কেউ কি মারা গেছে? মারা গেলে তখন দেখা যাবে। ইত্যাদি অসম্মানজনক, আপত্তিকর ও ক্ষোভ উদ্রেককারী মন্তব্য করেন। প্রভোস্ট না এলে হলের ছাত্রীরা ৩০ মিনিটের মধ্যে হল ছেড়ে বেরিয়ে যাবে বললে তিনি বলেন, ‘বের হয়ে যাও। লজ্জা থাকলে রুমে ঢুকবা না।’ তখন মেয়েরা রাতে ৯টার পর হল থেকে বের হয়ে প্রভোস্টের পদত্যাগসহ ৩ দফা দাবিতে উপাচার্যের ভবনের বাইরে গিয়ে বসে জড়ো হয়ে স্লোগান দেওয়ার মাধ্যমে আন্দোলন শুরু করেন।

একই দিনে রাত ৩টার পর ভিসি তার ভবন থেকে বের হয়ে বলেন পরের দিন বেলা ১১টায় তাঁকে যেন শিক্ষার্থীরা লিখিত অভিযোগ জানায়। মেয়েরা লিখিত অভিযোগ করলে তখন ভিসি বলেন, প্রভোস্টের পদত্যাগের দাবি মানা যাবে না। এ ছাড়া হলের অন্যান্য সমস্যা এক মাসের মধ্যে মিটিয়ে দেব। মেয়েরা তা কিছুতেই মানে না এবং আন্দোলন চালু করে। বর্তমানে ভিসির পদত্যাগের দাবিতে আমরণ অনশনের ঘোষণা দিয়ে অনশন করছেন অনেক শিক্ষার্থী।

*নাগরিক সংবাদে লেখা ও ছবি পাঠানো ঠিকানা [email protected]