শান্ত চত্বরের সেই চা
সন্ধ্যায় শান্তচত্বরের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম। দেখতে পাই আমার পরিচিত দুই বন্ধু দাঁড়িয়ে আছে। তাদের সঙ্গে দেখা করার জন্য আগ্রহ নিয়ে এগিয়ে গেলাম। একজন চায়ের কাপ হাতে, অন্যজন পাশে দাঁড়িয়ে আছে। তার সামনে দুই কাপ চা রাখা। পাশে এক ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে চাওয়ালার থেকে কিছু একটা হয়তো কিনছিলেন। এগোতেই আমার নজর ওই দুই কাপ চায়ের ওপর গিয়ে পড়ল। স্বভাবত যেহেতু একজন চায়ের কাপ হাতে দাঁড়িয়ে আছে, বাকি দুই কাপের এক কাপ অপরজনের আর বাকিটা আমার জন্য ভাবতেই পারি। তা ছাড়া চায়ের কাপের দিকে এগিয়ে আসতে আসতেই একজন বলে উঠল, ‘চা খাবি?’
তো সব হিসাব যখন মিলে যাচ্ছে, তখন আর চা খাওয়ার জন্য কারও বিশেষ অনুমতি নেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। এই ভেবে আমি দাঁড়িয়ে থাকা বন্ধুদের সঙ্গে কথা না বলেই সরাসরি চায়ের কাপ নিয়ে খাওয়ার প্রস্তুতি শুরু করছিলাম। তা ছাড়া কিছুক্ষণের বৃষ্টি আবহাওয়াটাকে একদম চা খাওয়ার উপযোগী করে তুলেছে। তাই ধোঁয়া ওঠা চায়ের লোভটা সামলাতে পারছিলাম না।
তো চায়ের কাপে একটা চুমুক দিয়েই খুব সতেজ অনুভব করলাম। কিন্তু সামনে দেখি আমার এক বন্ধু মুখ চেপে ধরে হাসছে, অন্যজন ওখান থেকে দৌড়ে পালাতে পারলে বাঁচে। সেই সঙ্গে বারবার ওই চাওয়ালার থেকে কিছু কিনতে থাকা ভদ্রলোকটার দিকে তাকাচ্ছিল। ঘটনা তখনো কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। আরও একবার চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে ভদ্রলোকের দিকে ইঙ্গিত করে বললাম, ওদের চেনা নাকি। তা ছাড়া বারবার তাকানো দেখে ধারণা করলাম, ভদ্রলোক হয়তো আমার বন্ধুদের পরিচিতি, তিনিই হয়তো চা খাওয়াচ্ছেন।
কিন্তু অবাক বিষয় হলো, ওরা কেউ তাঁকে চেনে না। আমি তো তখন আকাশ থেকে বৃষ্টির ফোঁটার মতো টপ করে পড়ে গেলাম, কিন্তু এ পড়ায় কোনো শব্দ হলো না। আরও এক চুমুক দেব দেব, তখনই নিঃশব্দে হাত থেকে কাপটা রেখে দিয়ে ভদ্রলোকের দিকে তাকিয়ে অপরাধসূচক একটা হাসি দিয়ে দুনিয়ার সবচেয়ে নিষ্পাপ মুখটা তাঁর সামনে হাজির করে আমতা–আমতা করতে লাগলাম। তিনি আমার দিকে তাকিয়ে মনে মনে কী ভাবছিলেন, তিনিই ভালো বলতে পারবেন। তিনি হয়তো সৌজন্যের খাতিরে সাবলীলভাবে বলে উঠলেন, ‘আরে সমস্যা নেই, খেয়ে ফেলো!’
পরক্ষণেই আরও একটু আন্দাজ করতে পারলাম, খানিক দূরে বিবিএ বিল্ডিং থেকে এক ভদ্রমহিলা সব লক্ষ করছিলেন। ভদ্রলোক আর ভদ্রমহিলার রসায়নটা বোঝার চেষ্টা করলাম। হয়তো তিনি অপেক্ষায় ছিলেন দুজন মিলে চায়ের কাপে চুমুক দেবেন আর মনের কোণে জমে থাকা কথাগুলো বলতে থাকবেন। একসময় চা ফুরিয়ে যাবে, কিন্তু তাঁদের কথা শেষ হবে না। কিন্তু আমি হয়তো তাঁর অপেক্ষার প্রহর আরেকটু বাড়িয়ে দিলাম। যা হোক, ভদ্রলোক নতুন আরেক কাপ চা কিনতে লাগলেন তাঁর প্রেয়সীর জন্য। আমি চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে দ্রুত স্থান ত্যাগ করলাম আর ভাবলাম, ‘যাঃ পলায়েত স জীবতি’।
*লেখক: আসাদুজ্জামান আপন, শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়