মেয়েটির আঁচলখানি

টিএসসির মোড়ে হঠাৎ একটি মেয়ের সঙ্গে আমার দেখা। রিকশা চলছে। সে রিকশায় বসে আছে। তার কোলে একটা বই। বইটা সকালের মিষ্টি রোদে গা এলিয়ে দিয়ে শুয়ে-শুয়ে ভিটামিন-ডি গায়ে মাখছে। মেয়েটির আঁচলখানি চাকায় আটকে যাচ্ছে, সেদিকে তার কোনো খেয়াল নেই। ফুটপাতে দাঁড়িয়ে আমি চায়ের তৃষ্ণা নিবারণ করছি। এ কী! মেয়েটির মস্ত বিপদ! দোকানিকে চায়ের বিল না মিটিয়ে বাঁচাতে এলাম।

আঁচলটা তুলে দিয়ে আপন মানুষের মতো একটু শাসনের সুরে বললাম, ‘দেখেশুনে চলতে পারেন না? এক্ষুনি তো বড় একটা দুর্ঘটনা ঘটে যেত।’
মেয়েটি ধন্যবাদ না দিয়ে হাসল। ‘আমি কি কোনো হাসির কথা বলেছি?’

‘উঁহু, উঠুন, আপনি যেখানে যাবেন আমি নামিয়ে দেব।’
‘না, না। আমি হেঁটেই যেতে পারব। প্রতিদিনই তো যাই। আমার অভ্যেস হয়ে গেছে। তেমন একটা কষ্ট হয় না।’
‘আচ্ছা, না উঠলে নাই। আমি এখন যাই।’

কী মনে করে যেন উঠে পড়লাম। রিকশাওয়ালা দুই প্যাডেল মারার আগেই আবার নেমে পড়লাম। আমার তো চায়ের বিলই দেওয়া হয়নি।

মেয়েটি আমার কাণ্ডকারখানা দেখে হুড তোলা রিকশার পেছন দিক থেকে মুখ বের করে হাসতে হাসতে বলল, ‘এই যে শুনুন, আমাদের আর দেখা হবে না কখনো?’

আমি হেঁটে যেতে যেতে বললাম, ‘হ্যাঁ, আমাদের দেখা হবে হয়তো। পৃথিবীটা খুব বেশি বড় নয় যে আমাদের দেখা হবে না। আমাদের দেখা হবে, কথা হবে, বুকের মধ্যে জমিয়ে রাখা কথাদেরও কথা হবে। ভালো থাকবেন। শাড়ির আঁচলটাকে একটু যত্ন করে ধরে রাখবেন।’