মিয়ানমারের জনগণ না জান্তা, কাদের ত্রাতা হতে চান প্রধানমন্ত্রী হুন সেন

৭ জানুয়ারি নেপিডোতে প্রধানমন্ত্রী হুন সেন ও জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লাইংছবি: এএফপি

সামরিক অভ্যুত্থান–পরবর্তী মিয়ানমারের জটিল রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা সংকটে প্রথম বিদেশি সরকারপ্রধান হিসেবে দুই দিনের (৭-৮ জানুয়ারি) সফরে মিয়ানমারে আসেন প্রতিবেশী কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন সেন। তাঁর এ সফরকে কেন্দ্র করে মিয়ানমারের গণতন্ত্রকামী সাধারণ জনগণ, ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট (এনইউজি), জাতিসংঘের সহযোগী সংগঠন ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার গ্রুপগুলোর মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ও নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা গেছে। যদিও বিশ্বের প্রায় ৪০টি দেশের মিয়ানমার দূতাবাসে জান্তা সমর্থিত স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কাউন্সিল (এসএসি) প্রতিনিধিত্ব করছে, কিন্তু গত বছরের ১ ফেব্রুয়ারি সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখলের পর এটাই প্রথম কোনো সরকারপ্রধানের মিয়ানমার সফর।

হুন সেনের সফরটির বাড়তি মাত্রা পাওয়ার আরেকটি কারণ, কম্বোডিয়া চলতি বছর আসিয়ানের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে। গত বছর এপ্রিলে আসিয়ান ঘোষিত ৫ দফা ঐকমত্য বাস্তবায়নে জান্তা সরকার ব্যর্থ হলে ৩৮তম আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করা থেকে দেশটিকে বাদ দেওয়া হয়। তাই, মিয়ানমারের জনগণের ইচ্ছা এবং আসিয়ানের ঐক্যবদ্ধ অবস্থানকে পাশ কাটিয়ে আসিয়ান নেতা হিসেবে মিন অং হ্লাইংয়ের সঙ্গে হুন সেনের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক স্বভাবতই প্রশ্নের উদ্রেক করে—হুন সেন আসলে মিয়ানমার জান্তার ত্রাতা হয়ে এসেছেন, নাকি সাধারণ জনগণের? কারণ, হুন সেনের এ সফর হয় জান্তার ওপর ক্রমবর্ধমান আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক চাপ কমানোর কোনো ব্যাকডোর ডিপ্লোম্যাসি বাস্তবায়নের অংশ, নতুবা আসিয়ানের নতুন নেতা হিসেবে জান্তা সরকারের সঙ্গে সংগঠনটির জমাটবাঁধা বরফ গলানো এবং ঘোষিত ৫ দফা ঐকমত্যের ভিত্তিতে মিয়ানমারে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার একটি ভিন্নধর্মী পদক্ষেপ।

নৃশংসতার নতুন রূপ
চলমান জান্তাবিরোধী সশস্ত্র সংগ্রাম নিয়ন্ত্রণে একের পর এক ভয়াবহ ও নির্মমতার নতুন দৃষ্টান্ত তৈরি করছে তাতমাদা। এর মাধ্যমে জান্তা সরকার মূলত কঠোর বার্তা দিচ্ছে—যেকোনো বিক্ষোভ বা আন্দোলন দমনে তারা সর্বোচ্চ কঠোর হতে পারে। গত মাসের শেষের দিকে (২৪ ডিসেম্বর) রাজধানী নেপিডো থেকে ৭০ মাইল পূর্বে কায়াহ প্রদেশে নারী, শিশুসহ ৩৫ জন বিক্ষোভকারীকে হত্যা করে লাশ পুড়িয়ে ফেলে তাতমাদা। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এটি ‘ক্রিসমাস ইভ গণহত্যা’ নামে প্রচারিত হলে বৈশ্বিক মানবাধিকার সংগঠন ও জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা এ হত্যার তীব্র নিন্দা করে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন সমালোচনার পাশাপাশি জান্তার কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধের আহ্বান জানান।

তারপরও বিক্ষোভ দমনে জান্তা সরকারের পোড়ামাটি নীতির ফলে প্রতিদিন শত শত মানুষ জীবন বাঁচাতে থাইল্যান্ড ও সেভেন সিস্টার্স (ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যসমূহ) সীমান্তে জড়ো হচ্ছে। মানবাধিকার সংগঠনের হিসাবে, সামরিক অভ্যুত্থানের পর জান্তা বাহিনীর আগ্রাসী আক্রমণে এখন পর্যন্ত ২ লাখ ৮৪ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। মিয়ানমারভিত্তিক মনিটরিং গ্রুপ, অ্যাসিসট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স (এএপিপি), অনুসারে ১ ফেব্রুয়ারির সামরিক অভ্যুত্থানের পর চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত জান্তাবিরোধী আন্দোলনে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে ১ হাজার ৪৬৯ জন নিহত এবং ১১ হাজার ৫৫৪ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। একই সঙ্গে বিভিন্ন অভিযোগে জান্তা নিয়ন্ত্রিত সামরিক আদালতে অং সান সুচিসহ এনএলডি পার্টির বিভিন্ন স্তরের নেতা–কর্মী, জাতীয় ঐক্য সরকারের সমর্থক, মানবাধিকারকর্মী ও সাংবাদিকদের প্রহসনমূলক বিচারের মুখোমুখি করা হচ্ছে। জান্তা নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যম অনুযায়ী ৯০ জনের বেশি মানুষকে সামরিক আদালতে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতার হুমকিতে জান্তা
জান্তা সরকারের ওপর বড় আঘাতটি আসে আসিয়ানের দিক থেকে। গত বছরের ২৬-২৮ অক্টোবর ব্রুনাইয়ে অনুষ্ঠিত আসিয়ানের শীর্ষ সম্মেলনে জান্তা সরকারকে মিয়ানমারের প্রতিনিধিত্ব করতে দেওয়া হয়নি। এ ছাড়া চীনে আয়োজিত চীন-আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলন, কম্বোডিয়ায় অনুষ্ঠিত ১৩তম এশিয়া-ইউরোপ মিটিং (আসেম), জলবায়ু ও দুর্যোগবিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনসমূহে জান্তা সরকারের প্রতিনিধিকে অংশগ্রহণ করার সুযোগ দেওয়া হয়নি। এ ছাড়া জাতিসংঘে এনএলডি সরকার নিয়োগ করা মিয়ানমারের দূত কিও মো টুনকে সরিয়ে সাবেক সেনা অফিসার অং থুরেইনকে নিয়োগ দিতে সামরিক জান্তার অনুরোধও ১ ডিসেম্বর ২০২১ জাতিসংঘের ক্রিডেনশিয়াল কমিটি প্রত্যাখ্যান করে।

এরই মধ্যে গত মাসের ১০ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং কানাডা নতুন করে যৌথভাবে মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুটি প্রতিষ্ঠান এবং একটি সংস্থার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এদের মধ্যে রয়েছে সামরিক বাহিনী ও পুলিশের জন্য অস্ত্র প্রস্তুতকারক ডিরেক্টরেট ফর ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রিজ, কোয়ার্টার জেনারেল অফিস, ডিরেক্টরেট ফর ডিফেন্স প্রকিউরমেন্ট এবং মিয়ানমার ওয়ার ভেটার্ন অর্গানাইজেশন। এর পাশাপাশি বাগো, কায়িন, কাচিন ও মান্দালয়ের চারজন মুখ্যমন্ত্রীকেও টার্গেট করেছে মার্কিন রাজস্ব বিভাগ।

হুন সেন-মিন অং হ্লাইং বৈঠক
অভ্যন্তরীণভাবে পিডিএফ ও অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে যুদ্ধ এবং আন্তর্জাতিকভাবে ক্রমেই আইসোলেটেড হওয়ার চাপে থাকা জান্তার সঙ্গে আলোচনা করতে ৭ জানুয়ারি নেপিডো বিমানবন্দরে অবতরণ করেন কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন সেন। সেখানে জান্তা সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উনা মং লুইন তাঁকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান এবং লাল গালিচা সংবর্ধনা দেন। অন্যদিকে এই সফরের প্রতিবাদে মিয়ানমার ও কম্বোডিয়ার ২০০টি সিভিল সোসাইটি অর্গানাইজেশন নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে, ইয়াঙ্গুনে কম্বোডিয়ান দূতাবাসের কাছে সিরিজ বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া মিয়ানমারের মান্দালয়, তানিনথারি, দেপায়িন ও মোনিওয়া অঞ্চলে গণতন্ত্রপন্থীদের ব্যাপক বিক্ষোভ করতে দেখা গেছে। এ সময় তাঁদের হাতে ‘স্বৈরশাসক হুন সেনকে চাই না’, ‘ইউ আর নট ওয়েলকাম’, ‘শেম অন ইউ, হুন সেন’ লেখা পোস্টার দেখা যায়। মিয়ানমার নেটিজেনদের প্রবল নিন্দা ও আক্রমণের শিকার হয়েছে হুন সেনের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজও।

৭ জানুয়ারি রাতে হুন সেন নেতৃত্বাধীন সাত মন্ত্রী, সেনাবাহিনীর ডেপুটি কমান্ডার-ইন-চিফসহ কম্বোডিয়ার প্রতিনিধিদলের সঙ্গে জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লাইং ও সামরিক সরকারের নেতাদের বৈঠকে উভয় পক্ষ পারস্পরিক অভিন্ন স্বার্থ ও উদ্বেগসম্পর্কিত দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক বিষয় নিয়ে ১৪০ মিনিট আলোচনা শেষে একটি যৌথ ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা হয়। এ আলোচনার তিনটি প্রধান ও সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত (আশ্বাস!) হলো—
এক—জান্তা ঘোষিত যুদ্ধবিরতি চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে বাড়িয়ে ডিসেম্বর পর্যন্ত করার সিদ্ধান্ত। দুই—কোনো রকম বৈষম্য ছাড়া মানবিক সহায়তা ও টিকাদান কর্মসূচি ত্বরান্বিত করতে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে বৈঠকের সুযোগ। তিন—আসিয়ানের বিশেষ দূতকে মিয়ানমারের শান্তি আলোচনায় যুক্ত করা এবং সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করার সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত।

হুন সেন কেন জনগণের ত্রাতা নন
কম্বোডিয়ার সরকার ও সরকার নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যম ‘খেমার টাইমস’ মিয়ানমার সংকট সমাধানে হুন সেনের সফরকে শান্তিপ্রক্রিয়ায় ইতিবাচক অগ্রগতি এবং হুন সেনকে মিয়ানমার জনগণের জন্য ত্রাতা হিসেবে উপস্থাপন করেছে। কম্বোডিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রাক শোখোন বলেন, যাঁরা যুদ্ধবাজ এবং মিয়ানমারকে অস্থিতিশীল দেখতে চান, তাঁরাই কেবল হুন সেন-মিন অং হ্লাইং বৈঠকের বিরোধিতা করছেন। কিন্তু প্রকৃত সত্য হচ্ছে, কয়েক বছর ধরেই জান্তা সরকার নাটকীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং দ্রুত সেটি পরিবর্তনের জন্য পরিচিত হয়ে উঠেছে। আবার গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ বাস্তবায়নে যেহেতু কোনো আইনগত বাধ্যবাধকতা নেই, সুতরাং স্বতঃসিদ্ধ হিসেবে ধরে নেওয়া যায়, স্বার্থবিরোধী যেকোনো পরিস্থিতিতে জান্তা তার অবস্থান পাল্টে ফেলবে এবং নতুন কোনো পরিস্থিতি তৈরি করবে।

হুন সেনের সফর যেসব কারণে সাধারণ জনগণের আস্থা হারিয়েছে, সেগুলো হলো—
প্রথমত: বর্তমানে মিয়ানমার জান্তার সঙ্গে জাতীয় ঐক্য সরকার সমর্থিত পিপলস ডিফেন্স ফোর্স (পিডিএফ) ও অন্যান্য সশস্ত্র ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর যুদ্ধ চলমান থাকলেও জান্তা প্রতিশ্রুত যুদ্ধবিরতি কেবল নির্দিষ্টসংখ্যক সশস্ত্র গ্রুপের জন্য কার্যকর। কারণ, এই আলোচনায় জাতীয় ঐক্য সরকারের কোনো প্রতিনিধি উপস্থিত না থাকায় এবং কাচিন ইনডিপেনডেন্স আর্মি, কারেন ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি ও আরাকান আর্মির মতো সশস্ত্র দলগুলো আগে থেকেই জান্তা প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি মেনে না নেওয়ায় মিয়ানমারে কার্যত যুদ্ধাবস্থা বজায় থাকবে।

দ্বিতীয়ত: আসিয়ানের ৫ দফা ঐকমত্যের দ্বিতীয়টি হচ্ছে সংকট সমাধানের উপায় খুঁজতে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে গঠনমূলক সংলাপ করা। কিন্তু মিন অং হ্লাই-হুন সেন বৈঠকে মিয়ানমারের গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের নেতা অং সান সুচির মুক্তি, ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্টের সঙ্গে সংঘাত কমানোর বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। এমনকি এনএলডিসহ অন্যান্য গণতান্ত্রিক দলের সঙ্গে সংলাপের কোনো ইঙ্গিতও দেননি হুন সেন। অথচ মিয়ানমারকে গণতান্ত্রিক ধারায় ফেরাতে ২০২৩ সালের নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে এ ধরনের আলোচনা খুবই প্রাসঙ্গিক ছিল।

তৃতীয়ত: এ ধরনের একতরফা আলোচনা মিয়ানমার সংকট সমাধানে আসিয়ানের ঐক্যবদ্ধ অবস্থানকে দুর্বল করবে এবং আসিয়ান ঘোষিত ৫–দফা বাস্তবায়নের সমন্বিত কূটনৈতিক প্রচেষ্টাকেও বাধাগ্রস্থ করবে। ইতিমধ্যে ১৮-১৯ জানুয়ারি কম্বোডিয়ায় আসিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলন হওয়ার কথা থাকলেও মিয়ানমার জান্তার প্রতিনিধিত্বের প্রশ্নে তা বাতিল করা হয়।

চতুর্থত: মিয়ানমারের প্রকৃত রাজনৈতিক সংকটের আরেকটি প্রধান ইস্যু রোহিঙ্গা সংকটকেও এ বৈঠকে পাশ কাটিয়ে গেছেন হুন সেন। তবে তাঁর সফরের কয়েক ঘণ্টা আগে মিয়ানমার নাটকীয়ভাবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর জন্য দ্বিপক্ষীয় আলোচনার প্রস্তাব দেয় বাংলাদেশকে। যদিও চাপ কমানো এবং সময়ক্ষেপণের জন্য সামরিক জান্তার রোহিঙ্গা কার্ড সামনে নিয়ে আসা নতুন কিছু নয়। সম্প্রতি প্রথম আলোয় প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে আরাকান আর্মির প্রধান জেনারেল নাইং দাবি করেন, বর্তমানে রাখাইনে তাঁরা বিচারব্যবস্থা, ট্যাক্স ও পুলিশ প্রশাসন চালুর মাধ্যমে একটি শক্ত অবস্থান তৈরি করেছেন। তাই আরাকান আর্মিকে বাদ দিয়ে রাখাইনে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের যেকোনো আলোচনা সফল হবে না বরং এটি রোহিঙ্গা সমস্যাকে আরও জটিল ও দীর্ঘায়িত করবে।

তাই বলা যায়, জাতিসংঘসহ বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক বিভিন্ন ফোরামে প্রতিনিধিত্ব করতে না পারার ব্যর্থতা, ইউরোপ ও পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞা এবং ক্রমেই তীব্র হওয়া জান্তাবিরোধী সশস্ত্র আন্দোলনসহ নানামুখী চাপে পড়েছে মিয়ানমার জান্তা। আর তাকে স্বস্তি দিতেই ত্রাতা হিসেবে হাজির হয়েছেন হুন সেন। মূলত ২০২২ সালে কম্বোডিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনে জান্তাকে যুক্ত করে আঞ্চলিক স্বীকৃতি আদায় করতে হুন সেন নতুন এক প্রেক্ষাপট তৈরি করেছেন এই সফরের মাধ্যমে। কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা, এই ব্যাকডোর ডিপ্লোম্যাসির প্রধান দুই অ্যাক্টর হলো চীন ও জাপান। আর এটি বাস্তবায়নে খলনায়কের ভূমিকায় সামনে আছেন হুন সেন। এ ক্ষেত্রে স্বৈরশাসক হুন সেনের কৌশল হলো—মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রশ্নে ইমেজসংকটে থাকা কম্বোডিয়ার অভ্যন্তরীণ রাজনীতি থেকে জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে সরানো।