করোনাভাইরাস আমাদের ভাবনার জগতে অনেক পরিবর্তন এনেছে। যা আমরা ভেবেছিলাম, তা করতে পারছি না। কিন্তু যা ঘটছে, তা কেউ কখনো ভাবিনি। করোনার করালগ্রাসে অনেক সময় মানুষ সিদ্ধান্তে বাঁক আনতে বাধ্য হচ্ছে। ঈদযাত্রায়, ঈদ আয়োজনে করোনার প্রভাবে সব শ্রেণির মানুষ প্রভাবিত। দিন এনে দিন খাওয়া মানুষগুলো করোনায় শুধু ঋণগ্রস্ত হয়েছেন কি? বরং সঙ্গে প্রচ্ছন্ন হতাশাও হাতছানি দিয়েছে। সাধারণ মানুষের ঈদ আয়োজনে প্রাণ ছিল না। তা হতে পারে প্রিয়জনের অসুস্থতা, স্বল্প সময়ের ঈদ অথবা দীর্ঘ বিধিনিষেধে কর্মহীনতার কারণে। কিন্তু হায়, মানুষের কীই–বা করার রয়েছে! মানুষ তো আর প্রকৃতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে না। ভাগ্যবিধাতার ইচ্ছায় করোনাকে সঙ্গে নিয়ে আমরা চলছি।
জন্মস্থান বাড়ির বাইরে আমি এই দ্বিতীয় বছর ঈদ যাপন করেছি। এ ঈদে আমার মা আমার সঙ্গে ছিল না। প্রথমবার মাকে ছাড়া ঈদ করলাম! জীবনের শুরুতেই বাবাকে হারিয়ে মায়ের সঙ্গে ঈদ করে কখনো শূন্যতা অনুভব করিনি। এই প্রথমবার ঈদ অসম্পূর্ণ মনে হয়েছে। আমি কাউকে ঈদের শুভেচ্ছা বার্তা পাঠাইনি। সাধের ফেসবুকেও আমার ওয়াল থেকে কাউকে উইশ করিনি! একধরনের অস্থিরতা ছিল মনে।
আমার মা এক মাস পূর্বে আমার বড় বোনের বাসা রাজশাহীতে গেছে। যাওয়ার কয়েক দিন পর থেকেই রাজশাহীতে বিধিনিষেধ! এরপর সারা দেশে বিধিনিষেধ। মেয়ের বাসায় গিয়ে আটকে গেছে মা। সারা জীবন আমার মা ঈদের দিন কোরবানির মাংস নিজ হাতে বিলি করত। এ ঈদে তা হলো না। ঈদের কয়েক দিন আগে গণপরিবহন চালু করা হলেও বাস্তবতার নিরিখে আমি, আমার বোন, মা—কেউই স্থান ত্যাগ করা সমীচীন বলে মনে করিনি।
ঈদে মা কাছে ছিল না, ভিন্ন অনুভূতি হয়েছে। চাইলে ভিড় ডিঙিয়ে, বাধা দূর করে মায়ের কাছে রাজশাহীতে যেতে পারতাম সত্যি। পরিস্থিতি বিবেচনায় আমি যাইনি! মা তুমি যেখানেই থাকো ভালো থাকো, সুস্থ থাকো। সবার মা ভালো থাকুক, সুখে থাকুক সবার মা।
ঈদের পরের দিনগুলো মায়ের সঙ্গে সবার ভালো কাটুক।