মধ্যবিত্তের গল্প

ফাইল ছবি

‘আপনি মধ্যবিত্ত?’
‘কী করে বুঝলেন?’
‘এক কাপ চা আর বনরুটি
এই ভরদুপুরে……’
‘আসলে আমি বিত্তহীন।’
‘তা–ই বলুন, আমারই মতো।’
‘আপনার মতো মানে?’
‘ওই যে ফুটো কলসি।’
‘আমি জানি না, আমি কার মতো।’

‘আপনি কেন, কোনো কাগজের লোকেরাই জানে না
তারা আসলে কার মতো।’
‘আপনিও কি....?’
‘হুম, গত দুবছরে মাত্র চারবার
কিছু কিছু করে পেয়েছি।
জানেন, শুধু সাংবাদিক হব বলে
বাবা অনেক কষ্ট করে আমাকে
একটা নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িয়েছেন।’
‘বেশ তো! এখন চা-পাউরুটি খেয়েই স্বপ্ন দেখুন
আর বাঁচতে শিখুন।

বুদ্ধিমান হলে সরকারি চাকরি করা
একটা বউ জুটিয়ে নিন।’
‘ওসবে আমার ঠিক পোষাবে না।’
তো আর কী! ইগো ধুয়ে জল খান।’
দুজন তরুণ সাংবাদিকের কথোপকথন থামিয়ে
টং দোকানের রমিজ মিয়া হঠাৎ বলে উঠলেন,
‘যে চাকরিতে ঠিকমতো বেতন দেয় না
হেই কাম করেন ক্যান আপনারা?’
‘নেশা রমিজ চাচা, নেশা!
এই যে তোমার বানানো চায়ে যেমন নেশা
ঠিক তেমন।

জানেন, গত মাসে মা-বাবাকে কোনো টাকা পাঠাতে পারিনি
অথচ রোজ তাদের ওষুধ লাগে।
এভাবে চলতে থাকলে কোথায় গিয়ে দাঁড়াব জানি না।
দ্রব্যমূল্য যতটা চড়া আমি-আমরা ঠিক ততটাই সস্তা।
আচ্ছা, করোনায় কারা ডুবল বলুন তো!’
‘আলবৎ মধ্যবিত্ত ছা-পোষারা।’
‘কত মানুষ চাকরিচ্যুত হয়ে এ শহরটা ছেড়ে গেল।
জীবনের তাগিদে অনেকেই আজ শেকড়ের কাছে।
কেন সাংবাদিকতা করি জানেন?’
‘কেন?’

‘অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে আর
অসুস্থ সমাজের অস্থিতিশীল অমানুষদের
মুখোশটা উন্মোচন করতে।
নিজেরা কী পাচ্ছি বলুন তো?
আত্মতৃপ্তি।’
‘আত্মতৃপ্তির কিছুটা পাঠিয়ে দিন না বাবার চিকিৎসার্থে।
শুনুন ঘুরে দাঁড়ান, বাঁচতে শিখুন।’
‘সম্ভব নয়। আসলে এই কলমটাই আমার বেঁচে থাকার প্রেরণা
শক্তি এবং সাহস।
আত্মতৃপ্তির সাথে রয়েছে গভীর আত্মবিশ্বাস।
দিন বদলাবে, সময়টা হবে আমাদের।
দেখবেন সমস্ত অস্থিরতা একদিন থেমে যাবে
মানুষ আবার ফিরবে তার প্রাণের শহরে...।’