ভারতীয় ভেরিয়েন্ট প্রতিরোধ ও প্রতিকার: কী করা উচিত

করোনাভাইরাস
প্রতীকী ছবি

বিশ্বব্যাপী করোনা অতিমারিতে এ পর্যন্ত প্রায় হাজারখানেক মিউট্যান্ট বা ধরন শনাক্ত হয়েছে। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত পাঁচ থেকে ছয়টি ধরন শনাক্ত হয়েছে। তবে জিনোম সিকোয়েন্সিং করার মতো পর্যাপ্ত গবেষণা বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই সম্ভব হয়নি। ভারতীয় যে ধরন বিশ্বে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে, তা হচ্ছে বি.১. ৬১৭।

এ ভাইরাস অতি দ্রুত সংক্রমণ ঘটাতে সক্ষম এবং দ্রুত রূপ পরিবর্তনে বা মিউটেশনে সক্ষম। ভারতে এ ধরনের প্রাদুর্ভাবে যে চিত্র দেখা গেছে, তাতে করোনা বিস্তার সম্পর্কে আমাদের আগের যে ধারণা ছিল, তার ব্যত্যয় ঘটেছে। যেমন, শিশুদের বা কম বয়সের লোকদের মধ্যে এটা বিস্তার লাভ করছে, গরিব–ধনী সব পেশার লোকেরাই আক্রান্ত হচ্ছে, আগে যা শহরকেন্দ্রিক ছিল, তা এখন গ্রামে–গঞ্জে ছড়িয়ে পরেছে। জিনোম সিকোয়েন্সিং গবেষণায় বাংলাদেশে কিছুদিন আগে যে দুজনের মধ্যে অতি সংক্রমণশীল ভারতীয় ভেরিয়েন্ট পাওয়া গিয়েছে, তা হচ্ছে বি.১. ১৬৭.২, যা বি.১. ১৬৭ এরই একটা সাবটাইপ। বলা বাহুল্য, বাংলাদেশেও জিনোম সিকোয়েন্সিং গবেষণায় অপর্যাপ্ততা রয়েছে। আইইডিসিআর, আইসিডিডিআরবি এবং অন্যান্য গবেষণা প্রতিষ্ঠানে গবেষণা হচ্ছে অনেকটা সীমিতভাবেই। খোদ ভারতের মতো এত বড় একটা দেশেও এ ধরনের পর্যাপ্ত গবেষণা সম্ভব হচ্ছে না। তাই আমাদের ‘রোগ প্রতিকারের চেয়ে রোগ প্রতিরোধই উত্তম’—এ নীতিতে চলতে হবে। এ জন্য যা প্রয়োজন, তা হচ্ছে—

১. বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ।
২. ভারত থেকে আগত জনগণকে বাধ্যতামূলক ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিন।
৩. যাঁদের মধ্যে করোনা শনাক্ত হবে, তাঁদের হাসপাতালে আইসোলেশন ও পর্যাপ্ত চিকিৎসা প্রদান এবং করোনা টেস্ট নেগেটিভ হওয়ার পর ছাড়পত্র প্রদান।
৪. পর্যাপ্তসংখ্যক হাসপাতাল ও রোগীর বেড বৃদ্ধিকরণ।
৫. ভারতে যেহেতু অক্সিজেনের অভাবে মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে, সে জন্য সরকার দ্রুত অক্সিজেন উৎপাদন ও সরবরাহ নিশ্চিতকরণ।
৬. চিকিৎসাসেবা বিকেন্দ্রীকরণ, অর্থাৎ বিভাগীয়, জেলা, এমনকি উপজেলা পর্যায়ে অক্সিজেন ও প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিতকরণ।
৭. মাস্ক পরিধান ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে।

৮. শহর বা গ্রামে বাইরের লোকজনের প্রবেশ বন্ধ করতে হবে এবং প্রয়োজনে গৃহে প্রবেশের আগেই সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে অথবা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দ্বারা হাত পরিষ্কার করতে হবে। বাইরের লোকদের সামনে মাস্ক ছাড়া যাওয়া বা কথা বলা যাবে না।
৯. জনসমাগম বন্ধ করতে হবে। ঈদের জামাত, মসজিদ ও বাজারে সামাজিক দূরত্ব ও মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক এবং অমান্যকারীদের জরিমানার ব্যবস্থা করতে হবে।
১০. ঘরে যাতে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস প্রবেশ করতে পারে, সেদিকে নজর দিতে হবে। কক্ষে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ বা এসি ব্যবহার সীমিত করতে হবে, যেহেতু বদ্ধ পরিবেশ করোনা সংক্রমণের সহায়ক।
১১. পর্যাপ্ত টিকা সংগ্রহ করে সব ঝুঁকিপূর্ণ জনগণকে টিকা প্রদান করতে হবে।

* লেখক: অধ্যাপক ডা. এম এস এ মনসুর আহমদ, ইপিডেমিওলজিস্ট ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, সাবেক উপদেষ্টা, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা