বিসিএসে পেশাবদল, আন্তক্যাডার বৈষম্য ও বর্তমান প্রেক্ষাপট
চাকরি একজন ব্যক্তির সামাজিক ও আর্থিক নিরাপত্তা। ব্যক্তি তাঁর সামাজিক অবস্থান সুদৃঢ়, আর্থিকভাবে সচ্ছল, সামগ্রিকভাবে উন্নত জীবনযাপনের জন্য একটা ভালো চাকরি চাইবেন, এটাই স্বাভাবিক। এ ক্ষেত্রে যে যাঁর প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি অনুযায়ী চাকরিপ্রত্যাশী হবেন এবং তাঁর বৈষয়িক সেক্টরে চাকরি করবেন। কিন্তু আমাদের দেশে এর উল্টো চিত্রই লক্ষ করা যায়। এখানে দেখা যায়, মেডিকেলে পড়ুয়া একজন শিক্ষার্থী চিকিৎসক না হয়ে হয়ে যাচ্ছেন ম্যাজিস্ট্রেট। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া একজন শিক্ষার্থী প্রকৌশলী না হয়ে হয়ে যাচ্ছেন পুলিশ, প্রশাসন, কাস্টমস ও পররাষ্ট্র কর্মকর্তা।
এর পেছনে কারণ কী? কারণ হলো বিসিএসে সুনির্দিষ্ট ক্যাডার–মোহ ও ক্যাডার–বৈষম্য। বিসিএস বলতে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসকে বোঝায়।
এ দেশের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে, শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর মধ্যে দিন দিন বিসিএস ক্যাডার হওয়ার প্রবণতা বেড়ে চলছে। অনেকেই জীবনে সফল হওয়া বলতেই বোঝেন ‘বিসিএস ক্যাডার’ হওয়া। এ প্রবণতা একটা জাতির সার্বিক উন্নতিতে অন্যতম অন্তরায়। একটা দেশ ও জাতির সার্বিক উন্নতিতে সব শ্রেণি–পেশার মানুষের অংশগ্রহণ ও অবদান থাকতে হয়। এ দেশের বর্তমান প্রজন্ম ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর শুধু বিসিএস–মোহের কারণে ১৯৭১–পরবর্তী এ প্রজন্মের মধ্যে আমরা তেমন কোনো বুদ্ধিজীবী দেখছি না। সবাই শুধু এখন আমলা হওয়ার পেছনেই দৌড়াচ্ছে। একটা দেশ কতটুকু উন্নতির শিখরে পৌঁছাবে, সেটা সে দেশের বুদ্ধিজীবীদের সংখ্যা দেখে নির্ণয় করা হয়।
বুদ্ধিজীবীশূন্য মানে দেশ ও জাতির উন্নতি শূন্য। এ জন্যই ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী প্রথমে এ দেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যার নীলনকশা তৈরি করেছিল।
মনে প্রশ্ন জাগে, এত এত কর্মপরিবেশ থাকা সত্ত্বেও এ দেশের শিক্ষিত জনগোষ্ঠী, তরুণ প্রজন্ম কেন শুধু বিসিএসের পেছনে দৌড়াচ্ছে? সহজ উত্তর—মান-সম্মান, যশ–খ্যাতি ও পাওয়ার প্র্যাকটিসের সুযোগ। কে না চায় ‘পাওয়ার প্র্যাকটিস’ করতে?
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিসিএস এমন এক চাকরি, যেখানে বিশেষ মান-সম্মান, যশ-খ্যাতি পাওয়া যায়, সরকারি ছায়াতলে থেকে পাওয়ার প্র্যাকটিস করা যায়। তাই সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দিন দিন এ দেশের শিক্ষিত জনগোষ্ঠী, তরুণ প্রজন্ম বিসিএসের দিকে ঝুঁকছে। আর এ চাহিদাই বিসিএসকে ‘সোনার হরিণে’ পরিণত করেছে।
বিসিএসকে আজকে সোনার হরিণে পরিণত করা বা এ দেশের শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর সফলতার চাবিকাঠি মনে করার পেছনে যে মাধ্যমটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে, সেটি হলো ‘গণমাধ্যম’। ‘এইচএসসিতে দুবার ফেল করেও বিসিএসে প্রথম’, ‘তারার আলোয় পড়েও বিসিএস ক্যাডার’, ‘প্রেমে ছেঁকা খেয়ে অতঃপর বিসিএস ক্যাডার’, ‘বিসিএস ক্যাডার হওয়ার পর ফিরে এল প্রেমিকা’—পত্রপত্রিকায়, সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ও প্রচারিত এমন সব চোখধাঁধানো শিরোনামে এ দেশের শিক্ষিত জনগোষ্ঠী, তরুণ প্রজন্ম যদি বিসিএসমুখী হতে অনুপ্রাণিন হয়, তবে নেতিবাচক কিছু নয়। প্রচারেই প্রসার। বিসিএসের ক্ষেত্রে এমনটাই হচ্ছে। আরেকটা অন্যতম কারণ হলো আমলাতন্ত্রের সর্বমুখী ক্ষমতা। আমলাতন্ত্রে করা যায় না, পারা যায় না বলে এমন কিছু নেই, এ ধারণা থেকে বর্তমান প্রজন্ম দলে দলে আমলা হওয়ার পথে দৌড়াচ্ছে। কেননা, এ প্রজন্ম তাদের চোখের সামনে দেখছে, আমলাতন্ত্রে কোনোভাবে ঢুকতে পারলে রাতারাতি অর্থবিত্ত ও সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলা যায়, সাধারণ জনগণকে জিম্মি করে রাখা যায়, দেশকে লুটপাট করে খাওয়া যায় বিভিন্নভাবে বিভিন্ন কায়দায়।
বিশ্ববিদ্যালয় হলো দেশের উচ্চশিক্ষার সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ হলো গবেষণা। আর এর প্রধান কাজ হলো শিক্ষার্থীদের গবেষণামুখী করে তোলা। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তেমন কোনো গবেষণা হয় না। এখানকার শিক্ষার্থীরা লাইব্রেরিতে গিয়ে বিভিন্ন প্রকার জ্ঞান–বিজ্ঞান চর্চা না করে করেন বিসিএস চর্চা। তাঁরা শুধু পড়ে থাকেন গুটিকয়েক বিষয়ের ওপর। দেখা যায়, অনার্স পড়ুয়া একজন শিক্ষার্থী বিসিএসের ওপর তুমুল নির্ভরশীল। একাডেমিক পড়াশোনা থেকেও তাঁর কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিসিএসের পড়াশোনা। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়, লাইব্রেরিগুলোতে হওয়ার কথা ছিল বিভিন্ন প্রকার জ্ঞানবিজ্ঞানের চর্চা আর গবেষণা। আর এভাবে চলতে থাকলে দেশের উচ্চশিক্ষা, বিশেষ করে বিশেষায়িত শিক্ষা যে মুখ থুবড়ে পড়বে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
বিসিএসের প্রতি এ দেশের শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর নির্ভরশীলতা এমন চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে, ৪০তম বিসিএসে আবেদনকারীর সংখ্যা মালদ্বীপের জনসংখ্যাকেও অতিক্রম করেছে। পরবর্তী বিসিএসগুলোতে সংখ্যাটা বেড়েই চলছে। দেশের বিশাল এক শিক্ষিত জনগোষ্ঠী কবি, সাহিত্যিক, গবেষক, লেখক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, উদ্যোক্তা, আবিষ্কারক হওয়ার নেশা ছেড়ে আমলা হওয়ার স্বপ্নে বিভোর। এটা প্রকৃতপক্ষে দেশের জন্য কোনোভাবেই মঙ্গলজনক নয়। হ্যাঁ, দেশের মেধাবীদের দেশ পরিচালনায় এগিয়ে আসা উচিত, কিন্তু তারও একটা সীমা রয়েছে। একটা দেশ তো শুধু আমলা বা আমলাতন্ত্র দিয়ে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে না।
‘সোনার হরিণ’ বিসিএস পরীক্ষার সূচনা হয় প্রিলিমিনারি পরীক্ষার মাধ্যমে। প্রিলিমিনারির পরবর্তী ধাপ হলো লিখিত পরীক্ষা। লিখিত পরীক্ষায় বাংলা, ইংরেজি ও বাংলাদেশ বিষয়াবলিতে ২০০ নম্বর করে, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে ১০০ নম্বর করে রয়েছে। আর ১০০ নম্বর করে বরাদ্দ রয়েছে গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা বিষয়ে। মোট ৯০০ নম্বরের পরীক্ষা।
সম্প্রতি ৪০তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। এতে দেখা গেছে, পররাষ্ট্র, প্রশাসন, পুলিশ, কাস্টমস, ট্যাক্সের মতো শীর্ষ ক্যাডার পদগুলোতে দেশের বিভিন্ন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরা ভালো করেছেন। এ নিয়ে অনেক সমালোচনার ঝড় উঠছে। কিন্তু কেন এমনটা হচ্ছে, এর নেপথ্যে কী? দিন দিন প্রকৌশলেরা তাঁদের নিজস্ব ক্যাডার পদ ছেড়ে কেন অন্য ক্যাডারের দিকে ধাবিত হচ্ছেন! আমরা ৩৮তম বিসিএসেও এমনটা লক্ষ করেছি। ৩৮তম বিসিএসের ক্যাডার পদ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ইঞ্জিনিয়ারিং, মেডিকেল পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের বেশির ভাগই তাঁদের পেশার সঙ্গে জড়িত ক্যাডার পদ ছেড়ে পররাষ্ট্র, প্রশাসন ও পুলিশ এবং অনেকেই সাধারণ ক্যাডার পদে যোগ দিয়েছেন। মোট ২ হাজার ২০৪ জনের মধ্যে পররাষ্ট্র ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন ২৫ জন। এই ২৫ জনের ৭ জন বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী, ১৩ জন বিভিন্ন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। আবার এই ১৩ জনের ১০ জনই বুয়েটের শিক্ষার্থী।
এখন আমার সাদাসিধে প্রশ্ন, একজন মেডিকেল পড়ুয়া শিক্ষার্থী এত কষ্ট–পরিশ্রম করে, লাখ লাখ টাকা খরচ করে দীর্ঘ পাঁচ–ছয় বছর চিকিৎসাশাস্ত্রে পড়াশোনা করে কেন স্বাস্থ্য ক্যাডারে যোগদান না করে পররাষ্ট্র, প্রশাসন, পুলিশ বা কর ক্যাডারে যোগদান করলেন? এর নেপথ্যে কী? তাঁদের পেছনে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রের ব্যয় হয়েছে। তাঁদের কি উচিত নয় পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রের সে ঋণ শোধ করা?
আমাদের মা–বাবারা একজন ছেলে বা মেয়েকে চোখ ভরা স্বপ্ন আর বুক ভরা আশা নিয়ে মেডিকেলে ভর্তি করান তাঁর ছেলে বা মেয়েটিকে চিকিৎসক বানাবেন বলে। এ ছাড়া একজন চিকিৎসক স্বাস্থ্য ক্যাডারে এলে সেটা আমাদের দেশের স্বাস্থ্য খাতের জন্য যেমন কল্যাণকর, তেমনি দেশ ও জাতির গর্বের বিষয়।
প্রশ্ন উঠতে পারে, এ দেশে চিকিৎসকেরা তো আর প্রশাসন ক্যাডারে কর্মরত একজন ক্যাডারের মতো সমান সুযোগ-সুবিধা, যশ-খ্যাতি, পাওয়ার প্র্যাকটিস করতে পারেন না। হ্যাঁ, এটা সত্য যে একজন প্রশাসন কর্মকর্তা যে গাড়ি–বাড়ি বা অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পান, একজন চিকিৎসক কিন্তু তেমনটা পান না। আর এ ক্ষোভ থেকেই নিজস্ব ক্যাডার পদ ছেড়ে তাঁরা চলে যাচ্ছেন প্রশাসন, পররাষ্ট্র ক্যাডারে।
স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে সহপাঠীরা তুলনামূলক কম মেধাবী ছিলেন, তাঁরা যখন সহপাঠী চিকিৎসক বা প্রকৌশলীর ওপর কর্তৃত্ব করেন, প্রভাব খাটান, তখন সেই চিকিৎসক বা প্রকৌশলীরা বিষয়টি সহজে মেনে নিতে পারেন না। তাই বিসিএসে ঘটছে পেশাবদলের ঘটনা। আর এর নেপথ্য আন্তক্যাডার–বৈষম্য দায়ী।
স্বাস্থ্য ক্যাডারের শুরুতে প্রথমে একজন চিকিৎসককে নিয়োগ দেওয়া হয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সেখানে নেই কোনো গাড়ির সুবিধা, ভাড়ায় থাকতে হয় সরকারি কোয়ার্টারে। ব্যক্তিগত সহকারী ও আলাদা কোনো অফিস থাকে না। পদোন্নতির জন্য প্রয়োজন হবে পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রির, যা সম্পূর্ণ শেষ করতে লেগে যায় ১০-১৫ বছর।
অন্যদিকে প্রশাসন ক্যাডারে চাকরির শুরুতে মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব, ডিসি অফিসের কর্মকর্তা, এসি ল্যান্ড হিসেবে যোগদানের সুযোগের পাশাপাশি রয়েছে ধারাবাহিক পদোন্নতির সুযোগ, গাড়ি-বাড়ির সুবিধা, গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণে মাসিক টাকাও মেলে; এ ছাড়া ব্যক্তিগত সহকারী, পাওয়া যাবে আলাদা অফিসও। আর ইউএনও হলে সরকারি বাংলো ও গাড়ির সুবিধা তো রয়েছে। পদোন্নতি পেলে মন্ত্রিপরিষদ সচিবও হতে পারেন। রয়েছে স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশে পড়ার সুযোগ, প্রেষণে আন্তর্জাতিক সংস্থায় কাজের সুযোগও রয়েছে। এসব দেয়ালই চিকিৎসকদের স্বাস্থ্য ক্যাডার ছেড়ে অন্য ক্যাডারে যোগ দিতে বাধ্য করছে।
ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষার্থীদেরও একই অবস্থা। বুয়েটে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকসে পড়াশোনা করা শিক্ষার্থীও বিসিএস দিয়ে এখন পররাষ্ট্র ক্যাডার। এত বছর তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সঙ্গে এখনকার কর্মক্ষেত্রের কোনো মিল নেই। তিনি যদি তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পেশায় থাকতেন, আমরা হয়তো পেতাম সেরা আইটি চিপ নির্মাতা, ভবিষ্যৎ মাইক্রোসফটের মতো প্রতিষ্ঠান নির্মাতা, বিশ্বের সেরা প্রযুক্তিবিদ বা সফল বিজ্ঞানী।
চিকিৎসক, ইঞ্জিনিয়ার, কৃষিবিদেরা তাঁদের নিজস্ব পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় যোগ দিচ্ছেন। ফলে সাধারণ বিষয় নিয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছেন তাঁদের অধিকার থেকে। সাধারণত বাংলা, ইংরেজি, ইতিহাস, অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, দর্শনসহ ইত্যাদি সাধারণ বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করা শিক্ষার্থীরাই তো যোগ্যতাবলে পররাষ্ট্র, প্রশাসন, পুলিশ, কর, সাধারণ ক্যাডার পাওয়ার কথা। সাধারণ এসব বিষয় নিয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের ইঞ্জিনিয়ারিং, মেডিকেল বা কৃষি অনুষদের শিক্ষার্থীদের মতো আলাদা তেমন কোনো চাকরির বাজার নেই।
একজন মেডিকেল শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি মেডিকেলে চাকরি, অর্থের বিনিময়ে রোগী দেখার কর্মস্থল। একজন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছে দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন শিল্পকারখানায় চাকরির সুযোগ। একজন কৃষিবিদেরও চাকরির আলাদা সেক্টর রয়েছে। কমার্স ফ্যাকাল্টির শিক্ষার্থীদের জন্যও রয়েছে আলাদা চাকরির পরিবেশ। তাঁদের জন্য রয়েছে বিভিন্ন ব্যাংক ও বিমা সেক্টর, বিভিন্ন করপোরেট প্রতিষ্ঠান।
দেশের প্রেক্ষাপট ও বর্তমান সময় অনুযায়ী, আর্টস ও সোশ্যাল সায়েন্স ফ্যাকাল্টির শিক্ষার্থীদের ভরসার জায়গা এই বিসিএস। যদিও বিসিএস ছাড়া আরও অনেক ভালো ভালো সেক্টর রয়েছে।
এখন প্রশ্ন না উঠে পারে না যে কৃষি ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা কেন কৃষিসচিব হবেন না? কেন স্বাস্থ্য ক্যাডারের একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরিবর্তে ইংরেজি বা বাংলা সাহিত্যের একজন শিক্ষার্থীকে স্বাস্থ্যসচিব হতে হবে? কেন সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী একজন শিক্ষক শিক্ষাসচিব হবেন না বা হতে পারবেন না?
বিসিএসে বিভিন্ন ক্যাডার পদে আন্তক্যাডার–বৈষম্যের কথা আমরা প্রায়ই শুনি। এ জন্য রীতিমতো পেশাবদলের ঘটনা ঘটছে। একজন প্রশাসন ক্যাডার যে সুযোগ-সুবিধাগুলো পাবেন, সেগুলো কেন স্বাস্থ্য ক্যাডারের অধিকারী একজন চিকিৎসক পাবেন না? একজন পুলিশ ক্যাডারের পুলিশ অফিসার যে সুযোগ-সুবিধাগুলো পাবেন, সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের অধিকারী একজন শিক্ষক যিনি জাতি গড়ার কারিগর বলে পরিচিত, তিনি কেন তা পাবেন না?
বিশ্বের অন্যান্য দেশে দেখা যায়, যিনি যে বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করছেন, পড়াশোনা শেষে তিনি সে বিষয়–সম্পর্কিত চাকরিতে যোগ দিচ্ছেন। কিন্তু আমাদের দেশে এর উল্টো চিত্রই লক্ষ করা যায়। এখানে চিকিৎসাশাস্ত্রে পড়ে হয়ে যান পুলিশ। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে এখন ঢেলে সাজানোর সময় এসেছে। এখনই পরিবর্তনের জোয়ার তুলতে হবে। যিনি যে বিষয়ে পড়াশোনা করছেন, তাঁর জন্য তাঁর বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত সে রকম কর্মপরিবেশ তৈরি করতে হবে। পেশা অনুযায়ী সব পেশায় সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য শিক্ষা খাতের সংস্কারের জন্য প্রচলিত নিয়মকানুন পরিবর্তনে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। বিসিএসের মতো তুমুল প্রতিযোগিতাপূর্ণ চাকরি পরীক্ষায় প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রির ওপর সমন্বয় তথা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে ক্যাডার মনোনয়ন দিতে হবে, দূর করতে হবে আন্তক্যাডার–বৈষম্য। তখন হয়তো বৈষম্যের দেয়াল ভাঙবে। শিক্ষার মহৎ উদ্দেশ্য সাধিত হবে। ক্যাডার–বৈষম্য নিয়ে হাহাকার দূর হবে।
*ইমরান ইমন, শিক্ষার্থী