বিদেশি পর্যটক যদি আকৃষ্ট করতে চাই
স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় যখন একঘেয়েমি চলে আসে, মনের খোরাক মেটানোর জন্য আমরা কয়েক ঘণ্টা, আবার কখনো কয়েক দিন বা মাসের জন্য ভ্রমণের উদ্দেশে বের হই একঘেয়েমি দূর করার জন্য। নিত্যনতুন জায়গায় নিত্যনতুন জিনিস দেখে জ্ঞান লাভের পাশাপাশি আত্মতৃপ্তি লাভ করা যায়। এই জ্ঞান লাভ, একঘেয়েমি দূর করতে পর্যটনশিল্প বিকাশের বিকল্প পথ নেই। পর্যটনশিল্প এমন একটি বাণিজ্যিক খাত, যা জড়িয়ে আছে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি জিনিসের সঙ্গে। শুধু ভ্রমণের উদ্দেশে যাওয়া পর্যটনশিল্পের অন্তর্গত নয়। খাওয়াদাওয়া, পরিবহনব্যবস্থা, খেলাধুলা, থাকার ব্যবস্থা ইত্যাদি মিলিয়ে পর্যটনশিল্প। পর্যটনশিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বিপুল পরিমাণ মানুষের কর্মসংস্থান। ক্ষুদ্র, মাঝারি, বৃহত্তর—প্রত্যেক ব্যবসায়ী জড়িয়ে আছেন এ শিল্পের সঙ্গে।
পর্যটন আমাদের মৌলিক চাহিদা নয়। কিন্তু শিক্ষালাভের সঙ্গে পর্যটনের সম্পর্ক বেশ নিবিড়। পর্যটন মানুষকে ইতিহাস, ভূগোল, সমাজনীতি, নৃতত্ত্বসহ অনেক বিষয় প্রত্যক্ষভাবে জ্ঞান দান করে। জ্ঞান লাভের পাশাপাশি মিটে যায় একঘেয়েমি, মনের খোরাক। নিজ দেশ সম্পর্কে বিপুল পরিসরে জানতে পর্যটনশিল্পের ভূমিকা অতুলনীয়। পর্যটনশিল্পের বিকাশ ঘটাতে আমাদের একটি লক্ষ্যমাত্রা স্থির করতে হবে। ২০২০ সালে মানুষ তার স্বাভাবিক জীবনযাত্রার মান হারিয়েছে, হারিয়েছে কর্মসংস্থান। হারিয়েছে লক্ষাধিক প্রাণ। ফলে বিদেশি পর্যটকদের আগমন যেমন হয়নি, তেমনি দেশি পর্যটকেরাও সারা বছর ঘরবন্দী কাটিয়েছেন। নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে আবার পর্যটন এলাকায় পর্যটকদের আনাগোনা দেখা মিলেছে। কিন্তু বিদেশি পর্যটকদের আনাগোনা নেই বললে চলে। বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে হলে প্রয়োজন বিদেশি পর্যটকদের আগমন। দেশের জিডিপির ১২ শতাংশ আসে পর্যটনশিল্প থেকে।
অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে যার কোনো বিকল্প নেই। বাংলাদেশ অভাবনীয় প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ। বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে হলে আমাদের যা করণীয়—
ভিসাপদ্ধতি সহজ করতে হবে। যেসব দেশ থেকে পর্যটকেরা মূলত আমাদের দেশে ভ্রমণে আসেন, তাঁদের ভিসাপদ্ধতি সহজ করতে হবে। অনেকে ব্যবসায়ী কর্মকাণ্ডে আসেন এবং আমাদের দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে বিমোহিত হন। পরবর্তী সময়ে ভ্রমণের উদ্দেশেও আসেন। এ জন্য প্রথমে আমাদের উচিত দেশের টিভি চ্যানেলগুলোতে দেশের আকর্ষণীয় স্থানগুলো তুলে ধরা। পর্যটন স্থানগুলো নিয়ে বারবার অনুষ্ঠানে প্রচার করতে হবে। পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে অবরোধ দূর করতে হবে।
ভ্রমণ স্থান চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, খুন ইত্যাদি থেকে মুক্ত রাখতে হবে, যার জন্য অধিক পরিমাণে ট্যুরিস্ট পুলিশ মোতায়েন করতে হবে। পর্যটকদের বিশেষ যাতায়াত ব্যবস্থা করতে হবে। যার জন্য প্রয়োজন রাস্তার সংস্কার। বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করতে হবে। পর্যটকদের ব্যক্তিগত বিষয়ে আলোচনা করা যাবে না, এর জন্য অভিজ্ঞ ট্যুরিস্ট গাইড সরবরাহ করতে হবে। সর্বোপরি পর্যটকদের কথা চিন্তা করে তাঁদের জন্য সুবিধা–অসুবিধা অন্যান্য দেশের ট্যুর অপারেটরের সঙ্গে আলাপ–আলোচনা করে তাদের সাহায্য–সহযোগিতা করতে হবে। তাদের থাকার পর্যাপ্ত পরিমাণে এবং সুরক্ষিত হোটেল–মোটেলের ব্যবস্থা করতে হবে। খাওয়াদাওয়ার সুব্যবস্থা করতে হবে।
সুতারাং, যেখানে পর্যটনশিল্পের সঙ্গে জড়িত প্রতিটি খাত। সেখানে গড়ে উঠছে কর্মসংস্থান, ফলে কমে যাচ্ছে বেকারত্বের হার। অর্থনীতির চাকা সচল হচ্ছে, সেখানে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া একান্ত জরুরি। সরকার কর্তৃক পর্যটনশিল্পে অধিক বাজেট বরাদ্দ দিতে হবে। কোভিড-১৯–এর কারণে মানুষ তার স্বাভাবিক জীবনযাত্রার মান যেমন হারিয়েছে, তেমনি হারিয়েছে কর্মসংস্থান। অন্যদিকে গড়ে উঠেছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, যেখানে অনেকে তাঁদের স্থানীয় শিল্প এবং ঐতিহ্য তুলে ধরছেন। ইতিমধ্যে অনেক ট্যুর ট্রাভেলস এজেন্সি গড়ে উঠেছে, তারা প্রতিদিন নতুন ট্যুর আয়োজন করে আসছে। এখানে বরাদ্দের খাত বৃদ্ধি করা হলে জেগে উঠবে পর্যটনশিল্প, সচল হবে দেশের অর্থনীতি, দূর হবে বেকারত্বের হার।
*লেখক: খায়রুজ্জামান খান, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া