বন্ধুত্ব ভ্রাতৃত্ব আর আড্ডার দিনগুলো

ছবি: লেখক

দেশের ৬৪ জেলার ছাত্রছাত্রীদের মিলনস্থল বলা হয় সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে। এখানে যেমন থাকে উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান; তেমনি ধর্ম, বর্ণ ও গোত্রের থাকে না কোনো ভেদাভেদ। পরিচয়গত পার্থক্যের ঊর্ধ্বে বন্ধুত্ব ও ভ্রাতৃত্ব হয়ে ওঠে প্রধান। রাগ ও ক্ষোভ এখানে দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার সুযোগ পায় না, আনন্দ হয় সার্বজনীন, দুঃখের ভার নেয় সবাই। এখানে সকালে পাখিদের কিচিরমিচির নিয়ে আসে একসঙ্গে ক্লাসে যাওয়ার বার্তা, রৌদ্রের ঝিলিমিলি বুঝিয়ে দেয় উজ্জ্বল ভবিষ্যতের হাতছানি।

ক্লাস অ্যাসাইনমেন্ট অথবা পরীক্ষাময় ব্যস্ততম দিনের শেষে আসে বিকেল। ক্লান্ত এ বিকেল আনন্দঘন করতে শুরু হয় আড্ডা। তবে আড্ডা হয় প্রাণবন্ত। এই আড্ডায় যুক্ত হতে থাকে না কোনো কার্পণ্য, বরং আড্ডার আশায় সবাই মুখিয়ে থাকে। বিকেল হলেই মাথায় ঘোরে এক চিন্তা—বেরোতে হবে রুম থেকে, সঙ্গ নিতে হবে আড্ডাবাজ বন্ধুদের। প্রথমে মিলিত হওয়া ক্যাম্পাসের অন্যতম ব্যস্ততম স্থান জিয়া মোড়ে। সেখান থেকে সবার সম্মতিক্রমে কোনো দিন আড্ডার স্থান হিসেবে নির্ধারিত হয় মুজিব ম্যুরালের পাদদেশ, শহীদ মিনার; কোনো দিন ক্রিকেট মাঠ অথবা মফিজ লেক। সাদ্দাম হলের সামনে ক্রিকেট মাঠের সবুজ ঘাসে চলে নিয়মিত আড্ডা। স্থান যেটাই হোক না কেন, আড্ডাবাজদের সংখ্যা কখনো কম থাকে না। এই আড্ডায় চলে হরেকরকম বিষয়ের আলোচনা। সেগুলো থাকে আনন্দ, হাসিঠাট্টা কিংবা জ্ঞানে ঠাসা। আড্ডায় উঠে আসে রাজনীতি, সমাজনীতি, ধর্মনীতি, পরিবারব্যবস্থাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের চুলচেরা বিশ্লেষণ। মনে হয়, এখানেই হাতেখড়ি হচ্ছে ভবিষ্যতের আলোচক–সমালোচকদের! কোনো দিন এই আড্ডা চলে স্বল্প সময়—সন্ধ্যা পর্যন্ত। কোনো দিন আড্ডা যেন শেষই হয় না, চলে রাত অবধি।

আড্ডা শেষে রুমে ফেরা হয় ফুরফুরে মেজাজে। দিনের সব ক্লান্তি তখন আর থাকে না। এ অবস্থায় যে যার অভীষ্ট সাধনে পুরোদমে মন দিতে পারে। ক্যাম্পাস জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলা চলে এ রকম গল্পগুজব। একদিন বন্ধুদের সঙ্গে দেখা না হলে, আড্ডা না হলে মনে হয় দিনটাই অসম্পূর্ণ।

কয়েক বছরের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে নিজেদের মধ্যে যে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে ওঠে, তার বড় দাবিদার অপরাহ্ণকালীন এই ঘোরাফেরা ও গল্পগুজব। ক্যাম্পাস–জীবন একদিন শেষ হবে, মন না চাইলেও ছাড়তে হবে প্রাণের বিদ্যাপীঠ, বিদায় নিতে হবে প্রাণপ্রিয় সহপাঠী ও বন্ধুদের থেকে। একটা সময় নানা কাজে ব্যস্ত হবে সবাই। তখন হয়তো এ রকম রমরমা আড্ডার সুযোগ হবে না। তবে অবসর পেলেই মনে জেগে উঠবে এই দিনগুলো, স্মৃতিকাতর হয়ে ফিরতে চাইব এ সময়টাতে—যা হয়তো শত চাওয়াতেও আর হয়ে উঠবে না!

*লেখক: মো. রাসেল মিয়া, শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া