বন্ধু, জেগে তোমায় উঠতেই হবে
এতটা অভিমান করলে কি চলে?
এও বলছি না, তুমি কেবল আমার ওপর অভিমান করেছ!
নগরকান্দা, ফরিদপুর, এক কথায় চারপাশের সব মানুষ এ অভিযোগ সামনে এনেছে। আমার প্রশ্ন, এসব কি তুমি শুনছ? নাকি শুনেও বিশ্বাস করছ না!
প্রিয় নিমাই, একই নাম দুজনের। হোক না, এ কথা বুঝবেন সবাই। ভাই আমার! নিউরোসায়েন্স হাসপাতাল তোমার ঠিকানা হতে পারে না। জানি, বুকের ধন গৌরব নিজেকে ধরে রাখতে পারেনি। প্রাণপ্রিয় সঞ্চিতাও সেই আকস্মিক তাণ্ডবের শিকার। দুই সংগঠক কামাল হোসেন এবং পলাশ মাতুব্বর, তাদেরও ফেরা সম্ভব হয়নি। বিষয়টি অনাকাঙ্ক্ষিত। এক অপরিমেয় ক্ষতি যা মেনে নেওয়া যায় না। তারপরও স্বজনেরা যতটুকু পায়, ততটুকু নিয়েই বেঁচে থাকতে চায়। এখানে তুমি অধিকতর আবেগপ্রবণ হলে যে আরও আরও ক্ষতি হয়ে যাবে। তা কি তুমি একবারও ভেবে দেখেছ?
তুমি নির্বাচনের আগে প্রতিশ্রুতি দিয়েছ, তাদের কল্যাণে কাজ করবে। এ তোমার প্রতিজ্ঞা। এই জায়গা থেকে তুমি সরে আসতে পারো না। সেটা হবে জবাবদিহির বরখেলাপ। এ এক অন্যায় প্রবণতা। এমনটি হলে সারা দেশের মানুষ তোমাকে ছি ছি করবে। এটা তুমি করতে পারো না। তুমি না গণতন্ত্রের চর্চা করে যাচ্ছ! তাহলে বুঝতেই হবে, এ অধিকার তোমাকে কেউ দেয়নি।
আমরা কখনো তোমাকে বিরক্ত করিনি। এই তোমার নির্বাচনের কথাই বলি। তুমি ব্যস্ত, মহাব্যস্ত! এক দিক থেকে আরেক দিকে ছুটছ। দিনে কিংবা রাতে। তখন তোমার ফোন থাকে আরও বিজড়িত। যোগাযোগ রাখতাম তরুণ এক সংবাদকর্মীর সঙ্গে। সর্বশেষ খবরটা পেতাম। তোমার বেলায় কিন্তু ব্যত্যয় ঘটছে। দশগুণ, এক শগুণ, সহস্র গুণ হারে। প্রযুক্তির এই যুগে অঙ্কের মতো বিষয়টি পরিষ্কার। এখন তুমি আমাদের ফোন করবে। করছ না। আমাদের খবর নেবে, নিচ্ছ না। উপরন্তু আমরা ডেকে তোমার সাড়া পাচ্ছি না। তাহলে কী হলো?
তোমাকে নিয়ে প্রতিনিয়ত ভাবে সবাই। নির্বাচনের সময়কার কথাই বলি। শেষ মুহূর্তটিকে হালনাগাদ করার জন্য মনোযোগী ছিলাম আমরা। দেখো সে খতিয়ান। মোট ভোটার ৮ হাজার ৬৬৩। প্রদত্ত ভোট ৬ হাজার ৮৯৭। মানে, উপস্থিতির শতকরা হার ৭৯.৬১ । তুমি পেয়েছ ২ হাজার ১৯৯। শতকরা ৩১.৮৮ ভোট। ঈর্ষণীয় অর্জন।
তোমার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ভোট পেয়েছেন ১ হাজার ২২৮। ভোটের পার্থক্য অনেক। ভোটারের উপস্থিতি কম, এ কথা শত্রুরাও বলতে পারবে না। আর ভোট প্রাপ্তিতে কৃতিত্ব নেওয়ার জন্য ভালো সূচক। সাতজন প্রার্থী নির্বাচনী যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। স্বাস্থ্যকর হাওয়া ছিল। এটাও ইতিবাচক উদাহরণ। ভোটের এই বিশ্লেষণ সঙ্গে সঙ্গে চলে আসে জনসমক্ষে। এসব নির্দ্বিধায় তোমার প্রতি ভালোবাসার টানে। তোমার কী মূল্যায়ন?
প্রিয় নিমাই, তোমার সঙ্গে আমার বয়সের পার্থক্য অনেক। তারপরও সে দূরত্ব কখন যে চলে গিয়েছে, কেউ জানি না। এ-ও মানুষ মেনে নেবে, বন্ধু আমার!
এই তো সেদিনকার কথা! নির্বাচন-পূর্ব পরিস্থিতিতে তোমাকে ফাঁদে ফেলতে কুচক্রীরা চেষ্টা চালিয়েছে। ওই যে প্রচারণার গাড়িতে আগ্নেয়াস্ত্র রেখে তোমার ওপর দায়টা চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল! সাধারণ মানুষের রোষানলে সেসব জারিজুরি ভস্ম হয়ে গেছে। এ খবর আমরা রেখেছি। কিন্তু এখন কি তোমার পক্ষ থেকে করণীয় কিছু নেই ? অথচ তুমি বলেছিলে, ‘আমি তোমাদের সঙ্গে আছি, থাকব। দেখছি, তুমি আজ নিরুত্তর, নিশ্চুপ। তুমি আর যা-ই করো, এমনটি করতে পারো না। এটা তোমার বেলায় একদম বেমানান।
এক তরুণীর সঙ্গে কথা হলো। তোমার নীরবতায় তারা বাকরুদ্ধ, উদ্বিগ্ন। ভারাক্রান্ত হৃদয়ে জানাল, সেদিন মানুষের ঢল নেমেছে। অবশ্যই এ স্রোত বুকের ধন গৌরব আর সংগঠনের প্রিয় মুখ সঞ্চিতাকে দেখার জন্য। কিংবা তোমার পরিবারকে সান্ত্বনা জানাতে। জুঙ্গুরদি থেকে কিংবা জগদিয়ার পথে উপজেলা সদর নগরকান্দা ঘুরে চৌমুখা গ্রামে তোমার বাসভবন পর্যন্ত সে কী ভিড়! সেদিন পুলিশ সদস্যদের নামতে হয়েছিল শৃঙ্খলা রক্ষায়। জনসাধারণের এই যে আকুলতা, তা তো তোমার প্রতি গভীর এক নাড়ির টানে। এটা কি তুমি অস্বীকার করবে?
তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কবি’ উপন্যাসের নিতাই চরণকে দেখি আমার সামনে। তার মতোই হাত জোড় করে দাঁড়িয়েছ বিনম্র শ্রদ্ধা নিয়ে। কী করতে হবে, কী বা প্রয়োজন! প্রস্তুত ষোলো আনা! জো হুজুর জাহাঁপনা নয়। নিজের ব্যক্তিত্বকে ধরে রেখে কারও কাজে উজাড় করে দিয়েছ নিজেকে। সে জন্যই তুমি সব ক্ষেত্রে অগ্রণী।
কোথায় না ঝড় তুলেছ ? মহান ব্রত হিসেবে বেছে নিয়েছ জনকর্মকে। সংবাদকর্মীর ভূমিকায়, যুব সংগঠনের শীর্ষ দায়িত্ব যে তোমাকেই দেওয়া যায়, তা তো ওখানকার মানুষ ভালো বুঝেছে। সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে তোমাকে চেয়েছে বলেই এখানেও মূল আসনটিতে তোমার পদায়ন। পূজা উদযাপন কমিটির তুমি শীর্ষ স্থানে। সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে বন্ধুসুলভ যোগ। রাজনীতি, সংস্কৃতি, সমাজকর্মকে তুমি গায়ের জোরে নয়, শিল্পিত চর্চার মাধ্যমে একটি উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছ। অন্য এক মাত্রা দিয়েছ। সেখানে আমরা শুনতে পাই ভিন্নধর্মী দ্যোতনা। সে জন্যই আজ সবকিছু ছাড়িয়ে তুমি নগরপিতা। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বাস্তবায়নের জন্য এই সময় তোমার ওপর অনেক অনেক দায়িত্ব। জনগণ তোমাকে ভালোবাসা দিয়েছে। এ ছাড়া তোমার ওপর আছে জননীর আশীর্বাদ। তোমার যা করণীয় তা হচ্ছে, ঘুরে দাঁড়ানো ।
সুতরাং কোনো অভিমান নয়। চুপচাপ থাকারও সুযোগ নেই। দরজার সামনে দেখো স্বজনেরা অপেক্ষমাণ। তোমাকে নৌকার বইঠা নিয়ে আগুয়ান হতে হবে। ওঠো, আর দেরি নয়। আজই, এখনই জেগে উঠতে হবে তোমাকে।
*নিমাই সরকার : প্রকৌশলী, সংবাদকর্মী, কথাসাহিত্যিক।