ফিনল্যান্ডে ছাত্ররাজনীতি
উচ্চশিক্ষার জন্য আমি ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে ফিনল্যান্ডে এসেছি। লাপেনরানতা ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজিতে (এলইউটি) মাস্টার্সে পড়ছি। ক্লাস শুরু হওয়ার কিছুদিন পর অনুষ্ঠিত হলো স্টুডেন্ট কাউন্সিলের নির্বাচন। এই নির্বাচনে আমি অংশগ্রহণ করি। নির্ধারিত দিন ফরম পূরণ করে জমা দিলাম। দুজন ফিনিশ সহপাঠী আমাকে সমর্থন করল। ব্যবসা প্রশাসন থেকে আমিসহ ১২ জন, টেকনোলজি থেকে ২৪ জন, এনার্জি থেকে ১২ জন, অন্যান্য বিভাগ থেকে চারজন। মোট প্রার্থী ৫২ জন। এর মধ্যে আমিসহ বিদেশি তিনজন। অপর দুই বিদেশির একজন ইরানি, আরেকজন রাশিয়ান।
ফরম জমা দেওয়ার পর কর্তৃপক্ষ ই-মেইলের মাধ্যমে সবাইকে নির্বাচনের নিয়মকানুন জানিয়ে দিল। আগেই বলে রাখি, ফিনল্যান্ড বিশ্বের অন্যতম দুর্নীতিমুক্ত দেশ। এখানে সবকিছু হয় স্বচ্ছভাবে। নির্ধারিত দিন নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হলো। সব শিক্ষার্থীর কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউনিক ই-মেইল আইডি আছে। নির্বাচনের আগে স্টুডেন্ট কাউন্সিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ই-মেইল সার্ভারের ওপর নজরদারি করে। যাতে করে কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের ই-মেইলের অপব্যবহার (সিসি/বিসিসি) করতে না পারে।
কয়েক দিন পর স্টুডেন্ট কাউন্সিল থেকে আমি একটা ই-মেইল পেলাম। তারা জানতে চাইল আমি কেন আমার বিশ্ববিদ্যালয় ই-মেইল নির্বাচনের প্রচারণায় ব্যবহার করলাম। আমি উত্তর দিলাম ওই ই-মেইলগুলো ছিল আমার ব্যক্তিগত। বিশ্ববিদ্যালয়ের ই-মেইল সার্ভার থেকে আমার যে ই-মেইল শনাক্ত করা হয়েছে তাতে নির্বাচনের প্রচারণা ছিল, কিন্তু কোনো সিসি/বিসিসি ছিল না। এই উত্তর দিয়ে সেই যাত্রায় মাফ পেলাম। পরে আর বিশ্ববিদ্যালয়ের ই-মেইল নির্বাচনের প্রচারণায় ব্যবহার করিনি।
প্রচারণায় আমার টার্গেট গ্রুপ ছিল বিদেশি শিক্ষার্থীরা। তাদের আমি বোঝাতে সক্ষম হয়েছিলাম, স্টুডেন্ট কাউন্সিলে বিদেশি প্রতিনিধি প্রয়োজন। নির্বাচন হয় তিন দিন ধরে। এর মধ্যে এক দিন ছিল প্রাকনির্বাচন। নির্বাচনের শেষ দিনে সন্ধ্যায় এক প্রার্থী আমাকে অভিনন্দন জানিয়ে বলল, ৫২ জন প্রার্থীর মধ্যে আমিসহ ৩১ জন নির্বাচিত হয়েছে।
এই নির্বাচনকে আমাদের দেশের ডাকসু-চাকসু নির্বাচনের সঙ্গে তুলনা করা যায়। ফিনল্যান্ডে ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর কোনো সম্পর্ক নেই। নির্বাচন নিয়ে এখানে কোনো হইহল্লা হয় না। যেটা আমাদের দেশে কল্পনা করা যায় না। মজার ব্যাপার হলো এখানে স্টুডেন্ট কাউন্সিল চাইলেই রেক্টরকে (বিশ্ববিদ্যালয় প্রধান) তার পদ থেকে সরিয়ে দিতে পারে। যদি তিনি নীতির বাইরে কোনো কাজ করেন।
স্টুডেন্ট কাউন্সিলের প্রথম সভায় আলোচনা হলো ২০২০ সালের মধ্যে কীভাবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মান আরও উন্নত এবং বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য কীভাবে আরও কাজের ব্যবস্থা করা যায়। এ ছাড়া অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয়। স্টুডেন্ট কাউন্সিল সভার মতামত নিয়ে আলোচনা করবে ফিনল্যান্ডের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট কাউন্সিলের সঙ্গে। তারপর সব বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট কাউন্সিলের মতামত সংক্ষিপ্ত আকারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হবে।
এখানে ছাত্ররাজনীতিতে যুক্ত হয়ে বুঝতে পারলাম বাংলাদেশ এবং ফিনল্যান্ডের ছাত্ররাজনীতির মধ্যে পার্থক্য কোথায়। বাংলাদেশের ছাত্রসংগঠনগুলোকে রাজনীতিমুক্তকরণ করা অত্যন্ত জরুরি।