প্রকৃতির সান্নিধ্যে ব্যতিক্রমী ইফতারে এক দিন

ক্যাম্পাস–জীবনে শিক্ষার্থীদের পরিবার–পরিজন ছেড়ে কাটাতে হয়। বলতে দ্বিধা নেই, এলাকার তথা নিজ জেলার অনুজ–অগ্রজরাই এখানে পরিবার–পরিজন। তারাই সুখে–দুঃখে একে অপরের পাশে এগিয়ে আসে।

পারস্পরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য ক্যাম্পাসের জেলা সংগঠনগুলোর ভূমিকা ব্যাপক। তারা নানা অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সুদৃঢ় সম্পর্ক গড়ে তুলতে সহায়তা করে। তারা কখনো আয়োজন করে ক্রিকেট খেলার, কখনো নবীনবরণ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান কিংবা ইফতার মাহফিলের। এবার বৈশাখের দিনে ক্যাম্পাসে নজিরবিহীন এক ইফতার মাহফিলের সাক্ষী হলাম।

দেখলাম, সবুজ মাঠের মাঝখানে সারি সারি টেবিল আর চেয়ার। চারদিকে পাখির কিচিরমিচির শব্দ। মাঠের চারপাশের গাছের পাতাগুলো চিরসবুজ হয়ে তাকিয়ে আছে। বৈশাখের গোধূলি লগ্নে বইছিল অন্তর ছুঁয়ে যাওয়া শীতল বাতাস। ক্যাম্পাস–জীবনে এমন পরিবেশে ইফতার কে না চায়, আর সেটা যদি হয় নিজ জেলার অনুজ–অগ্রজদের সঙ্গে!

এমনই এক পরিবেশে ইফতার মাহফিল হয়ে গেল গত শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে। আয়োজক ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নত কিশোরগঞ্জ জেলার শিক্ষার্থীদের সংগঠন ‘কিশোরগঞ্জ জেলা ছাত্র ঐক্য পরিষদ’। ইফতারের খেলার মাঠ যেন পরিণত হয়েছিল, কিশোরগঞ্জ জেলার বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীদের এক মিলনমেলায়।

দীর্ঘদিন পর প্রিয় বন্ধু, অনুজ কিংবা বড় ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হলে অনেকেই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। এ সময় মাঠজুড়ে সবাই মেতে ওঠেন খোশগল্পে। প্রকৃতিও তার উদার ডানা মেলে আমাদের সহযোগিতা করেছিল। ইফতার–পূর্ব মুহূর্তে একপশলা বৃষ্টি এসে আমাদের এ সুযোগ করে দেয়। মনে হলো, প্রকৃতি আমাদের সেই ইফতারে একাত্মতা জানিয়েছে।

ইফতারের সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে একে একে পরিচিত মুখগুলো মাঠে হাজির হতে লাগল। পুরো অনুষ্ঠানের চিত্র ড্রোন ক্যামেরায় ধারণ করার বিষয়টি ছিল চমকপ্রদ। ক্যামেরায় উপর থেকে সারি করে রাখা চেয়ারগুলো দূর থেকে খুব সুন্দর দেখাচ্ছিল। আবার মাঠের এক কোনায় শৈল্পিকভাবে ফুটিয়ে তোলা ‘কিশোরগঞ্জ’ লেখাটি চোখে পড়ল। সত্যিই অসাধারণ আয়োজন। আগে ক্যাম্পাসে অনেক ইফতারে অংশ নিয়েছি, কিন্তু এ রকম ইফতার আগে কখনো দেখার সুযোগ হয়নি।

যাহোক, আজানের সঙ্গে সঙ্গে খাওয়াদাওয়া শুরু হলো। সবুজের কাছাকাছি থেকে ইফতার করায় শিক্ষার্থীরা ছিলেন বেশ উচ্ছ্বাসিত। সবাই মজা করে ইফতার করছিলেন। হিমেল হাওয়া বারবার গায়ে দোলা দিচ্ছিল।

এদিকে ইফতারের পর সবাই নিজ নিজ গন্তব্যের দিকে ছুটলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই পুরো মাঠ কোলাহলপূর্ণ অবস্থা থেকে নিস্তব্ধতায় রূপ নিল। মনে মনে ভাবতে লাগলাম, আবার কবে হবে এমন ইফতার!


লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়