শৈশব-কৈশোরে আমরা গল্প-উপন্যাস, প্রবন্ধ পড়ে বড় হয়েছি। কিন্তু আমাদের সন্তানদের কী হবে? তাদের ক্লাস-পরীক্ষার এত চাপ, পাঠ্যবইয়ের বাইরে সাহিত্য পড়ার সময় কোথায়?
পাঠাভ্যাস কমে যাওয়ায় এভাবেই হতাশার কথা বললেন রুসিয়া আক্তার। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় সাত বছরের মেয়েকে নিয়ে ‘গল্পের ভিড়ে যশোরে’ শীর্ষক এক লেখক-পাঠক আড্ডায় অংশ নেন তিনি। যশোর প্রেসক্লাবের প্রাইম ব্যাংক মিলনায়তনে এ আড্ডার আয়োজন করে অনলাইন বই বিপণন প্রতিষ্ঠান বুক এক্সপ্রেস।
রুসিয়া আক্তারের মতো অনেকেই দেশে পাঠাগার, পাঠচক্র কিংবা সাহিত্য-সংস্কৃতির চর্চা কমে যাওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন অনুষ্ঠানে। তুলে ধরেন নিজেদের মতামতও। এর আগে নিজেদের বই পড়ার গুরুত্ব এবং সমসাময়িক সাহিত্যের বাস্তবতা তুলে ধরে বক্তব্য দেন লেখক আবদুল্লাহ আল ইমরান, কিঙ্কর আহসান, রাসেল রায়হান ও রাহিতুল ইসলাম।
আবদুল্লাহ আল ইমরান অনুষ্ঠানে নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, ‘আমরা স্কুলে দেয়ালপত্রিকা বের করেছি। লিটল ম্যাগাজিন করেছি কলেজে। মাসে কে কয়টা বই পড়েছি, তা নিয়ে গল্প হতো। এখন সব ক্যারিয়ারনির্ভর। মানে যা পড়লে ভালো চাকরি জুটবে, তা পড়ছি, শিখছি। এর মাধ্যমে যে প্রজন্ম তৈরি হচ্ছে, তারা অস্থিরতায় ভুগছে। বাড়ছে সহিংসতা।’
কিঙ্কর আহসান বলেন, ‘আমরা একটা মানবিক, কোমল আর সুন্দর পৃথিবী গড়তে চাই। সে পৃথিবী গড়তে আমাদের বইয়ের কাছে ফিরতে হবে। জন্মদিন, বিয়ে, এমনকি কোনো সুখবরে বই উপহারের অভ্যাস গড়তে হবে। এর প্রভাব হবে সুদূরপ্রসারী। সমাজের অনেক অসংগতিই দূর হবে।’
রাসেল রায়হান পাঠকের সরব উপস্থিতি দেখে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, ‘শিল্প–সাহিত্যের চর্চার জন্য যশোর আগে থেকেই বিখ্যাত। অগ্রজ লেখকদের স্মৃতিবিজড়িত এই শহরে এমন আয়োজন নিঃসন্দেহে বইয়ের প্রতি পাঠকের ভালোবাসা বাড়াবে।’
সবশেষে রাহিতুল ইসলাম বলেন, ‘সময় এখন তথ্যপ্রযুক্তির। ফলে সাহিত্যেও তার ছোঁয়া থাকতে হবে। কেবল বিপণন ও পদ্ধতিগত নয়, টেক্সট বা কনটেন্টেও প্রযুক্তির অগ্রগতি তুলে ধরতে হবে। না হলে বর্তমান প্রজন্মকে বইমুখী করা কঠিন হতে পারে। সাহিত্য তো জীবনেরই প্রতিচ্ছবি, সেটি যে সব সময় অতীত সময় হবে, তা নয়।’
দুই শতাধিক পাঠকের অংশগ্রহণে সাহিত্য আড্ডাটি শেষ হয় একটি কুইজ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে। তাতে বিজয়ীদের জন্য উপহার হিসেবে ছিল বুক এক্সপ্রেসের সৌজন্যে বই। বিজ্ঞপ্তি