পদ্মা সেতু: সমৃদ্ধির দখিনা দুয়ার
নিজস্ব অর্থায়নে কাল শনিবার উদ্বোধন হতে যাচ্ছে বাঙালির আত্মবিশ্বাসের সেতু ‘পদ্মা সেতু’। বাংলাদেশের কোটি কোটি বাঙালির প্রাণের উচ্ছ্বাস এই পদ্মা সেতুকে ঘিরে। এই বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসের পেছনে আছে বিপুল প্রত্যাশা এবং প্রাপ্তির মেলবন্ধন। দুদিন আগেও মাঝিরঘাটে একটি স্পিডবোটের সঙ্গে লঞ্চের সংঘর্ষে ১৩ জন যাত্রী নিয়ে স্পিডবোট ডুবে যায়! স্থানীয় ব্যক্তিদের সহায়তায় ১৩ জন যাত্রীকেই উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। নিশ্চিতভাবে এই বেঁচে যাওয়ার খবর আমাদের মনে প্রশান্তি এনে দেয়। কিন্তু সব সময় আমরা এই প্রশান্তির খবর পাই না। গত সপ্তাহে দুটি ফেরির সংঘর্ষে একজন নিহত এবং একজন নিখোঁজ রয়েছেন। ২০১৪ সালের ৪ আগস্ট আড়াই শতাধিক যাত্রী নিয়ে ডুবে যায় পিনাক-৬ নামের লঞ্চ। সরকারি হিসাবে সে সময় ৪৯ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয় এবং নিখোঁজ থাকেন ৬৪ জন। এ ছাড়া পদ্মায় প্রাণহানির খবর পাওয়া হরহামেশাই পাওয়া যায়। খরস্রোতা পদ্মার স্বজন কেড়ে নেওয়ার স্মৃতি পরিবারগুলো বয়ে বেড়ায় যুগের পর যুগ। এখন পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ সমৃদ্ধির ছোঁয়া পাবে। এ অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের ভাবনা তারা আর পদ্মার ঢেউয়ের তীব্রতায় স্বজন হারাবে না, রাত-বিরাতে অসুস্থ হলেও তারা নিজেরা এবং তাদের পরিবার দ্রুত জরুরি চিকিৎসাসেবা পাবে। পদ্মাপারে সংকটাপন্ন রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সের অপেক্ষার দৃশ্য আর দেখতে হবে না।
কৃষিক্ষেত্রেও দেখা যাবে সমৃদ্ধির ছোয়া! কৃষিনির্ভর দক্ষিণাঞ্চল থেকে সহজেই কৃষিপণ্য পৌঁছে যাবে ঢাকাসহ সারা দেশে। কৃষক পাবেন পণ্যের ন্যায্যমূল্য এবং ক্রেতা পাবেন সতেজ ও টাটকা পণ্য। পদ্মা সেতুর দক্ষিণ প্রান্তের জাজিরা উপজেলায় প্রচুর পেঁয়াজ, রসুন, ধনে ও কালিজিরার মতো শস্যের আবাদ রয়েছে। পেঁয়াজ একদিকে যেমন আমদানি করতে হয়, অন্যদিকে এটি উৎপাদন করে প্রান্তিক চাষিরা ন্যায্যমূল্য পান না। এখন এই কৃষকেরা সহজেই তাঁদের পণ্য নিয়ে নিজেরাই ঢাকামুখী হতে পারবেন। নিত্যপণ্যসহ সব কৃষিপণ্য রাতারাতি চলে আসবে ঢাকায়। কৃষির মতো একই রকম উন্নয়ন হবে মৎস্য ও পোলট্রিশিল্পে। সামুদ্রিক মাছ ও স্বাদু পানির মাছের ট্রাক আর দিনের পর দিন ফেরিঘাটে অপেক্ষা করবে না।
ইতিমধ্যে সমৃদ্ধির ছোঁয়া লেগেছে পরিবহন খাতে। তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন, বাস, ট্রাক, পিকআপসহ অন্যান্য পরিবহন। এই শিল্পের বিকাশে একদিকে যেমন জিডিপি বাড়বে, অন্যদিকে বাড়বে কর্মসংস্থান। পদ্মা সেতুর উভয় প্রান্তে গড়ে উঠছে ভারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান। ইস্পাত, সিমেন্ট, পোশাকশিল্পের জন্য সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে পদ্মা সেতু। এতে মানুষ ঢাকামুখী হওয়ার পরিবর্তে নিজ ঘরে ফিরবে এবং ঢাকা শহরের ওপর চাপ কমবে। ইতিমধ্যে পদ্মা সেতু হয়ে উঠেছে আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্র এবং পদ্মাতীরবর্তী এলাকায় উদ্যোক্তাদের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে।
পদ্মা সেতু দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার সব ক্ষেত্রে সমৃদ্ধি এনে দেবে।
মো. কামরুল হাসান সোহেল
উপজেলা নির্বাহী অফিসার,
জাজিরা, শরীয়তপুর।