পথশিশু

ফাইল ছবি

শেষ বিকেল। সূর্য চলে যাচ্ছে। নতুন বউয়ের মতো লাল শাড়ি পরে। পাখিরা দল বেঁধে নীড়ে ফিরে যাচ্ছে। ঠিক সূর্যের মাঝখান দিয়ে।

বিত্তবানদের গাড়িগুলো দাঁড়িয়ে আছে। প্রচুর যানজট। ঢাকা শহরে যানজট থাকাই স্বাভাবিক। যানজট না থাকলে অস্বাভাবিক লাগত। আজকের এ যানজট অন্য এক কারণে। একজন মন্ত্রী আসবেন এ রাস্তায়। সে জন্য ট্রাফিক পুলিশ গাড়িগুলোকে দাঁড় করিয়ে রেখেছে। দূরে একটা অ্যাম্বুলেন্স পেঁ-পুঁ শব্দ করেই যাচ্ছে। ভেতরে হয়তো লাশ আছে। তাকেও যাওয়ার জায়গা দেওয়া হচ্ছে না।

রাহাতের কান ঝালাপালা। যানজটের কারণেও বিরক্ত লাগছে। আর কতক্ষণ বসে থাকতে হবে কে জানে!

একটি ছেলে ক্রাচে ভর দিয়ে হাঁটছে। তার বাঁ পা নেই। সে প্রতিটি গাড়ির জানালায় হাত পাচ্ছে। কেউ দিচ্ছে, কেউবা ফিরিয়ে দিচ্ছে। সে দুয়েক পা সামনে এগিয়ে গেল বিএমডব্লিউ গাড়ির জানালার কাছে। বাঁ হাতের আঙুলের ফাঁকে ফাঁকে দুই টাকা ও পুরোনো পাঁচ টাকার নোট গুঁজে রেখেছে বাসের হেলপারদের মতো। ডান হাত বাড়াল। লোকটি একরাশ বিরক্তি নিয়ে তাচ্ছিল্যের দৃষ্টিতে তার দিকে তাকাল।

ফাইল ছবি

লোকটার পুরো মাথা ফাঁকা। চুলের বংশও নেই। গ্রামগঞ্জের ধানের খলার মতো লাগছে। চশমা নাকের ডগায়। পড়ে যাবে পড়ে যাবে অবস্থা। দেখতে অবশ্য শিয়াল মামার মতোই লাগছে।

ছেলেটি হাত পেতে চাইল। লোকটি শক্তমুখে টাই ঠিক করতে করতে দু–একটা কঠিন কথা বলল। চেহারায় অমাবস্যার রাতের অন্ধকারের মতো কালো করে তার মুখের ওপর গাড়ির কালো জানালাটা দ্রুত বন্ধ করে দিল।

ছেলেটির চোখ ভরে গেল জলে। আরেকটু দাঁড়ালে হয়তো চোখের পানিতে এ শহর ভেসে যাবে।

বিড়বিড় করে কী যেন বলতে বলতে ছেলেটি সরে এল।

রাহাতের খুব মায়া হচ্ছে ছেলেটির জন্য। তার কাছে মনে হচ্ছে, সে হয়তো বিড়বিড় করে বলছে, লাখ টাকার গাড়িতে চড়ে কী লাভ, যদি দুই টাকার জন্য গাড়ির জানালা বন্ধ করতে হয়।

রাহাত স্কুলব্যাগ রেখে রিকশা থেকে নামার আয়োজন করল। ঠিক তখনই ল্যাম্পপোস্টের বাতিগুলো একসঙ্গে জ্বলে ওঠল। সামনের গাড়িগুলো লম্বা হুইসেল বাজিয়ে চলতে শুরু করল। সে আর রিকশা থেকে নামতে পারল না। ছেলেটি ভাঙা ক্রাচে ভর দিয়ে রাস্তার ওপাশে চলে গেল। একটু পর সে মিশে গেল রাতের আঁধারের চাদরে..!