নোবিপ্রবিতে ইষ্টিকুটুম উৎসবে বসন্তের আনন্দময় দিন
ঋতুরাজ বসন্তের আগমনে প্রকৃতি সেজেছে নতুন রূপে। বসন্তের আগমন সংস্কৃতিপ্রেমী বাঙালির হৃদয়কে রাঙিয়ে তোলে। বাঙালির ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে বসন্ত। বাঙালির সংস্কৃতিচর্চা, সংস্কৃতিপ্রেমকে ছড়িয়ে দিতে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) আয়োজন করা হয় ‘ইষ্টিকুটুম’ উৎসবের।
অ্যাডভেঞ্চার ক্লাবের আয়োজনে ৯ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে দিনব্যাপী চলে ‘ইষ্টিকুটুম’ উৎসব। ইষ্টিকুটুমের রঙে রঙিন হয়ে ওঠে ১০১ একরের প্রাঙ্গণ। দিনব্যাপী সাইকেল র্যালি, ছবি প্রদর্শনী, ঘুড়ি উৎসব, বায়োস্কোপ, বাহারি স্টল ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে রং ছড়ায় ইষ্টিকুটুম।
উৎসব ঘিরে চলে প্রস্তুতি। উৎসবের রংকে ছড়িয়ে দিতে আঁকা হয় আলপনা। শান্তিনিকেতনে চলে ছবি প্রদর্শনী। ছবি দেখতে ভিড় জমান দর্শনার্থীরা। অ্যাডভেঞ্চার ক্লাব থেকে আয়োজিত বিভিন্ন অনুষ্ঠান, কর্মসূচি, ট্যুরের ছবি দিয়ে সাজানো হয় ছবি প্রদর্শনী। দিনব্যাপী আয়োজনের মধ্য দিয়ে বাঙালির ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতিচর্চার পাশাপাশি পরিবেশের সচেতনতা বৃদ্ধি, গ্রামীণ ঐতিহ্য, শৈশবের স্মৃতিচারণা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তাদের কার্যক্রম তুলে ধরা হয়।
আয়োজনের শুরুতে সাইকেল র্যালি বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বর থেকে শুরু হয়ে হল প্রদক্ষিণ করে গোলচত্বরে এসে শেষ হয়। সাইকেল ব্যবহারে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা ও পরিবেশের সচেতনতা বাড়াতে সাইকেল র্যালির আয়োজন করা হয়। নানান বাহারি ঘুড়ি উড়িয়ে শৈশবের স্মৃতিচারণার প্রচেষ্টায় আয়োজন করা হয় ঘুড়ি উৎসবের। গ্রামবাংলার ঐতিহ্য তুলে ধরতে আয়োজন করা হয় বায়োস্কোপ প্রদর্শনীর।
হরেকরকম স্টলে দেশীয় পণ্যের প্রদর্শন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ উদ্যোক্তারা। দুপুরের পর থেকে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। গান, নাচ, আবৃত্তি, দেশীয় সংস্কৃতি দিয়ে সাজানো হয় সাংস্কৃতিক আয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা এতে অংশ নেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক সংগঠন ধ্রুপদের পরিবেশনায় ভিন্নমাত্রা পায় এই আয়োজন।
উৎসবের আনন্দে মেতে ওঠেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষকসহ সবাই। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অতিথি নোবিপ্রবি সহ–উপাচার্য মোহাম্মদ আবদুল বাকি, কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ ফারুক উদ্দিন, প্রক্টর নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর, অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমেদসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকদের উপস্থিতি আয়োজনকে প্রাণবন্ত করে তোলে।
সন্ধ্যার পর লাল, নীল, হলুদ নানান রঙের আলোয় আলোকিত হতে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ। বাঁশির সুর, গান, নাচ, গিটারের ধ্বনিতে মুখোরিত হয়ে ওঠে চারপাশ। শিক্ষার্থীদের উপস্থাপনা, পারফরম্যান্সের সঙ্গে শামিল হন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরাও। করোনার দীর্ঘ বিরতির পর এমন আয়োজন সবার মনকে রাঙিয়ে তোলে। বসন্তের বিকেলকে রাঙিয়ে একরাশ খুশি ছড়িয়ে ইষ্টিকুটুমের সমাপ্তি ঘটে।
লেখক: ফারহানা মনসুর প্রিয়া, শিক্ষার্থী, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়