নারী কি চায়
নারী কী চায়?
সম-অধিকার, অগ্রাধিকার, ক্ষমতায়ন।
বর্তমানে প্রায় সব রাজনৈতিক, অরাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠন এই তিনটির মধ্যে একটি বা তার অধিক বিষয়ে কথা বলে থাকে। তবে চিন্তার বিষয়, তাদের মধ্যে বেশির ভাগ সংগঠনই নিশ্চিত নয় তারা কোনটি চায়? তারা কি আসলেই নারী ও পুরুষের সম-অধিকার চায়, নাকি নারীর অগ্রাধিকার চায়।
আসলে বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষ জানেই না শব্দ তিনটির অর্থ, এর ফলাফল এবং এর বাস্তবতা। এর অন্যতম এক প্রমাণ দেখেছি জাতীয় সংসদে। কোনো একদিন সংসদে বর্তমান বিরোধীদলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ বলেছিলেন, নারীর ক্ষমতায়ন কোথায়? তখন উত্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটু হেসে নিজেকে, স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী ও রওশন এরশাদকে দেখিয়েছিলেন। তখন বিরোধীদলীয় নেত্রী থতমত খেয়ে গিয়েছিলেন। তখন কিন্তু বিরোধীদলীয় নেত্রী প্রধানমন্ত্রীর কথার উত্তর দিতে পারেননি। আসলেই কি তা–ই, স্পিকার, প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী নেতা নারী মনেই কি সমাজে নারী ক্ষমতায়ন হয়েছে? বাংলাদেশে তো ১৯৯০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রতিটি সংসদ নির্বাচনে নারীরাই প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। তার মানেই কি নারী ক্ষমতায়ন হয়েছে দেশে?
না। নারী ক্ষমতায়ন বলতে বড় পদে নারীদের বসা নয়। নারী ক্ষমতায়নের অর্থ হচ্ছে নারীদের রাজনৈতিক অধিকার ও ভোটাধিকার নিশ্চিত করা। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তার বাস্তবতা কতটুকু, এর ব্যাখ্যার দরকার নেই।
এবার আসি নারী অগ্রাধিকার ও সম-অধিকার তত্ত্বে। কয়েক বছর আগেও দেখেছি, এই নারীর অগ্রাধিকারের কথা কেউ বলত না। সবার একটাই কথা ছিল—নারী-পুরুষের সম-অধিকার। তবে খুব নিকট অতীতে এ অগ্রাধিকার তত্ত্ব উঠে এসেছে এবং এটি তৃণমূলে নয়, দেশের সর্বোচ্চ স্তর থেকে এসেছে। এমনকি দেশের প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন মন্ত্রীকে এটা নিয়ে কথা বলতে শোনা যায়।
নারীর সম-অধিকার বলতে আমরা বুঝি সমাজে পুরুষদের শিক্ষা ও কর্মের যতটুকু সুযোগ দেওয়া হয়, তা নারীদেরও দেওয়া। এটা মানুষের নীতিবোধের বিষয়। একজন পুরুষ বা ছেলে যদি শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে, নারী কেন নয়? এটা হচ্ছে নারীর সম-অধিকার। অন্যদিকে, নারী অগ্রাধিকার তত্ত্বে বোঝায় যেহেতু নারীরা পুরুষদের চেয়ে দুর্বল, সেহেতু আগে তাদের পড়ার সুযোগ দাও। তারা যেহেতু নিজ যোগ্যতায় চাকরি পাবে না, সেহেতু তাদের কোটা করে দাও। এই যে এ দেশে শিক্ষাক্ষেত্রে নারীদের স্পেশাল বিভিন্ন ছাড় ও বৃত্তি দেওয়া হয়, তা নারী-পুরুষের সম-অধিকারের ভিত্তিতে হয়। অন্যদিকে, চাকরি ও শিক্ষাক্ষেত্রে নারীদের যে কোটা দেওয়া হচ্ছে, তা নারীদের দুর্বল দেখিয়ে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে দেওয়া হয়, যার মাধ্যমে নারীকে দুর্বল প্রমাণ করা হয়।
আমি মনে করি, বাংলাদেশের মেয়েরা এখন আর দুর্বল নয়। স্বাধীনতার ৫১ বছরে যখন দেশে পুরুষদের চেয়ে নারীরাই শাসন বেশি করেছে; নারীরা পড়াশোনা ও চাকরিতেও নিজ যোগ্যতায় পুরুষের সমতায় আসতে, এমনকি পুরুষের চেয়েও বেশি অগ্রগতি করতে সাক্ষম হবে। তাই নারীদের অগ্রাধিকার নয়, সম-অধিকার ও সুরক্ষাই বেশি প্রয়োজন। কেননা, এত বছর নারীর শাসনাধীন থাকার পরও আজ এ দেশের সাধারণ নারী সুরক্ষিত নয়।
লেখক: সাকিব আহম্মাদ, শিক্ষার্থী, সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজ, যশোর