ধন্যবাদ ‘৯৯৯’

৩ ডিসেম্বর, রাত। স্কুলের বন্ধুদের সঙ্গে পিকনিক সেরে বাড়িতে ফিরতে ফিরতে রাত ১২টা। একটু পরেই চোখজুড়ে ঘুম এল। রাতে তিনটার একটু পর হঠাৎ কিছু মানুষের চিৎকারে ঘুম ভেঙে গেল। ঘুম থেকে উঠে বিছানায় বসে বসে বোঝার চেষ্টা করলাম আসলে ঘটনাটি কী! এত রাতে মানুষের চিৎকার–চেঁচামেচি কেন? মানুষের চেঁচামেচির সঙ্গে পট পট শব্দে মনের ভেতর অজানা এক আতঙ্ক কাজ করা শুরু করে দিল।

কয়েক মিনিট এভাবে কেটে যায়। বাইরে আসলেই কী হচ্ছে, এটা বোঝার জন্য ঘর থেকে বের হলাম। ঘর থেকে বের হতেই আর বুঝতে বাকি রইল না আসল ঘটনা কী! বাড়ির পাশের রাস্তার ওপারে রাইস মিলে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড। দাউ দাউ করে জ্বলছে রাইস মিল। রাস্তায় যেতে যেতে হঠাৎ মনে পড়ল জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯–এর কথা। ৯৯৯ ডায়াল করতেই ফোন রিসিভ হলো। তারপর তাদের বিস্তারিত ঘটনা জানালাম। তারা আমার নাম, লোকেশন জেনে নিল। আমার সঙ্গে একটু পরে আবার যোগাযোগ করবে বলে ফোন রেখে দিল।

একটু পরেই নতুন নম্বর থেকে আবার ফোন। ঘটনার বিস্তারিত শুনে আশপাশের ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের লোকেশন সম্পর্কে দ্রুত আলাপ করল। আমাকে বলল যাতে আমি ফোন খোলা রাখি আর ঘটনাস্থলে অবস্থান করি। তারপর একটু পরপর আমার কাছে বিভিন্ন নম্বর থেকে ফোন আসতে লাগল। কখনো ফায়ার সার্ভিস থেকে, কখনো ৯৯৯ থেকে, আবার কখনো টেলিফোন নম্বর থেকে। সবাই বারবার ঘটনার আপডেট জানতে চাচ্ছিল। ফায়ার সার্ভিস বাদে অন্য নম্বরগুলো থেকে জানতে চাইছিল, ফায়ার সার্ভিস আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল কি না, আর আগুন এখনো জ্বলছে কি না।

আমরা তখন একটা রুদ্ধশ্বাস পরিস্থিতি পার করছি। চোখের সামনে আগুন দাউ দাউ করে জ্বলেপুড়ে যাচ্ছে একটা সাজানো–গোছানো রাইস মিল। কিছুক্ষণ পরে ফায়ার সার্ভিস থেকে আবার ফোন দিয়ে জানাল তারা রওনা দিয়েছে। তুলনামূলক নিকটবর্তী ও রাস্তা ভালো হওয়ায় সাতক্ষীরার আশাশুনি ফায়ার স্টেশন থেকে তারা রওনা দিয়েছে। আমাকে ফোন খোলা রাখার জন্য বারবার অনুরোধ করল, যাতে তারা আমার সঙ্গে যোগাযোগ রেখে লোকেশন চিনে দ্রুত ঘটনাস্থল গড়ইখালী ইউনিয়নের আমিরপুর গ্রামে পৌঁছাতে পারে।

ফায়ার সার্ভিস রওনা দেওয়ার পরে অনেকবার আমাকে ফোন করে ঘটনাস্থলে আসার পথ জেনে নিতে লাগল। সঠিক পথ বোঝানোর জন্য আমার সঙ্গে আমার দুই কাকা মিহির ও চিন্ময় তাদের নির্দেশনা দিতে লাগলেন। অবশেষে প্রতীক্ষার অবসান ঘটল। ফায়ার সার্ভিস রওনা দেওয়ার ৩০-৪০ মিনিটের ভেতরে ভোর ৪টা ২০ মিনিটের দিকে ঘটনাস্থলে এসে গেল। তারপর ফায়ার সার্ভিসের ফায়ার ফাইটাররা প্রাণপণ চেষ্টা করে ১ ঘণ্টার ভেতরে আগুন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসেন। যদিও ইতিমধ্যে অনেক সম্পদ নষ্ট হয়ে গেছে, কিন্তু ফায়ার সার্ভিসের দক্ষতার কারণে কিছুটা হলেও সম্পদ রক্ষা পেয়েছে।

ঘটনাস্থল খুলনা শহর থেকে ৮০ কিলোমিটারের মতো দূরে অবস্থিত। গভীর রাতে এত দুর্গম এলাকার একটা ফোনকল যে এত গুরুত্বসহকারে দেখা হবে, সত্যি প্রথম দিকে আমি এতটা ভাবেনি। ৯৯৯–এর এমন দ্রুত রেসপন্সে সত্যি আমি অভিভূত। জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯, ফায়ার সার্ভিস ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে সর্বোচ্চ গুরুত্বসহকারে সহযোগিতা করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। সেই সঙ্গে ধন্যবাদ জানাই বাংলাদেশ সরকারকে, ৯৯৯–এর মতো একটা জরুরি সেবা চালু করার জন্য। যেটার সুফল আমরা সুন্দরবন উপকূলবর্তী এলাকার মানুষও পেয়ে যাচ্ছি। সত্যি ৯৯৯ দুঃসময়ের একটা আস্থার প্রতীক। অসংখ্য ধন্যবাদ জাতীয় জরুরি সেবা ‘৯৯৯’।
*লেখক: ব্যাংকার