‘দ্য সোশ্যাল ডিলেমা’: শিক্ষাব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর ডাক
নেটফ্লিক্সে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে ‘দ্য সোশ্যাল ডিলেমা’ নামের একটি চলচ্চিত্র মুক্তি পায়। ছবিতে কারসাজিমূলক প্রযুক্তির উত্থান, প্রযুক্তির অতিরিক্ত ব্যবহার, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর নেতিবাচক দিক এবং তাদের ব্যবহারকারীদের নিজস্ব গোপন তথ্যের বেপরোয়া ব্যবহার ভবিষ্যতে আমাদের কোন দিকে নিয়ে যাবে, সে সংক্রান্ত বিষয়ে প্রশ্ন তুলে ধরা হয়েছে। প্রামাণ্যচিত্র ধরনের এ চলচ্চিত্রে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের (ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব, স্ন্যাপচ্যাট, গুগল, পিন্টারেস্ট) সাবেক কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে বিভিন্ন নেতিবাচক দিক উন্মোচন করা হয়েছে। তাঁরা সবাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর আপাত-অদৃশ্য নেতিবাচক দিক থাকার বিষয়ে একমত পোষণ করেন এবং ব্যবহারকারীদের এই ধরনের যোগাযোগমাধ্যমে আকৃষ্ট করা এবং অতিরিক্ত ব্যবহারে আসক্ত করার কৌশলগুলো সম্পর্কে বর্ণনা করেন।
‘দ্য সোশ্যাল ডিলেমা’ বিশ্বকে এমন সব তথ্য উপস্থাপন করেছে, যা সবার চোখ খুলে দেওয়ার অবকাশ রাখে এবং যা খুব কম মানুষই এখন পর্যন্ত বুঝতে পারে। কীভাবে প্রযুক্তিবিদেরা সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে তাঁদের ব্যবহারকারীদের, বিশেষত কিশোর-কিশোরীদের আচরণ এবং মানসিকতা প্রভাবিত করার জন্য ফেসবুকের ‘লাইক’ বাটন, নোটিফিকেশন সিস্টেম, ফটো ট্যাগিং, স্ন্যাপচ্যাট এবং ইনস্টাগ্রামের ফটো ফিল্টার, ইউটিউবে ভিডিও সাজেশন, গুগল ইনবক্সের আর্কিটেকচার ইত্যাদি ব্যবহার করে থাকেন, তার কৌশলগুলো বিশদভাবে ব্যাখ্যা হয়েছে ছবিতে। ‘নিউইয়র্ক টাইমস’-এর মতে, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো তাদের ব্যবহারকারীদের যে ক্ষতি সাধন করে এটি সেগুলোর একটি বৈশিষ্ট্য, কোনো খুঁত নয়’, যা জেফ অরলভস্কির ডকুমেন্টারি ‘দ্য সোশ্যাল ডিলেমা’তে দেখানো হয়েছে।
ফেসবুক কর্তৃপক্ষ ব্যবহারকারীরা প্রতিদিন কি দেখছে না দেখছে, সেগুলো অনুযায়ী ব্যবহারকারীদের নিউজফিডে বিভিন্ন বিজ্ঞাপন, ভিডিও, নোটিফিকেশন এবং বিভিন্ন অপ্রয়োজনীয় তথ্য প্রদর্শন করে থাকে। ধীরে ধীরে, তাদের এ ভবিষ্যদ্বাণী নিখুঁত হতে থাকে এবং একপর্যায়ে ব্যবহারকারী যা দেখতে চায় তাই দেখতে পায় শুধু তার একটি আঙুলের ছোঁয়ায়। এটি যেন জাদু!ইমেরিটাস অধ্যাপক শোশানা জুবফ, হার্ভার্ড বিজনেস স্কুল
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো আমাদের জীবনের একটি অংশ হয়ে উঠেছে। জীবনের প্রতি মুহূর্তের স্মৃতি ধারণ করতে, বন্ধু-বান্ধব এবং পরিবারের সঙ্গে সংযুক্ত থাকতে, প্রতিদিনের জীবনের বিভিন্ন ঘটনা সবাইকে জানাতে, বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করছি। এভাবেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম জীবনের একটি প্রয়োজনীয় অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিটিআরসির মতে, বাংলাদেশে সক্রিয় ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২০২০ সালে ১০ কোটি ছাড়িয়েছে। কয়েক বছর আগে, স্থানীয় একটি দৈনিকের প্রতিবেদনে জানা যায়, বাংলাদেশের ৮০ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ফেসবুক ব্যবহার করেন। ২০১৭ সালের অন্য একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বিশ্বব্যাপী ঢাকায় ফেসবুকের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যবহারকারী ছিল। এসব তথ্যে বোঝা যায়, আমরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কতটুকু ভেতরে ঢুকে গেছি এবং এর মধ্যে আবদ্ধ হয়ে গিয়েছি।
‘নিউইয়র্ক টাইমস’-এর মতে, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো তাদের ব্যবহারকারীদের যে ক্ষতি সাধন করে এটি সেগুলোর একটি বৈশিষ্ট্য, কোনো খুঁত নয়’, যা জেফ অরলভস্কির ডকুমেন্টারি ‘দ্য সোশ্যাল ডিলেমা’তে দেখানো হয়েছে।
ফেসবুক অ্যাড ম্যানেজারের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ফেসবুকের সক্রিয় ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৪ কোটির চেয়ে কম নয়। ফেসবুক, টিকটক, ইনস্টাগ্রামের বিস্তার ও বিস্তৃতি উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে এবং সমাজও এ ব্যাপারে শঙ্কিত। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিস্তৃতি উদ্বেগজনক না হলেও তরুণেরা কী শিখছে এবং কোন দিকে ধাবিত হচ্ছে এ বিষয়গুলো ভয় জাগায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো কি শুধু ভালো কাজের জন্য বা শুধু খারাপ কাজের জন্য ব্যবহৃত হয়? সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কি এর ব্যবহারকারীদের শিক্ষা, জীবনযাত্রা বা সামাজিক আচরণে কোনো প্রকার মূল্যবোধ যোগ করে? জাতি হিসেবে আমরা কীভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোকে গ্রহণ করছি? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানা যায়, এমন কোনো সামাজিক বা প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ আজ পর্যন্ত দেখা যায়নি।
‘দ্য সোশ্যাল ডিলেমা’ চলচ্চিত্রে দেখানো হয়েছে যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীদের কীভাবে প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য একটি পণ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এটি একজন বিখ্যাত মিডিয়া থিয়োরিস্ট এবং লেখক ‘ডগলাস রুশকফ’-এর একটি বিখ্যাত উক্তির সঙ্গে মিলে যায়, ‘যদি আপনি কোনো পণ্য বা সেবার মূল্য প্রদান না করে থাকেন; তবে আপনিই সেই পণ্য!’ সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে সাইন-আপ করার সময় আমাদের বলা হয় ‘এটি সম্পূর্ণ ফ্রি এবং সর্বদা ফ্রি-ই থাকবে’। ফেসবুক তার ব্যবহারকারীদের বলে আসছে যে ‘সাইন-আপ করুন, আপনার সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য শেয়ার করতে থাকুন এবং বিনা মূল্যে ব্যবহার করতে থাকুন।’ কিন্তু বাস্তবে বিষয়টি এত সহজ নয়, এর মধ্যে অনেক জটিলতা রয়েছে। ‘দ্য সোশ্যাল ডিলেমা’-তে দেখানো হয়েছে, কীভাবে এই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো আপনার নিজস্ব আচরণে ধীরে ধীরে, সামান্য করে, এক সময় অবর্ণনীয়/অদৃশ্য পরিবর্তন সাধন করে এবং কীভাবে আপনাকে একটি পণ্যতে রূপান্তরিত করে। যা মূলত বোঝায়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো কীভাবে আপনাকে কিছু বিজ্ঞাপনদাতা বা সুবিধাভোগী ব্যবহারকারীদের পণ্য বা সেবা কেনার বা ভোগ করার জন্য আপনার আচরণ ও পছন্দের বস্তুতে ধীরে ধীরে পরিবর্তন করে থাকে এবং তাদের পছন্দমতো ভোক্তা হিসেবে আপনাকে ধীরে ধীরে গড়ে তোলে। এই বিষয়টি খুবই বিপজ্জনক, যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর নেতিবাচক দিকগুলোর অন্যতম একটি।
চলচ্চিত্রটি আরও যুক্তি দেখিয়েছে, লাস ভেগাসের স্লট মেশিনগুলোতে যেভাবে গ্রাহকদের মনোযোগ আকর্ষণ করা হয়ে থাকে, সেখানে একটি হারজিত পরিস্থিতি তৈরি করা হয়, যাতে ভোক্তারা আরও বেশি আকৃষ্ট হয় এবং আসক্ত হয়ে পড়েন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো সেই কৌশলগুলোই ব্যবহার করে থাকে ব্যবহারকারীদের আকর্ষণ করতে এবং সেগুলোর ব্যবহার বা প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর জন্য। আইভি লিগ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কিছু মেধাবী শিক্ষার্থী এসব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কর্মী হিসেবে যোগ দেন এবং প্রতিদিনই নিজেদের অজান্তে এই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর এমন উন্নতি করে চলছেন যা বিশ্বব্যাপী সামাজিক স্থিতিশীলতা, অফিসের প্রচলিত নিয়মকানুন এবং সংস্কৃতির ক্ষতিসাধন করছে। ‘চামাথ পালিহাপিতিয়া’ যিনি ফেসবুকের প্রবৃদ্ধিসংক্রান্ত বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন, স্ট্যানফোর্ড বিজনেস স্কুলের এক ইভেন্টে সাক্ষাৎকারে ফেসবুকের মাধ্যমে সমাজকে বিচ্ছিন্ন করে তোলার বিষয়ে তার অবদানের জন্য অনুশোচনা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা যে স্বল্পমেয়াদি ডোপামিন-চালিত ফিড-ব্যাক লুপ তৈরি করেছি তা পূর্বে সমাজ যেভাবে কাজ করত তা ধ্বংস করে দিচ্ছে। সমাজে বসবাসকারীদের মাঝে কোনো আলাপ-আলোচনা ও সহযোগিতার মনোভাব না থাকা, মিথ্যাচার, ভুল তথ্য উপস্থাপন… প্রভৃতি এখন বিশ্বব্যাপী সমস্যার সৃষ্টি করছে।’ এই তথ্যগুলো ২০১৭ সালে প্রকাশিত হয়েছিল দ্য ভার্জ.কম-এ। চলচ্চিত্রে গুগলের সাবেক ডিজাইনের নীতিবিদ, ‘ত্রিস্তান হ্যারিস’ তুলে ধরেন, ইতিহাসে এর আগে ৫০ জন পণ্য/সেবা ডিজাইনার এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেননি, যার প্রভাব ২০০ কোটি লোকের ওপর পড়বে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর মালিকদের অতিরিক্ত লোভ এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এবং অ্যালগরিদম ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের নিকট বিজ্ঞাপন প্রদর্শন, নোটিফিকেশন প্রদানের মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের পছন্দের পরিবর্তন সাধন করা পুরো বিশ্বে এক ভয়ংকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। আমরা যা দেখছি এবং করছি, তা আসলে অন্য কেউ নিয়ন্ত্রণ করছে। বিষয়টি জটিল, তাই না?
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের উদ্বেগজনক বিস্তৃতি, উদ্ভূত অসুবিধা এবং সমালোচনা
অন্য কিছুর সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের উদ্বেগজনক বিস্তৃতির ফল হিসেবে আমরা যা পাচ্ছি সেগুলোর আরেকটি হচ্ছে ‘সেলফি ডিসমোরফিয়া’ নামের রোগ, যেটি ব্যবহারকারীদের সেলফি তোলার সময় নিখুঁত চেহারার জন্য অস্ত্রোপচারের দিকে ধাবিত করে! সমসাময়িক আরেকটি সামাজিক ব্যাধি হচ্ছে ‘কন্টিনিউয়াস পারশিয়াল অ্যাটেনশন’; যেটি বোঝায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের আগ্রাসনের ফলে মানুষ সবকিছুতেই আংশিক মনোযোগ দিচ্ছে, যার ফলে কর্ম ও শিক্ষা ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব পড়ছে।
দ্য সোশ্যাল ডিলেমা প্রকাশ করেছে, ২০১০ সালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের উদ্ভাবন হওয়ার পর থেকে আমেরিকান কিশোর এবং প্রাক কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে আত্মহত্যার হার এবং হতাশায় ভোগার হার ৭০% এবং ১৫১% বেড়েছে। বাংলাদেশে হতাশায় ভোগার বা আত্মহত্যার হার জানার জন্য সঠিক তথ্য নেই, তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউট পরিচালিত গবেষণায় দেখা গেছে, ৮৮ শতাংশ শিক্ষার্থী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম দ্বারা বিরূপভাবে প্রভাবিত হচ্ছে।
সাম্প্রতিক কিশোর গ্যাং-এর উত্থান অথবা লাইকি (টিকটকের মতোই অ্যাপ) ব্যবহারকারীদের বিভিন্ন গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ, দেশে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি করেছে। এই পরিস্থিতিকে ‘দ্য ডেইলি স্টার’-এর সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে ‘উপেক্ষা করা বিপজ্জনক’ বলে আখ্যায়িত করেছে। এ ছাড়া, ২০২০ সালের শুরুর দিকে বরগুনার বহুল আলোচিত ‘রিফাত হত্যা’ ঘটনাতে দেখা যায়, জড়িতরা হত্যার পরিকল্পনা এবং সম্পাদন করতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মেসেঞ্জার গ্রুপকে ব্যবহার করেছে। এটি বিশ্বব্যাপী প্রমাণিত হয়েছে যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের উদ্বেগজনক বিস্তৃতির কারণে সময় অপচয়, অহেতুক জনপ্রিয়তা পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা, অসহিষ্ণুতা, ব্যক্তি/বস্তু তুলনা-মানসিকতা, সাইবার অপরাধ, সাইবার-বুলিং প্রভৃতি উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়া ভুয়া খবর ছড়ানো, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি, সন্ত্রাসবাদ পরিকল্পনা প্রভৃতি অসুবিধা তো রয়েছেই। সম্প্রতি প্রথম আলোয় এক লেখায় শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, ছাত্রসমাজ এখন ফেসবুক নিয়ে ব্যস্ত। তিনি সেই ইঙ্গিত করে বলেন, ‘আমরা এক বিকল্প পৃথিবী তৈরি করে ফেলেছি।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের আর একটি সমালোচনার বিষয় হচ্ছে, এই মাধ্যমগুলো বিশেষত ফেসবুক তার লাখো ব্যবহারকারীর ওপর নিয়মিত ব্যাপক হারে মানসিক বা মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা পরিচালনা করে থাকে এবং এ কৌশলটি অবলম্বন করা হয় ব্যবহারকারীদের নিউজ ফিডগুলোতে বিভিন্ন বিজ্ঞাপন প্রচারণা করে তাদের নির্দিষ্ট পথে পরিচালনা করার জন্য বা তাদের আচরণে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন সাধনের জন্য। মনোবিজ্ঞানীরা এ বিষয়ে বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো তৈরি করা হয়েছে ‘পজিটিভ ইন্টারমিটেন্ট রিইনফরসমেন্ট’-এর বিষয়গুলো মাথায় রেখে। ‘পজিটিভ ইন্টারমিটেন্ট রিইনফরসমেন্ট’ বলতে বোঝায়, প্রতিবার যখন কোনো ব্যক্তি কোনো কাঙ্ক্ষিত আচরণ করে, সেই আচরণস্বরূপ তাকে পুরস্কৃত করা। একইভাবে ফেসবুক তার ব্যবহারকারীদের জন্য বিভিন্ন মডেল তৈরি করে, ব্যবহারকারীদের অসংখ্য তথ্যভান্ডার ব্যবহার করে এবং এ জন্য ফেসবুক সর্বদা ব্যবহারকারী কি করছে না করছে, তার পছন্দ-অপছন্দ সবকিছু অনুসরণ করে থাকে।
হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলের একজন ইমেরিটাস অধ্যাপক শোশানা জুবফ এ বিষয়ে বলেছেন, সঠিক ভবিষ্যদ্বাণী করতে প্রয়োজন প্রচুর পরিমাণ তথ্য। সুতরাং ফেসবুক কর্তৃপক্ষ ব্যবহারকারীরা প্রতিদিন কি দেখছে না দেখছে, সেগুলো অনুযায়ী ব্যবহারকারীদের নিউজফিডে বিভিন্ন বিজ্ঞাপন, ভিডিও, নোটিফিকেশন এবং বিভিন্ন অপ্রয়োজনীয় তথ্য প্রদর্শন করে থাকে। ধীরে ধীরে, তাদের এই ভবিষ্যদ্বাণী নিখুঁত হতে থাকে এবং একপর্যায়ে ব্যবহারকারী যা দেখতে চায় তাই দেখতে পায় শুধু তার একটি আঙুলের ছোঁয়ায়। এটি যেন জাদু! এই বিষয়ে চলচ্চিত্রটি আর্থার সি ক্লার্কের উদ্ধৃতি ব্যবহার করে বলেছে, যেকোনো পর্যাপ্ত উন্নত প্রযুক্তি জাদু থেকে আলাদা নয়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর অন্যতম মারাত্মক উদ্বেগজনক দিক হলো, রাজনীতিতে তাদের হস্তক্ষেপের প্রক্রিয়া বা ব্যবহারকারীদের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি তাদের মতো করে তৈরি করা। যোগাযোগমাধ্যমগুলোর বিতর্কিত হওয়ার অন্যতম বিষয় ছিল যুক্তরাজ্যের ব্রেক্সিট রেফারেন্ডাম, আমেরিকার ২০১৬ সালের নির্বাচনে তাদের হস্তক্ষেপ, মধ্যপ্রাচ্যের আরব-বসন্ত এবং জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর পর কৃষ্ণাঙ্গ মানুষ এবং পুলিশি সহিংসতায় তাদের ভূমিকা এবং এ-সংক্রান্ত ভুল তথ্য ছড়ানোর অভিযোগসহ আরও অনেক কিছু।
আমাদের সমাজে এর প্রভাব, কীভাবে সংশোধন করা যায় সে পরামর্শ
সম্প্রতি, বাচ্চাদের নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহারের বিষয়ে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা যেমন ইউনিসেফ, বিভিন্ন টেলিকম কোম্পানি যেমন গ্রামীণফোন, রবি; এ ছাড়া ইউনিসেফ আর ফেসবুকের যৌথ প্রযোজনায় বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
ইউনিসেফের সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রতি ৫ জন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর মধ্যে একজনের বয়স ১৮ বছরের নিচে। একই গবেষণায় দেখা গেছে, ৯০ শতাংশ গ্রাহক মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকেন। আমরা ইন্টারনেটের প্রবৃদ্ধি রোধ করতে পারি না, বরং ইন্টারনেট এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো নিরাপদ স্থান হিসেবে তৈরি করার জন্য প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়ন করতে পারি। ২০১৮ সালে ইউনিসেফ ও ফেসবুকের যৌথ উদ্যোগে বছরব্যাপী একটি প্রচার করা হয়েছিল, যেখানে বাচ্চাদের অনলাইন নিরাপত্তা এবং সে বিষয়ে আরও ভালোভাবে নীতি নির্ধারণের জন্য আহ্বান জানানো হয়। এ ছাড়া শিশুদের উপযোগী আরও উন্নত ও সময়োপযোগী টেকসই ব্যবসায়িক নীতি অবলম্বন করতে বলা হয়। এগুলো নির্ঘাত ভালো উদ্যোগ, তবে এর ব্যবহারগুলো শুধু নির্দিষ্ট বছরকে কেন্দ্র করে হয়ে থাকে। আমরা কীভাবে সারা বছর বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে পারি? কীভাবে আমরা প্রয়োজনীয় নীতিমালা তৈরি করতে পারি, যাতে নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহার তাদের একটি অভ্যাসে রূপান্তরিত হতে পারে?
এ বিষয়ে কোনো পরামর্শ প্রদানের আগে আমার মনে হয় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের বইগুলোতে এ বিষয়টি খুঁজে দেখা প্রয়োজন। আমি এই উদ্দেশ্যে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়’ (যা পূর্বে সমাজবিজ্ঞান নামে পরিচিত ছিল) বইগুলো পড়ে দেখি। পঞ্চম থেকে সপ্তম শ্রেণির বইয়ে এই সম্পর্কে কোনো আলোচনা করা হয়নি, অষ্টম শ্রেণির বইয়ের পঞ্চম অধ্যায়ে কয়েকটি লাইন খুঁজে পাই যেখানে বলা হয়েছে, ‘বিজ্ঞানের অন্য অনেক আবিষ্কারের মতো ইন্টারনেট, ফেসবুক ও টুইটারেরও কিছু মন্দ বা নেতিবাচক দিক আছে। মানুষের হাতে এগুলোর অপব্যবহার ব্যক্তি ও সমাজ দুইয়ের জন্যই মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। আজকাল প্রায়ই তরুণ সমাজের ওপর ইন্টারনেট ও ফেসবুকের নেতিবাচক প্রভাবের কথা শোনা যায়। এ বিষয়ে আমাদের অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে।’ এটুকুই কি যথেষ্ট? দুঃখের বিষয় হচ্ছে, আমি বইগুলোতে এমন কোনো অধ্যায় খুঁজে পাইনি যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে শিক্ষা দেয়।
এরপর আমি ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি’ বই পড়ে দেখি। ষষ্ঠ শ্রেণির বইতে এই বিষয়ে কোনোরকমে আলোচনা নেই। সপ্তম শ্রেণির বইতে ইন্টারনেটের সচেতন ব্যবহার ও আসক্তি নিয়ে কয়েকটি প্রস্থ থাকলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিয়ে সেভাবে কিছু বলা নেই। সেখানে এগুলো ব্যবহারে এক ধরনের আসক্তি জন্মাতে পারে এবং আসক্ত হয়ে লাগামছাড়া ভাবে ব্যবহার না করার কথা বলা হয়েছে।
অষ্টম শ্রেণির বইটির পঞ্চম অধ্যায়ে কয়েকটি লাইন পাই যেখানে দৈনন্দিন জীবনে ও শিক্ষা ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের ব্যবহার বর্ণনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘তরুণ প্রজন্ম আজকাল সামাজিক নেটওয়ার্কে (যেমন ফেসবুক) বেশি সময় ব্যয় করছে। কিন্তু ইন্টারনেটের গোলকধাঁধার বাস্তব জগতের বিনোদন, খেলাধুলা, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন প্রভৃতি থেকে তারা যেন বিচ্ছিন্ন না হয়, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। অর্থাৎ সাইবার জগতের বাইরেও যে সত্যিকারের একটি জগৎ আছে, তা যেন তরুণ প্রজন্ম উপলব্ধি করে।’ এ দুটি লাইন কি যথেষ্ট শিক্ষার্থীদের ভূমিকা, তাদের কর্তব্য এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কী করবে বা করবে না সে সম্পর্কে বোঝাতে?
দুঃখজনকভাবে এখানে তরুণ প্রজন্ম নিজেদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম যেমন ফেসবুকে জড়িত রাখার জন্য প্রতিদিন কতটা সময় নষ্ট করে সে বিষয়ে কিছুই উল্লেখ ছিল না। একমাত্র সপ্তম শ্রেণির বইয়ে ২/৩ পৃষ্ঠার কিছু নীতিকথা বলা আছে, যা পর্যাপ্ত নয়। এগুলো উদাহরণসহ আরও বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা একান্ত প্রয়োজন। আমার মতে, শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই সম্পর্কে আরও জানার কৌতূহল সৃষ্টি করতে, শিক্ষার্থীদের ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে এবং তাদের মানসিক ভারসাম্য রক্ষার ক্ষেত্রে এগুলো যথেষ্ট নয়। এগুলো বিবেচনা করে আমি কিছু প্রস্তাব করতে আগ্রহী যা তাদের এ বিষয়ে আরও সতর্ক করে তুলবে।
যেমন প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যায়ে বিদ্যালয়ের পাঠ্যবইয়ে সামাজিক ও দৈনন্দিন জীবনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রভাব-সম্পর্কিত অধ্যায় সংযোজন করা প্রয়োজন, যেখানে এর তাৎপর্য ও নিরাপদ পরিচালনার উপায়গুলো ব্যাখ্যা করা হবে। এ ছাড়াও এখানে তাদের ইন্টারনেটে যথার্থ সময় ব্যয় ও এর সঠিক ব্যবহার শেখানো হবে।
আমার প্রস্তাবগুলোর মধ্যে প্রথমটি হলো, পাঠ্যবইয়ে সংযোজিত অধ্যায়গুলোতে শেখানো যেতে পারে কীভাবে ইন্টারনেট ব্যবহারে সময়ের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়, কীভাবে কুরুচিপূর্ণ জিনিস এড়িয়ে চলা যায় এবং ব্যবহারকারীরা যদি সাইবার-বুলিং বা এ-জাতীয় কিছুর শিকার হয়, তাহলে কীভাবে তাদের মানসিক সুস্থতা অক্ষত রাখতে পারে। এ বিষয়ে শিক্ষকদের ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে এবং প্রশিক্ষণের বিষয়গুলো শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভালো সাইবার আচরণের বিকাশ এবং সেই অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য যা প্রয়োজন, সেই অনুযায়ী নির্ধারণ করা যেতে পারে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ‘ধর্ম’ বইতেও এ বিষয়ে নৈতিক আচরণের বিষয় নিয়ে অধ্যায় সংযোজন করা যেতে পারে। অভিভাবকেরাও এ ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে পারেন। অভিভাবকেরা তাঁদের সন্তানকে ইন্টারনেটে সময় অপব্যয়, এর অপব্যবহার প্রভৃতি বিষয়ে সঠিক জ্ঞান দিতে পারেন এবং তাঁদের সন্তান কোনো প্রকার নেতিবাচক কিছুর সম্মুখীন হলে বা সাইবার-বুলিংয়ের শিকার হলে তাঁদের তৎক্ষণাৎ জানাতে উৎসাহিত করতে পারেন।
দ্বিতীয়ত, সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ এবং সামাজিক সংস্থাগুলোর একসঙ্গে যুবসমাজ এবং আগত প্রজন্মকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর ব্যাধি থেকে বাঁচানোর জন্য এগিয়ে আসতে হবে। এ জন্য সংস্থাগুলোকে দেশজুড়ে সব বিদ্যালয়, ইউনিয়ন, জেলা, উপজেলা এবং বিভাগীয় পর্যায়ে বড় বড় ক্রীড়া কার্যক্রম যেমন ক্রিকেট, ফুটবল ও অন্যান্য টুর্নামেন্টের আয়োজন করতে হবে যাতে তরুণ প্রজন্ম ক্রীড়া কার্যকলাপে আরও বেশি আকৃষ্ট হয়। তরুণদের বেশি বেশি সাহিত্য ও সংস্কৃতি শিক্ষায় মনোনিবেশ করাতে হবে। এ ধরনের কার্যক্রমের আয়োজন হলে এর লক্ষ্য খুব উদ্দেশ্যপূর্ণভাবে ঠিক করতে হবে এবং তা অবশ্যই ফলপ্রসূ করার প্রয়াসে সাজাতে হবে। বইয়ের অধ্যায় বা বিষয়বস্তুগুলোর মতো ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’ প্রক্রিয়া কার্যকর হবে না।
তৃতীয়ত, বেসরকারি খাতগুলোকে তাদের বিভিন্ন আয়োজনের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে ইন্টারনেট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়া ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় আচরণগত পরিবর্তন সাধন করতে। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে ইংরেজি বানানবিষয়ক প্রতিযোগিতা ‘স্পেলিং বি’ এবং ‘ইস্পাহানি মির্জাপুর’ আয়োজিত শুদ্ধ বাংলাচর্চা বিষয়ক প্রতিযোগিতা ‘বাংলাবিদ’ এর কথা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘টেন মিনিট স্কুল’ আরও একটি প্রাণবন্ত উদাহরণ, যার দ্বারা প্রয়োজনীয় পরিবর্তন কীভাবে আনা সম্ভব তা বোঝা যায়। এই বৃহত্তর আয়োজনগুলো লাখো শিক্ষার্থী এবং যুবককে অনুপ্রাণিত করতে পারে।
চতুর্থত, ইন্টারনেটে অপ্রীতিকর বিষয়বস্তু অপসারণ এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের জন্য সামঞ্জস্যপূর্ণ বিষয়াদি নির্বাচন করা প্রয়োজন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তরুণ ও যুবকদের আচরণ নিয়ে গবেষণা এবং সেই অনুসারে দেশের নির্দিষ্ট পাঠ্যক্রম তৈরি করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি সেল বা জাতীয় কমিটি গঠন করা যেতে পারে। এটি তরুণদের আচরণ সংশোধনে সহায়ক হবে। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোকে অবশ্যই প্রয়োজনীয় জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে এবং আরও বেশি দায়িত্বশীলতার সঙ্গে তাদের অ্যালগরিদমগুলো পুনরায় ডিজাইন করতে বাধ্য করতে হবে। যেহেতু ৯০ শতাংশ ব্যবহারকারী মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো ব্রাউজ করেন, বিটিআরসি এবং টেলিকম অপারেটররা যৌথভাবে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় কৌশল অবলম্বন করে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেন। আমরা জানি যে, টেলিকম অপারেটররা যেকোনো উপায়ে ইন্টারনেটের প্রচারে ও প্রসারে আগ্রহী হবে, তবে যদি নিয়মকানুন প্রণয়নকারী সংস্থা এবং পরিষেবা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো কিছু গঠনমূলক শর্তে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সুরক্ষার জন্য একমত হতে পারে, তবে অপারেটরদের দায়বদ্ধ করা যেতে পারে।
শেষে, যুবসমাজের মানসিক সুস্থতা সুরক্ষিত ও ইতিবাচক রাখতে সহায়তা করার জন্য স্কুল, সামাজিক প্রতিষ্ঠান বা হাসপাতালে শিক্ষামূলক পাঠ্যসূচি এবং প্রয়োজনীয় কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। এটি অস্বীকার করার উপায় নেই যে, কোনো ধারণা প্রস্তাব করা সহজ তবে তা প্রয়োগ করা কঠিন। তবে আমাদের অবশ্যই কোথাও শুরু করা উচিত। তা যদি এখন না হয়, তবে কখন? এ বিষয়ে বলাবাহুল্য যে, এই পদক্ষেপগুলো কার্যকর করা অসম্ভব নয় কারণ যুক্তরাজ্যের স্কুল এবং মসজিদগুলো ‘সামাজিক সম্পর্ক ও নিরাপদ যৌন শিক্ষার’ বিকাশে অনুরূপ ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে থাকে। বিষয়টি পাঠ্যপুস্তকগুলোতে অন্তর্ভুক্ত করা বা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে নতুন করে সাজিয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ইন্টারনেট ব্যবহারের আচরণকে একটি নতুন রূপ দান করার ক্ষেত্রে মোটেও অযৌক্তিক নয়। আমাদের সরকারের উপযুক্ত বিভাগ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এবং যেকোনো সামাজিক প্রতিষ্ঠানকে অবিলম্বে উন্নয়নমূলক পরিবর্তন শুরু করার জন্য এগিয়ে আসা উচিত। এ সামাজিক উভয় সংকটকালীন এ সময়ে আমরা যেন আর দেরি না করি!
*লেখক: এস এম দিদারুল হাসান, ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার, মার্কেটিং, ইস্পাহানি টি লিমিটেড।