দীর্ঘ ছুটিতে অনলাইনে ঝুঁকেছে শিক্ষার্থীরা
বৈশ্বিক মহামারিতে থমকে গেছে মানুষের ব্যস্তময় জীবন এবং ক্ষতিগ্রস্ত সব কর্মকাণ্ড। বাংলাদেশের অবস্থানও এর বাইরে নয়। সেই সঙ্গে আটকে গেছে শিক্ষার্থীদের জীবন। ধাপে ধাপে করোনার কারণে ছুটি–লকডাউনে চলে গেল এক বছর। কয়েক মাস মোটামুটি আক্রান্তের সংখ্যা কম থাকায় সবকিছু ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু হঠাৎ আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ায় কঠোর আইনের দিকে আবার সরকার। নতুন বিধিনিষেধের ৩০ মে পর্যন্ত। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখনো বন্ধ।
২০২০ সালের ১৭ মার্চের পর থেকে বন্ধ রয়েছে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কোনো ধরনের পরীক্ষা না হওয়ায় শিক্ষাব্যবস্থা ক্ষতির মুখে, বিপাকে শিক্ষার্থীরা। বন্ধের এ সময়ে শিক্ষার্থীদের বাড়িতে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ, অন্যদিকে কোচিং বন্ধ, সব ধরনের পরীক্ষা বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ওপর প্রভাব পড়ছে। এমতাবস্থায় শিক্ষার্থীরা বাসায় একঘেয়ে জীবন কাটাচ্ছে। আর এ জন্য শিক্ষার্থীদের বন্দিজীবনে বিরক্তি চলে আশা স্বাভাবিক। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইউজিসি অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার কথা ভাবলেও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের রয়েছে ভিন্নমত।
যেখানে শিশুশিক্ষার্থীরা ভোর থেকে পড়াশোনায় ব্যস্ত হয়ে পড়ত এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিত, সেখানে এখন মিলছে ভিন্ন চিত্র। বিদ্যালয়ের কথা ভুলে গিয়ে এখন তারা ব্যস্ত হয়ে পড়ছে বিভিন্ন প্রযুক্তি, যেমন মোবাইল গেমস, ফেসবুক, টুইটার ইত্যাদি নিয়ে। নানা প্রযুক্তির কাছে জিম্মি এখন শিক্ষার্থীদের চঞ্চলতা। প্রযুক্তি যতটুকু না পড়াশোনার জন্য ব্যয় করে, তার চেয়ে অন্য কাজে বেশি ব্যয় করে তারা।
সাধারণত তরুণ ছেলেমেয়েরা পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলায় মগ্ন থাকতে ভালোবাসে, কিন্তু এ সময়ে তাঁরা প্রযুক্তি বেছে নিয়েছেন। অনেক অভিভাবকেরা অনিচ্ছা সত্ত্বেও হাতে তুলে দিচ্ছেন প্রযুক্তিকে।
একজন শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, ‘আমার দুই মেয়ে এক ছেলে। ছেলে আর মেয়ে প্রাইমারিতে পড়ে আর এক মেয়ে কলেজে পড়াশোনা করছে। করোনার এ সময়ে তারা একঘেয়ে জীবনযাপনে ক্লান্ত হয়ে পড়ছে। যেকোনো কিছু পরিমাণের চেয়ে অতিরিক্ত হলে তা বিরক্তিকর ও কষ্টকর হয়ে ওঠে। আমি একজন সন্তানের মা হিসেবেও বিরক্ত ও ধৈর্যের সীমা অতিক্রম করেছি। আমার ছেলেমেয়েদের তাই প্রযুক্তিনির্ভর করতে বাধ্য হচ্ছি। প্রযুক্তির যেমন ভালো দিক রয়েছে, ঠিক তেমনি খারাপ দিকও রয়েছে। তবে প্রযুক্তি ছাড়া ওদের সামলানো সম্ভব হচ্ছে না। তবে আমি সচেতনভাবে ওদের প্রযুক্তি ব্যবহার নিশ্চিত করতে প্রতিনিয়ত চেষ্টা করি। মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে দোয়া করি, যেন এ পৃথিবী আবার আগের মতো হয়। তবে অনলাইনে ক্লাস বা পরীক্ষা শিক্ষার্থীর জন্য পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা অর্জন করাতে ব্যর্থ হচ্ছে।’
মোদ্দা কথা হলো, সন্তানকে সঠিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে প্রতিনিয়ত চেষ্টা করতে হবে পরিবারকে। প্রযুক্তি ছাড়া এ পৃথিবী বর্তমানে অচল। সব জিনিস ভালো-মন্দ দিক নিয়েই সৃষ্ট। ভালোকে প্রতিষ্ঠা করতে একটু পরিশ্রম বেশি প্রয়োজন। খারাপ দিক আছে বলে কোনো কিছু বাদ দেওয়া খুবই ক্ষুদ্র চিন্তা।
*লেখক: মো. ফাহাদ বিন সাঈদ, শিক্ষার্থী, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়