দিলীপ কুমার কেন থাকবেন স্মরণে

দিলীপ কুমার
ছবি: রয়টার্স

হিন্দি না বুঝলেও সিনেমা মাঝেমধ্যে দেখা হয়! যদিও নিয়মিত নয়। তবে মাস দুয়েক আগে থেকে হঠাৎ শৈশব-কৈশোরের ঝোঁক কীভাবে যেন চেপে বসল। সিনেমা দেখতে শুরু করলাম। সত্যজিৎ দিয়ে শুরু মৃণাল, ঋত্বিক হয়ে উত্তম-সুচিত্রা; তারপর কোথা থেকে এক প্রতিবেদন পড়ে মধুবালা-দিলীপের পর্দার ভেতর–বাহিরের সম্পর্কের রসায়ন এবং দিলীপ কুমার অভিনীত সিনেমায় মনোনিবেশ।

পেশোয়ারি পাঠান মোহাম্মদ ইউসুফ খান সিনেমাজগতে দিলীপ কুমার নামে পরিচিত।

বলিউডে সুপারস্টার ধারণার তৈরি দিলীপ কুমারকে দিয়ে। গত শতকের চল্লিশ-পঞ্চাশের দশকে তিনি মহাতারকায় পরিণত হন। বলিউডের ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে, তাঁর পরে আর দুই-তিনজনের কপালে এই তকমা জুটেছে। অমিতাভ বচ্চন ছিলেন পরবর্তী সুপারস্টার—শুরু সত্তরের দশক থেকে। অমিতাভ–পরবর্তী স্টারডমে ব্যাটন চলে আসে শাহরুখ খানের হাতে। সেটা গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকের কথা।

এরপর ব্যাটন চলে যায় আরেক খান আমির খানের দখলে, একের পর এক ইতিহাস সৃষ্টিকারী ব্লকবাস্টার সিনেমা উপহার দিয়ে। দিলীপ কুমার এই এলিট ক্লাবের একজন সৌভাগ্যবান সদস্যই নন, সূচনাকারী। তবে তাঁর চলার পথ সুগম ছিল না, যেটা থাকে না স্টারডমের কোনো তারকার ক্ষেত্রেই। ১৯৪৪ সালে দিলীপ কুমারের প্রথম ছবি ‘জোয়ার ভাটা’ হালে পানি পায়নি। পরের বছর আরেক ছবি ‘প্রতিমা’র ভাগ্যে একই তকমা জোটে—ফ্লপ। ১৯৪৬ সালের ছবি ‘মিলন’ও শিকে ছিঁড়তে পারেনি। দিলীপ কুমার থেমে যাননি। অনুসরণ করেন হলিউডের। সেখানকার স্টাইল তাঁকে বদলে দেয়। কেতাদুরস্ত পোশাক, সপ্রতিভ লুকিং তাঁকে পাদপ্রদীপে নিয়ে আসে। ১৯৪৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘জুগনু’ তাঁর প্রথম হিট ছবি। একে একে ‘আন্দাজ’, ‘আন’, ‘মধুমতি’, ‘নয়া দৌড়’, ‘মুঘল ই আজম’, ‘ক্রান্তি’, ‘বিধাতা’র মতো ব্লকবাস্টার ছবি উপহার দিয়েছেন ৫৬ সিনেমার ক্যারিয়ারে।

ছবি: সংগৃহীত

দিলীপ কুমার-মধুবালা–পৃথ্বিরাজ কাপুর অভিনীত ‘মুঘল ই আজম’ ছিল ওই সময়ের সবচেয়ে আলোচিত ও ব্যয়বহুল সিনেমা। ১৯৬০ সালে এ সিনেমা মুক্তি পেলেও কাজ শুরু হয় আরও ৯ বছর আগে। ছবির পরিচালক কে আসিফ মাঝপথে থেমেছেন অর্থসংকটে কিন্তু শেষ পর্যন্ত উতরে গেছেন। ১ কোটি ৫০ লাখ খরচ করা সাদাকালো এ ছবি আয় করেছিল ১১ কোটি রুপি। সেটা ছিল অলটাইম সর্বোচ্চ আয়কারী সিনেমা। এখনকার হিসাবে দুই হাজার কোটি রুপির সমান! এখন পর্যন্ত হিন্দি ছবির ইতিহাসে দেশে-বিদেশে মিলিয়ে দুই হাজার কোটির বেশি আয়কারী একটা মুভি আছে আমির খানের ‘দঙ্গল’।

মুঘল–এ–আজম ছবিতে দিলীপ কুমার
সংগৃহীত

সুরেলা গান আর বিচিত্র কাণ্ডকারখানা জুড়ে থাকে হিন্দি সিনেমায়! অনেকটা অসামঞ্জস্য হলেও সিনেমা তো সিনেমাই, সেই নিয়তে হয়তো দেখা। অবশ্য দু–চারটে ভালো ছবিও যে হয় না, তা বলা যাবে না। লতা, রফি, শামসাদ বেগমের পাশাপাশি গান গেয়েছিলেন ওস্তাদ বড়ে গোলাম আলী। লতা আর রফি গানপ্রতি তখন নেন ৩০০ বা ৪০০, সেখানে ওস্তাদজি তাঁর দুই খেয়ালের জন্য নিয়েছিলেন ২৫০০০+২৫০০০=৫০০০০। ছবিতে তানসেনরূপী ওস্তাদজির ওই চর্চার মধ্যে দুরু দুরু আনারকলি দেখা করতে আসে সেলিমের সঙ্গে। কাটায় নিভৃতে সে রাত...
১৯২২ সালের ১১ ডিসেম্বর পেশওয়ারে জন্ম নেওয়া দিলীপ কুমারের রঙিন জীবনের অবসান ঘটল ৭ জুলাই ২০২১–এ। পেছনে রেখে গেলেন অম্লান হয়ে থাকা বলিউডে তাঁর ক্যারিয়ার।

*লেখক: জিল্লুর রহমান, সহযোগী অধ্যাপক, ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট, ইউডা