তারুণ্যের বৃষ্টিস্নান
ঝুম বৃষ্টিতে ভিজছেন এক তরুণী। গাছতলায় দাঁড়িয়ে হাত–পা ছোড়াছুড়ি করছেন। বৃষ্টির ফোঁটাগুলোও যেন আমন্ত্রণ জানাচ্ছে তরুণীকে। বড়সড় একটি কচু পাতা হাতে ধরে রেখেছেন। দূরে কিছু ছেলেও বৃষ্টির সঙ্গে মেতে ওঠেন। এ যেন তারুণ্যের বৃষ্টিস্নান।
সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের গত বুধবারের ঘটনা এটি। সেদিন সকাল থেকেই বৃষ্টি পড়ছে। চারদিক বৃষ্টির পানিতে সবুজ রঙে রঙিন হয়ে গেছে। হঠাৎ বৃষ্টি যেন ক্যাম্পাসে এনেছে নতুন বার্তা। লাল ইটের রাজপথ হয়েছে অলংকৃত। নীল আকাশে দেখা যায় কালো মেঘের হাতছানি।
বন্ধ ক্যাম্পাসেও প্রকৃত ক্যাম্পাসপ্রেমীরা ঠিকই আসছেন। বৃষ্টিতে ছোটাছুটি করছেন, আড্ডা দিচ্ছেন। বৃষ্টির মধ্যেই গবিতে চলছে ফুটবল খেলা। বৃষ্টিতে তাঁদের গতি একটুও কমেনি, বরং ঢের বেড়েছে। কেউ ফুটবলে কিক করছেন সজোর। কেউ বল নিয়ে দৌড়াচ্ছেন মাঠের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। কখনো গা এলিয়ে দিচ্ছেন সবুজ ঘাসে কিংবা জমে যাওয়া পানিতে। আশপাশের ভবন থেকে এ খেলা দেখেন অনেকেই। ক্যাম্পাসের বৃষ্টি মানেই মধুর কলতান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের করিডরে দাঁড়িয়ে আছেন দুই শিক্ষক। খানেক পর বৃষ্টির দিকে হাত বাড়িয়ে দেন। কালো ফাইল মাথায় দিয়ে ছুটছেন আরেক শিক্ষক। বৃষ্টির মধ্যেও এক ভবন থেকে অন্য ভবনে যাচ্ছেন কয়েকজন। অনেকেই আবার আড্ডায় মেতে উঠেছেন। বৃষ্টির দুপুরে অলসতার মধ্যেও থেমে নেই কাজের ব্যস্ততা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বাদামতলায় বৃষ্টির ফোঁটাগুলো যেন বর্ষার দাম্ভিকতার জানান দেয়৷ মধ্যদুপুরে বাদামগাছগুলো ধরে রেখেছে অন্ধকার। পাতা থেকে টুপটুপ করে পানি ঝরছে। ট্রান্সপোর্ট চত্বরে রাখা গাড়িগুলো বৃষ্টিতে ধুয়ে রগরগে অবস্থা। এই চত্বরের মিঠাপলি ও ভেলপুরির দোকানগুলো সেদিন বন্ধ ছিল। বর্ষাকালে সবার হাতে দেখা যায় ছাতা৷ তবে ক্যাম্পাসের দৃশ্যপট একেবারেই ভিন্ন। তিন–চারজন মিলে টানাটানি করছেন একটা ছাতা। ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস অনুষদের শিক্ষার্থী তানভীর আহমেদ বলেন, ক্যাম্পাসের বৃষ্টি মানে, যাকে অনুভব করা যায়৷ বন্ধুদের সঙ্গে বৃষ্টিতে ভেজা, ক্যানটিনের গরম চা খেতে খেতে আড্ডা, হঠাৎ অন্ধকার হয়ে এলে ক্লাস শেষ করার আনন্দ অন্য রকম৷ ক্লাসে দেরিতে গেলেও শিক্ষকেরা কিছু বলতেন না। কারণ একটাই, বৃষ্টি। তিনি আরও বলেন, সেসব বৃষ্টিদিনের কথা মনে পড়ে। ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় নবীনেরা এসব আনন্দ করতে পারছেন না।
সেদিন ইংরেজি বিভাগের তিন নবীন শিক্ষার্থী ভিজছিলেন বৃষ্টিতে। তাঁরা বলেন, বৃষ্টিতে ভিজতে অনেক ভালো লাগে। আর তা যদি হয় নিজ ক্যাম্পাসে, তাহলে এই আনন্দ বেড়ে যায় কয়েক গুণ। একাডেমিক ভবন থেকে বেড়িয়ে দেখি গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়ছে৷ এ দেখেই নেমে পড়ি বৃষ্টিতে। চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যবিজ্ঞান অনুষদের কয়েক ছাত্র এসেছেন ফুটবল খেলতে। এই অনুষদের শিক্ষার্থী অনিক আহমেদ বলেন, অনেক দিন পর বৃষ্টি হচ্ছে। ক্যাম্পাস বন্ধে হাঁপিয়ে উঠেছি৷ হঠাৎ আজ বৃষ্টিতে ভিজতে ইচ্ছে করছে। তাই ক্যাম্পাসে ফুটবল খেলতে চলে এলাম।