ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে দুর্নীতি: চাকরি হারিয়েও ৯০ দিনের বেতন
আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির দায়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী আ হ ম আবদুল্লা হারুনকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়েছে। সংস্থার সচিব আকরামুজ্জামান স্বাক্ষরিত দপ্তর আদেশে এই প্রকৌশলীকে গত সোমবার চাকরিচ্যুত করা হয়। দক্ষিণ সিটির জনসংযোগ শাখা থেকে জানানো হয়, প্রায় ১২ কোটি টাকা আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির দায়ে এই প্রকৌশলীকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে, তবে এরপরও ৯০ দিনের বেতন পাবেন তিনি।
এখন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ভাবতে হবে, দুর্নীতি দমনে বিশ্বে আমরা নতুন নজির স্থাপন করতে চলেছি কি না? শুধু চাকরি থেকে অপসারণ! দুর্নীতির কি বিচার হবে না? শুধু চাকরি থেকে অপসারণ যথেষ্ট শাস্তি নয়। বরং যথাযথভাবে শাস্তির আওতায় না আনলে অন্যরা উৎসাহিত হবেন।
এখন প্রশ্ন, ১২ কোটি টাকার দুর্নীতি কি প্রকৌশলী আ হ ম আবদুল্লা হারুন একা করেছেন? তাঁর সঙ্গে আর কারা কারা জড়িত? সে তথ্য চাপা পড়ে যাবে না তো, এই চাকরিচ্যুতির কারণে? প্রশ্ন হলো, এ কাজে কি শুধু একজন মানুষই জড়িত? টেন্ডার কমিটি, সার্ভে কমিটি, মূল্যায়ন কমিটি—তারা কোথায়? শুধু আবদুল্লা হারুনের কেন শাস্তি হবে? চেইনের সবারই শাস্তি হতে হবে। অন্যদের কেন শাস্তি হবে না? দক্ষিণ সিটির দুর্নীতিতে কি মাত্র একজনই জড়িত? দেশটা এত ভালো হয়ে গেল, ভাবতেই ভালো লাগছে! মনে রাখতে হবে, ভুলনীতি আর দুর্নীতি—হচ্ছে বাংলাদেশের অগ্রগতির একমাত্র অন্তরায়।
প্রথম আলোতে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, দক্ষিণ সিটির সচিব দপ্তর সূত্র বলেছে, আবদুল্লা হারুন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী ও একই বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর কাজ চালিয়ে নেওয়ার সময় অনুমোদিত নকশা অনুযায়ী কাজ শেষ না করে ঠিকাদারকে অতিরিক্ত বিল দিয়েছেন। এতে করপোরেশনের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া পদ্মা সেতু রেললাইন প্রকল্পে ডিপোজিট ওয়ার্কের আওতায় কমলাপুর টিটিপাড়া থেকে কদমতলী পর্যন্ত ছয় কিলোমিটার রেললাইনের দুই পাশে জমানো বর্জ্য, মাটি ও রাবিশ অপসারণ এবং ডাম্পিং করার কাজেও ২৮ কোটি টাকার দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। এ কাজেও তিনি অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছেন। যেমন দরপত্রে রেললাইনের দুই পাশে মোট বর্জ্য, মাটি ও রাবিশ ধরা হয়েছিল ১ লাখ ২০ হাজার টন, যার মধ্যে বর্জ্যের পরিমাণ হবে ৫ হাজার টন। বাকি ১ লাখ ১৫ হাজার টন মাটি ও রাবিশ, যা বিক্রয়যোগ্য। অথচ মাটি ও রাবিশ সরানো বাবদ ওই দরপত্রে ব্যয় ধরা হয়েছে ১১ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। প্রকৃতপক্ষে মাটি ও রাবিশ বিক্রয়যোগ্য হওয়ায় এ ক্ষেত্রে সরকারের কোনো অর্থ ব্যয় হওয়ার কথা নয়।
শুধু সিটি করপোরেশনই নয়, এই রকম প্রতিটা মন্ত্রণালয় বা অধিদপ্তর, পরিদপ্তর এবং সর্বোপরি সরকারের ছোট–বড় প্রতিটি খাতে ঘাপটি মেরে বসে আছেন অনেকেই। গোপনে খোঁজখবর নিলে সত্যতা বেরিয়ে আসবে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটির দপ্তর আদেশে বলা হয়, ওই কর্মকর্তার নানা কর্মকাণ্ডে প্রতীয়মান হয় যে তিনি বিভিন্ন সময়ে অনিয়ম, দুর্নীতি এবং করপোরেশন ও জনস্বার্থবিরোধী কাজে জড়িত ছিলেন। এতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আর্থিক ক্ষতি ও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। এ জন্য তাঁকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কর্মচারী চাকরি বিধিমালা ২০১৯–এর ৬৪(২) বিধি অনুসারে জনস্বার্থ ও করপোরেশনের স্বার্থ রক্ষায় চাকরি থেকে অপসারণ করা হলো। তিনি কেবল বিধি মোতাবেক ৯০ দিনের বেতন পাবেন।
আমরা মেনে নিলাম, আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির দায়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী আ হ ম আবদুল্লা হারুনকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হলো, কিন্তু এক ব্যক্তিকে একাধিক পদের দায়িত্ব দিয়ে মানসম্পন্ন কাজ আশা করা যায় না। তিনি একই সঙ্গে নির্বাহী এবং সহকারী প্রকৌশলীর দায়িত্ব পালন করেছেন। এতে যথাযথ মনিটরিং হয়নি। মনিটরিং কাজে লোকবল নিয়োগের ব্যর্থতা সিটি করপোরেশন এড়াতে পারে না।